parbattanews

জুমের আগুনে বদলে যাচ্ছে পাহাড়ের জলবায়ু: বিপন্ন জীব ও জনজীবন

Untitled-1

সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, পার্বত্যনিউজ :

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় গত কয়েকদিনের তীব্র তাপদাহে জেলায় জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। দিনের শুরু থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রচন্ড গরমে দিশাহারা হয়ে পড়েছে বিভিন্ন বয়সী মানুষ। খরতাপ ও জুমের আগুনের তাপ একসাথে মিলে এখানকার জলবায়ুতে বইছে মরু হাওয়া। ফলে জীববৈচিত্রের সাথে পাহাড়ের জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। উঁচু পাহাড়ে মাইলের পর মাইল ধরে জ্বলা জুমের আগুনে ভুপৃষ্টের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে ভুভাগের নিকটবর্তী সঞ্চরনশীল হালকা মেঘমালা ঘনীভুত ও জমাট বাধতে পারছেনা পাহাড়ের আকাশে এই জুমের আগুনের তাপে। ফলে বৃষ্টির দেখা নেই কোথাও। বৃষ্টি না থাকায় পাহাড়ী নদী ও ছড়াগুলো পানির শুকিয়ে মৃতপ্রায়। ফলে পাহাড়ে খাবার, নিত্যব্যবহার ও চাষাবাদের পানির একমাত্র উৎস এই পাহাড়ী নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় পাহাড়ের মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মরে যাচ্ছে বৃক্ষ, প্রাণীকুল। 

গরমের তাপ থেকে রেহাই পেতে খোলা আকাশের নীচে, ঘরের বারান্দায় ও গাছ তলায় হালকা ঠান্ডা হাওয়ার পরশ নিতে এসেও তাপদাহ থেকে রেহাই মিলছে না। এই তীব্র তাপদাহের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। প্রচন্ড তাপদাহে অতিষ্ট হয়ে বিভিন্ন প্রজাতির গৃহপালিত পশুদেরও ভিন্ন জায়গায় হাটু পানিতে গা ভিজিয়ে নিতে দেখা গেছে। মানবকুলের পাশাপাশি পশু-পাখিদের জনজীবনেও নেমে এসছে চরম অস্থিরতা । বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র/ছাত্রীদের নিয়ে শিক্ষকরাও আছে মহাবিপাকে। প্রায় শ্রেণী কার্যক্রম চলাকালীন সময়েই অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। আর এর চরম দু:শ্চিন্তা আর অস্থিরতার মধ্যে পড়তে হয় শিক্ষকদেরই। অসহনীয় গরম আর প্রচন্ড তাপমাত্রার কারনে দিনের বেলায় প্রয়োজন ছাড়া ঘর হতে বের হতে চাইছেন না অনেকেই। প্রখর রোদে তাই দিন-দুপুরে রাস্তা-ঘাট প্রায়ই থাকে জনশুন্য।

তাছাড়া বিদ্যুতের অব্যাহত লোড-শেডিংয়ের কারনে আরো বড় বিপাকে আছেন সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সর্বসাধারণ । একদিকে প্রচন্ড তাপদাহ অপরদিকে বিদ্যুতের লোড-শেডিংয়ের ফলে সৃষ্ট দ্বিমুখী সমস্যায় সুযোগ নিচ্ছে বিভিন্ন রোগব্যাধি । প্রতিনিয়ত হাসপাতাল মুখী হচ্ছে নবজাতক থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী মানুষ। ডায়েরিয়া, পেটব্যথা, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টের মতো জটিল রোগীর সংখ্যা জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।

খাগড়াছড়ি’র সিভিল সার্জন ডা: নারায়ন চন্দ্র দাশ জানান, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়েরিয়া রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে । বর্তমানেও আধুনিক সদর হাসপাতালে ১০/১২জনকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে । এই প্রচন্ড গরমে হিট ষ্ট্রোক ও নিউমোনিয়া রোগের প্রবনতা বেশী দেখা দেয় । আবহাওয়া অভিজ্ঞ মহলের ধারনা মতে, ঝুমে আগুন ও আবাধে বনজ সম্পদ উজাড় করার কারনেই আজ প্রকৃতির উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সবাইকে সচেতন হয়ে ধ্বংষ হতে যাওয়া বনাঞ্চল রক্ষা করতে পারলেই হয়তো আগামী প্রজম্ম অনুকুল আবহাওয়ায় বাস করতে পারবে ।

Exit mobile version