জেএসএস ও ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধ করে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের প্রজ্ঞাপন একযুগেও কার্যকর হয়নি

fec-image

পাহাড়ে সহিংসতা রোধে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম সংহতি সমিতি (জেএসএস) ও প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এবং তাদের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করে। তৎকালীন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের জারি করা প্রজ্ঞাপন এক যুগেও কার্যকর হয়নি। ফলে পাহাড়ে থামছে না চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও সহিংসতা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়িতে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ডাকা সড়ক অবরোধকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়িতে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটে। জালিয়ে দেওয়া হয় আড়াই শতাধিক বাড়ি ঘর। নিহত হন খাগড়াছড়ি পৌরসভার এক কর্মচারী আনোয়ার হোসেন, সাংবাদিকসহ আহত হন বহু মানুষ। মানুষের নিরাপত্তায় শহরে রাতে কারফিউ ও দিনে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। এ অবস্থা চলে প্রায় সপ্তাহ ধরে।

পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ২০১০ সালের ৭ মার্চ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মাসিক জেলা আইন-শৃঙ্খলা সভা বসে। সভা বেলা ১১টায় শুরু হয়ে বিকাল ২টায় শেষ হয়।

তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জেলায় নিবন্ধনের বাইরে যে সব রাজনৈতিক দল রয়েছে তারা কোন ধরনের সভা, সমাবেশ কিংবা কর্মসূচি পালন করতে পারবে না এবং নিবন্ধনভূক্ত সংগঠনগুলোও কোন প্রকার কর্মসূচি পালন করতে হলে অন্তত ৭ দিন আগে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে এমন সিদ্ধান্ত হয়।

সেই সাথে সভায় বক্তারা সমাজ বিরোধীদের কঠোর হস্তে দমন ও পাহাড়ি-বাঙ্গালী সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রাখার পক্ষে মত দেন।

সূত্র জানায়, ওই সভার সিদ্ধান্তে আলোকে পরে দিন খাগড়াছড়ির তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ অনিবন্ধত সংগঠন কর্মসূচি পালনের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম সংহতি সমিতি (জেএসএস) ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টসহ (ইউপিডিএফ) অন্তত ১১টি আঞ্চলিক সংগঠন নিষিদ্ধ হয়ে যায়।

নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো হচ্ছে, সন্তু লারমার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও তাদের সহযোগী সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল ইউমেন্স ফেডারেশন, মহিলা সমিতি, প্রসীত খীসারর ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও তাদের সহযোগী সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম,পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন।

সে সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তৎকালীন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেছিলেন, কোন সংগঠনকে উদ্দেশ্য করে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। তাছাড়া নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী নিবন্ধন বিহীন রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি পালন আইন সিদ্ধ নয়।

অথচ খাগড়াছড়ির তৎকালীন জেলা প্রশাসকের জারি করা প্রজ্ঞাপন এক যুগেও কার্যকর হয়নি। ফলে পাহাড়ে এখনো অনিবন্ধিত সংগঠনগুলো রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে বাড়ছে হানাহানি, সংঘাত ও আধিপত্য বিস্তারের লড়াইসহ সহিংসতা।

পাহাড়ের সচেতন মহল অবিলম্বে তৎকালীন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের জারি করা প্রজ্ঞাপন কার্যকর করে পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রাখা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন