জোত পারমিটের আড়ালে বাইশারী ও দোছড়িতে বেপরোয়া কাঠ পাচার

10913475_808416822562170_1160320128_n

নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি :

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ও দোছড়ি ইউনিয়নে নির্বিঘ্নে চলছে অবৈধ কাঠ পাচার। এ কারণে বন বিভাগের রহস্যজনক ভূমিকার প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। এভাবে বন ধ্বংস করে কাঠ পাচারের ফলে সবুজ শ্যামল বনাঞ্চল উজাড় হচ্ছে পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাইশারীতে বন দস্যুরা প্রকাশ্য দিবালোকে বাইশারী বাজার ও আশপাশের সড়ক দিয়ে জিপ ও ট্রাক ভর্তি করে কাঠ পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে কাঠ পাচার হলেও বন বিভাগকে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। বাইশারী সাঙ্গু রেঞ্জ অফিস শুধুমাত্র ‘অফিস’ কার্যক্রমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বন রক্ষায় কোন কার্যক্রম চোখে পড়ে না এখানে।

বন বিভাগে দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সারাদিন বাইশারী বাজারের সড়কগুলোতে বন দস্যুদের সাথে ঘুর-ঘুর করতে দেখা যায়। অসৎ কাঠ ব্যবসায়ী ও কাঠ পাচারকারীরা কিছু দুর্নীতিবাজ বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় কাঠ পাচারের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াকে একটা বৈধতার রূপ দেয়ার মাধ্যমে অর্থাৎ ভূয়া জোত পারমিটের কাগজ তৈরি করে জোত পারমিটের আড়ালে সংরক্ষিত বনের কাঠ পাচার করে থাকে। তবে কোনো ধরণের কাগজপত্র ছাড়াই কাঠ পাচারের ঘটনাও ব্যাতিক্রম নয়।

শুস্ক মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে বন দস্যুদের দল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বন বিভাগকে ম্যানেজ করে জ্বালানী কাঠ, গোলকাঠ, টিম্বার, চিরাই কাঠ সহ বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ পাচার বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন বাইশারী থেকে হাজার হাজার ঘনফুট জালানী এবং চিরাই কাঠ সরকারের রাজস্ব ফাকি দিয়ে পাচার অব্যাহত রয়েছে।

10917650_808417129228806_735445330_n

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বন বিভাগের সাথে আঁতাত করে অবৈধ কাঠ পাচার করে যাচ্ছে ইউনিয়নের সাবেক এক চেয়ারম্যান ফারুখ আহামদ, যুবদল নেতা আলী আহমদ, আনোয়ারুল হক এবং রামু উপজেলার গর্জনীয়া ইউনিয়নের হাজির পাড়া গ্রামের যুবলীগ নেতা গৌলাম মৌলাসহ ২০/৩০ জনের একটি সিন্ডিকেট।

তবে এরা সবাই রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে কাঠ পাচারের এ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তবে অনেকে দাবি করেন, বৈধ কাগজপত্র নিয়েই কাঠ ব্যবসা করছেন তারা।

সূত্র মতে, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের চোরাই কাঠ ছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন জোতের কাঠ বিক্রি ক্ষেত্রে জোত মালিককে বন বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানির শিকার হতে হয়। জোত পারমিট ইস্যুর প্রক্রিয়ায় বন বিভাগ ও কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির কিছু কিছু ব্যাক্তি অবৈধ লেনদেনের সাথে জড়িত। বর্তমান নিয়মানুযায়ী একটি জোত পারমিট ইস্যুর পূর্বে নির্দিষ্ট জোতে কমপক্ষে ছয় বার বন বিভাগের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তদন্ত বা পরিদর্শনে যেতে হয়। সে ক্ষেত্রে প্রতিবার পরিদর্শনের জন্য যাতায়াত, হাত খরচ ও ঘুষ বাবদ বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য গড়ে ১০/১২ হাজার টাকা খরচ করতে হয়।

অনুরূপভাবে দলিল পরীক্ষা এবং জোত পরিদর্শনের জন্য গড়ে ৮-১০ হাজার টাকা দিতে হয়। এছাড়াও এসব কাঠ পরিবহণের ক্ষেত্রে ও প্রতিটি চেকপোস্ট গড়ে ৫-৭ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। বর্তমানে বাইশারীর বিভিন্ন স্থানে কয়েক হাজার ঘনফুট জ্বালানী কাঠ, রদ্দা, গোলকাঠ ও টিম্বার পাচারের জন্য পাচারের অপেক্ষায় মওজুদ রাখা হয়েছে। মওজুদকৃত কাঠের মধ্যে রয়েছে গর্জন, জাম, বাটানা, গামারী, আকাশমনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ।

দীর্ঘদিন ধরে নাইক্ষ্যংছড়িস্থ বিজিবির অভিযান বন্ধ থাকায় কাঠ পাচারকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কাঠ পাচারের বিষয়ে স্থানীয় বাইশারী সাঙ্গু রেঞ্জ কর্মকর্তা এমদাদ হোসাইন সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পর্যাপ্ত জনবলের অভাব ও অস্ত্র না থাকায় কাঠ চোরাকারবারীর বিরুদ্ধে তারা কঠোর হতে পারছেন না।

এদিকে দোছড়ি ইউনিয়নের পাইনছড়ি, তারগু, বাহিরমাঠসহ সীমান্ত এলাকা থেকে মূল্যবান কাঠ পাচার বৃদ্ধি পেয়েছে সম্প্রতি। কথিত পারমিট কিংবা জোতভূমির কাঠ হিসেবে প্রশাসনকে ভুল তথ্য দিয়ে এসব কাঠ পাচার চলছে। এখানেও বন বিভাগের সাথে কাঠ পাচারকারীদের সক্ষতা থাকায় কাঠ পাচারকারীরা নির্ধিদায় বনাঞ্চল উজাড় করে মোটা তাজা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, অবৈধ অর্থের বিনিময়ে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সহায়তায় নির্দিষ্ট নিয়ম ও তদন্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই জোত পারমিট ইস্যু করা হয়। অন্যদিকে চোরাই দল সংরক্ষিত বন থেকে কাঠ চুরি করে নিয়ে আসে। পরে জোত পারমিটের বিপরীতে বন বিভাগ থেকে টিপি ইস্যু করা হয়। এভাবেই জোত পারমিটের আড়ালেই কাঠ পাচার হচ্ছে নাইক্ষ্যংছড়িতে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন