parbattanews

জেএসএস-ইউপিডিএফ সন্ত্রাসের বলি: ভারতে আশ্রয় নিয়েছে ৩০ উপজাতীয় পরিবার

Indian-Paper-300x166

মো. আল আমিন:

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বাবুছড়া ইউনিয়নের ভারত সীমান্তবর্তী দূর্গম নাড়াইছড়ি এলাকা থেকে উপজাতীয় কয়েক পরিবার সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে গেছে বলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)র নিকট দাবী করেছে বিএসএফ। এ ঘটনায় দুই পাহাড়ী সংগঠন জেএসএস-ইউপিডিএফ পরস্পর পরস্পকে দায়ী করেছে।

 

এদিকে বিষয়টি নিয়ে বুধবার বিকালে নাড়াইছড়ি সীমান্তে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক হয়েছে। তবে বৈঠকে বিএসএফ ভারতে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোর তালিকা দিতে পারেনি বলে দাবী করে বিজিবি সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার পূনরায় বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের আধিপত্যের লড়াইয়ের বলি হচ্ছে স্থানীয় সাধারণ মানুষ। দূর্গম এবং ভারত সীমান্তবর্তি হওয়ার কারণে নাড়াইছড়ি এলাকা নিয়ন্ত্রনে নিতে পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রায়ই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ ৩ মে নাড়াইছড়ি বাজারটি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং পরে কিছু বাড়িও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। অগ্নিসংযোগের ঘটনার জন্য জেএসএস (সন্তু) এবং ইউপিডিএফ পরষ্পরকে দায়ী করে। দুই পক্ষই নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার বাসিন্দাদের চাল-চলনসহ সকল কর্মকান্ড বন্ধ করে দেয়। ফলে খাদ্য সংকট দেখা দেয় এলাকাবাসীর মধ্যে। ফলে বাধ্য হয়ে প্রাণ বাঁচাতে তারা ভারতে পালিয়ে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয় সূত্র দাবী করেছে উপজাতীয় জঙ্গী সংগঠনগুলোর সৃষ্ট অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে জীবন বাঁচাতেই তারা সীমান্ত অতিক্রম করেছে। সংশ্লিষ্ট বাবুছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সুগতপ্রিয় চাকমা জানান, নাড়াইছড়িতে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে স্থানীয় মেম্বারের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না; আর বিষয়টি তিনি নিশ্চিত হতে পারেন নি।

অপরদিকে বিজিবি সূত্র পতাকা বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, প্রায় ৩০ পরিবার সীমান্ত অতিক্রম করেছে বলে দাবী করলেও তাদের তালিকা দিতে পারেনি বিএসএফ। শুক্রবারের বৈঠকে তালিকা দিতে বলা হয়েছে এবং সরেজমিনে খোঁজ করে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা চলছে।

দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলুল জাহিদ পাভেল পার্বত্যনিউজকে বিজিবি’র বরাত দিয়ে জানিয়েছেন শুক্রবার বিজিবি ও বিএসএফে’র পতাকা বৈঠকের কথা এবং তা সমাধানের জন্য স্থানীয় প্রশাসন থেকে সকল ধরনের চেষ্টা চালিয়ে হচ্ছে।

এদিকে ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক প্রদীপন খীসা আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, জনসংহতি সমিতির সন্তু লারমা গ্রুপ দীঘিনালার নাড়েইছড়ি থেকে নিরীহ গ্রামবাসীদেরকে অস্ত্রের মুখে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে নিয়ে গিয়ে সেখানে তাদেরকে দিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অবনতি ঘটানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

তিনি সন্তু গ্রুপের এই অপকর্মের নিন্দা জানিয়ে বলেন, সন্তু গ্রুপের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ২১এপ্রিল ও ২৬ মে দুই দফায় নাড়েইছড়ির দেওয়ান পাড়া, থুলিছড়া, দজর-হোগেয়্যাতলি ও চোদ্দেংছড়া গ্রামের লোকজনকে জোর করে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে নিয়ে যায়।

বিবৃতিতে আরও বলাহয়, নাড়েইছড়ি বাজার চৌধুরী মাচ্য চাকমাকে ২৪এপ্রিল সন্তু গ্রুপের এক কমান্ডারের লেখা চিঠির উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরো বলেন, “সন্তু গ্রুপ নাড়েইছড়ি এলাকার সাধারণ জনগণকে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার ও দোকানপাট বন্ধ রাখার লিখিত নির্দেশ দেয় এবং নির্দেশ অমান্য করলে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে বলে হুমকী দেয়। এলাকার জনগণ তাদের সেই নির্দেশ অগ্রাহ্য করলে তারা ৩ মে নাড়েইছড়ি বাজার সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয়। এর ফলে সেখানে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিলে এক মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়, যা দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।”

প্রদীপন খীসা বলেন, সন্তু গ্রুপ পাহাড়ি গ্রামবাসীদেরকে ত্রিপুরায় নিয়ে গিয়ে তাদেরকে দিয়ে এই বলে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে যে, ইউপিডিএফ ও বিজিবির গুলি বর্ষণের কারণে তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।

তিনি নাড়েইছড়ি এলাকার জনগণের এই দুর্দশার জন্য সন্তু গ্রুপের সশস্ত্র জঙ্গীদের পোড়াবাড়ী নীতিকে দায়ী করে বলেন, ‘আন্দোলনের নামে তারা কেবল জনগণের হাড়ি পাতিল ভেঙে দিতে ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে ওস্তাদ। তারা জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম না করে বিনা কারণে নিজের ভাইকে গুলি করে হত্যা করছে। ইউপিডিএফ নেতা সন্তু লারমাকে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের ভুল পথ পরিহার করে কৃত অপরাধের জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনে শরীক হওয়ার আহ্বান জানান।

এদিকে জেএসএস (সন্তু) গ্রুপের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা পার্বত্যনিউজকে বলেন, খোঁজ নিয়ে জেনিছি ৩২ থেকে ৫০ পরিবার সীমান্ত অতিক্রম করেছে। গত ৩ মে নাইড়াছড়ি বাজার পুডে দেয় ইউপিডিএফ এই কারনেই তারা এলাকা ত্যাগ করেছে। ইউপিডিএফ নিজেদের দোষ চাপানোর জন্যই গণমাধ্যমে অন্য দলের নামে মিথ্যা-বানোয়াট বিবৃতি দেয়।
 
ত্রিপুরার পত্রিকায় সংবাদ
আগরতলা থেকে প্রকাশিত বিজনেস ষ্ট্যান্ডার্ড নামের ইংরেজী পত্রিকা বুধবার এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রচার করে। পত্রিকাটি দাবী করেছে, পার্বত্য খাগড়ছড়ি জেলার বৌদ্ধ এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বি চাকমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের উপজাতীয় ২৫০ জন নারী, পুরুষ ও শিশু সোমবার ভারতে পারি জমিয়েছে। সোমবার পরিবারগুলো সীমান্ত অতিক্রম করে গান্দাছড়া এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। বিষয়টি সেখানকার স্থানীয় কতৃপক্ষ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে।

অপরদিকে, বাংলায় প্রকাশিত (ভারতীয়) দৈনিক সংবাদে, পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতি দাঙ্গা: শরণাথী  স্রোত গগুছড়ায়! এমন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে। তবে একই সাথে পত্রিকাটির মূল ইস্যু আড়াল করে পুরো সমস্যাটি জাতিগত দাঙ্গা হিসেবে মন্তব্য করেছে।

Exit mobile version