parbattanews

ঝাউয়ের ঝরা পাতার মত ঝরে পড়ছে শিশুদের শিক্ষা

Coxs Jaw Child

আবদুল্লাহ নয়ন, কক্সবাজার :

শাকের উল্লাহ। বয়স তার ১০ বছর এখনো পূর্ণ হয়নি। কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেকের চর এলাকায় বসবাস করে সে। প্রতিদিন ভোর হলেই খালি বস্তা কাঁধে চলে যায় ঝাউ বাগান এলাকায়। ঝাউ গাছ থেকে ঝরে পড়া পাতা কুড়িয়ে পুর্ণ করা হয় খালি বস্তা। এক বস্তা পাতা বিক্রি হয় ৫০ টাকায়। পুরো দিন কুড়ানোর পর এক/দেড় বস্তা পাতা হয়। এসব পাতা বিক্রি করে চলে শাকের উল্লাহ’র সংসার। খাবার জুটে মা ও এক বোনের।

শুধু শাকের নয় অসহায়-দরিদ্র পরিবারের এ রকম বহু শিশু রয়েছে। যারা পেটের তাগিদে পাতা কুড়াতে গিয়ে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষা থেকে। ঝাউ বিথীর ঝরা পাতার মাঝে ঝরে যাচ্ছে তাদের শিক্ষা জীবন।

আবদুর রহমান (১২) নামে এক শিশু জানান, তার পিতা চরে শুটকী মহালে কাজ করেন। ৫ জনের সংসারে বাবার একজনের উপার্জন দিয়ে তাদের চলেনা। ফলে তাকেও অর্থ উপার্জনে নামতে হয়। সে আরো জানায়, এ বয়সে এখনো তার স্কুলে যাওয়া হয়নি। অন্য বন্ধুদের কাছে অ আ ক খ শুনেছেন। তবে লিখতে জানে না।

শিশুদের সাথে কথার এক পর্যায়ে তারা জানায়, পাতা কুড়াতে ভোরে বাসা থেকে বের হওয়ার কারণে স্কুলে যেতে না পারলেও তাদের পড়ার আগ্রহ রয়েছে বেশ। বিকেল বেলা অথবা সান্ধকালীন যদি কোন স্কুল হয়, তাহলে তাদের জন্য সুবিধে। কারণ ভোরে যদি পাতা কুড়াতে যাওয়া না যায় তাহলে বিকেলে ওইসব ঝরা আর পাওয়া যাবেনা। অন্যরা তা কুড়িয়ে নিবে। শিশুরা আরো জানায়, এই পড়ার সুযোগ অবশ্যই হতে হবে বিনামূল্যে। কারণ বই-খাতা-কলম কেনার সাধ্য নেই তাদের।

শহরের হাজী ছিদ্দিকীয় প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আবুল হাশেম সেলিম জানিয়েছেন, ঝরে পড়া এসব শিশুদের অবশ্যই এ বয়সেই শিক্ষার আলো দিতে হবে। অন্যথায় পরিণত বয়সে পৌঁছলে শিক্ষার সুযোগ থাকলেও সম্ভব হবে না। এর ফলে নৈতিক শিক্ষা না পেয়ে চারিত্রিক সমস্যার পাশাপাশি জীবনে চলার পথে সীমাহীন সমস্যার মুখোমুখি হবে তারা।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন জানান, শিশুটি ধনী কিংবা গরীব যেই পরিবাররই হোক। শিক্ষা তার মৌলিক অধিকার। বর্তমান সরকার শিক্ষার জন্য বিনামূল্যে বই বিতরণসহ নারী শিক্ষায় বিশেষ অবদান রেখে চলছে; যা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এরপরও এই যুগে বিশেষ এলাকায় শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে-সেটি হতে পারেনা। এজন্য সবাইকে সচেতন হয়ে উঠতে হবে। দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত শিশুদের জন্য তাদের উপযোগী সময়ে শিক্ষার সুযোগ করে দিতে হবে।

সচেতন মহল মনে করেন, সরকারের পাশাপাশি যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অথবা বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাও এগিয়ে আসতে পারেন। এসব ঝরে শিশুদের কুড়িয়ে এনে শিক্ষাঙ্গনে পৌঁছানোর উদ্যোগ নিতে পারেন।

Exit mobile version