জেল হত্যা মামলার রায়ের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি, আসামীদের মৃত্যুদন্ড বহাল

National-4-liders-bg

ডেস্ক নিউজ

কারাগারে জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায় চূড়ান্ত রায়ে পলাতক দুই আসামি এল ডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধা ও দফাদার মারফত আলী শাহকে নিম্ন আদালতের দেয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে হাই কোর্টের দেয়া রায় খারিজ করা হয়েছে। ফলে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই রায়ের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলো।

আজ মঙ্গলবার সকালে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।

এর আগে রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে গত ১৭ এপ্রিল রায় ঘোষণার এই দিন ধার্য রেখেছিল আদালত। গত ১৫, ২২ ও ২৩  জানুয়ারি আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দি উপস্থাপন করা হয় এবং ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় উপস্থাপন শুরু করা হয়। এরপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন প্রধান কৌঁসুলি আনিসুল হক রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, এমকে রহমান, মমতাজ উদ্দিন ফকির ও মুরাদ রেজা। অপর দিকে আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

গত বছরের ১২ ডিসেম্বর এ মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের ওপর শুনানির জন্য ১৫ জানুয়ারি তারিখ ধার্য করা হয়। একই সঙ্গে পলাতক দুই আসামির প্রতি নোটিশ জারি থেকে অব্যাহতি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত।

হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আপিলের আবেদন (লিভ টু আপিল) করে সরকার।

গত বছরের ৩১ অক্টোবর ২৫ পৃষ্ঠার সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে জমা দেন আইনজীবী আনিসুল হক।

এরপর ১ নভেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেলের পক্ষে এডভোকেট অন রেকর্ড সুফিয়া খাতুন সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ সারসংক্ষেপ জমা দেন।
 
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জেল হত্যা মামলার কার্যক্রম শুরু করে। এরপর বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে অর্থাৎ ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত মামলাটির রায় ঘোষণা করেন। আদালত তার রায়ে ২০ আসামির মধ্যে ১৫ সাবেক সেনা কর্মকর্তার শাস্তি এবং অপর পাঁচ জনকে খালাস দেয়। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে পলাতক তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং অপর ১২ জনের যাবজ্জীবন দেয়া হয়।

আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ওরফে হিরন খান, দফাদার মারফত আলী শাহ এবং এলডি দফাদার মো. আবুল হাসেম মৃধা।

অন্যদিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন কর্নেল অব. সৈয়দ ফারুক রহমান, কর্নেল অব. সৈয়দ শাহরিয়ার রশীদ, মেজর অব. বজলুল হুদা, লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশীদ, লে. কর্নেল অব. শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল অব. এমএইচএমবি নূর চৌধুরী, লে. কর্নেল অব. একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ, লে. কর্নেল অব. এএম রাশেদ চৌধুরী, মেজর (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) আহাম্মদ শরিফুল হোসেন, ক্যাপ্টেন অব. আবদুল মাজেদ, ক্যাপ্টেন (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) মো. কিসমত হোসেন এবং ক্যাপ্টেন অব. নাজমুল হোসেন আনসার।

বিএনপি নেতা মরহুম কেএম ওবায়দুর রহমান, জাতীয় পার্টি নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক মন্ত্রী মরহুম তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, নূরুল ইসলাম মঞ্জুর এবং মেজর অব. খায়রুজ্জামানকে বেকুসুর খালাস দেয়া হয়।

তবে ২০১১ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্ট রিসালদার মোসলেমউদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি দফাদার মো. আবুল হাসেম মৃধা এবং যাজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত অপর চারজন লে. কর্নেল, সৈয়দ ফারুক রহমান, কর্নেল অব. সৈয়দ শাহরিয়ার রশীদ, মেজর অব. বজলুল হুদা ও লে. কর্নেল অব. একেএম মহিউদ্দিন আহমেদকে মামলা থেকে খালাস দেয় আদালত। যদিও জেল হত্যা মামলায় হাইকোর্টে অব্যাহতি পাওয়া চারজন সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদের ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় করাগারে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, মন্ত্রীসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন