parbattanews

জোর করে শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করা হয়: র‌্যাব

Rana-RAB-bg20130428101529

  ডেস্ক নিউজ

রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাকে উত্তরায় র‌্যাব কোয়ার্টারে আনার পর সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের ডিজি মোখলেছুর রহমান বলেছেন, “সাভারের রানা প্লাজায় পাঁচটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ছিল। দুর্ঘটনার আগেই ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। তবু জোর করে শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করা হয়। ফলে ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। এরপর ভবনটির মালিক সোহেল রানা পালিয়ে যান। গত চারদিনে তিনি তিন-চারটি জেলায় আত্মগোপন করেছিলেন। তিনি ভারতে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তাকে যশোরের বেনাপোল সীমান্ত থেকে আটক করা হয়।”

রোববার বিকেলের ওই সংবাদ সম্মেলনে মোখলেছুর রহমান জানান, দুর্ঘটনায় দায়ী অন্যান্যদেরও শিগগিরই গ্রেফতার করা হবে। ইতিমধ্যে যারা গ্রেফতার হয়েছেন, আইনানুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, “দুর্ঘটনার দিন থেকেই তাদের গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হয়। সংশ্লিষ্ট সবাই এ ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলেন। এ উদ্দেশে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়।”

রানাকে গ্রেফতার করার সময় তার কাছে কয়েকটি ফেনসিডিলের বোতল পাওয়া গেছে বলেও জানান মোখলেছুর রহমান।

যশোর থেকে রানাকে নিয়ে বিকেল পাঁচটায় হেলিকপ্টার তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এরপর তাকে গাড়িতে করে উত্তরায় র্যাবের হেড কোয়ার্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।

হেলিকপ্টার থেকে নামানোর সময় রানার হাতকড়া পরানো ছিল। গায়ে ছিল প্রিন্টেড হাফ শার্ট ও কালো প্যান্ট। রানার সঙ্গে আরো একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকেও উত্তরায় র্যাবের হেড কোয়ার্টারে নেয়া হয়।

এর আগে সাভার ট্রাজেডির মূল হোতা রানা প্লাজার মালিক যুবলীগ নেতা সোহেল রানাকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেফতার করে র্যাব। র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউল আহসানের নেতৃত্বে একটি দল রোববার বেলা তিনটার দিকে রানাকে বেনাপোল সীমান্ত থেকে গ্রেফতার করে। হেলিকপ্টারে করে তাকে ঢাকায় আনা হয়।

স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বিকেলে সোয়া তিনটার দিকে সাভারে ভবনধসের উদ্ধার তৎপরতার কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাইকে এ ঘোষণা দেন।

নানক বলেন, “যে মানুষরূপী পশুটি এখানে মরণফাঁদ তৈরি করেছিল, যে সোহেল রানাকে গ্রেফতারের দাবি ছিল জনগণের, প্রধানমন্ত্রী তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সোহেল রানা দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। দেশ ছেড়ে পালানোর সময় তাকে পাঁচ মিনিট আগে বেনাপোল সীমান্ত থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হচ্ছে।”
 
এদিকে যশোর র্যাব-৬ এর মেজর  জাহিদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা বেলা তিনটার দিকে মনিরুজ্জামানের বাসায় অভিযান চালান। এ সময় বাসার ভাড়াটিয়া সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী শাহ আলম মিঠুর রুম থেকে রানাকে আটক করা হয়। পরে ভাড়াটিয়া মিঠুসহ সোহেল রানাকে আটক করে যশোর নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
 
বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন জানান, শনিবার রাত ১২টার দিকে সোহেল রানা ঢাকা থেকে বেনাপোল এসে  মনিরুজ্জামার জেটির বাড়ির ভাড়াটিয়া  সোহেল রানার আত্মীয় শাহ আলম মিঠুর রুমে অবস্থান করছিলেন।
 
গত বুধবার সকাল পৌনে নয়টার দিকে ঢাকার অদূরে সাভারে নয় তলার রানা প্লাজা ধসে পড়ে। এ ঘটনায় রোববার পর্যন্ত ৩৭০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আহত হয়েছেন সহস্রাধিক লোক। ভবনধসের পরই রানা প্লাজার মালিক ও পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানা পালিয়ে যান।

এ ঘটনায় রানার বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একটি মামলা করেছে ইমারত বিধিমালা আইনে আর অপরটি হয়েছে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে। সাভার থানার পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করে। সোহেল রানাকে গ্রেফতার করতে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর নির্দেশ দিয়েছেন।
 
এদিকে রানা সম্পর্কে তথ্য জানতে ইতিমধ্যে তার স্ত্রী মিতুসহ চার আত্মীয়কে আটক করা হয়েছে। গত শুক্রবার মানিকগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এছাড়া রানা প্লাজায় অবস্থিত তিনটি পোশাক কারখানার মালিককেও গ্রেফতার করে রিমান্ডে আনা হয়েছে।

 

Exit mobile version