টেকনাফের খবর

উপজেলা সংবাদদাতা, টেকনাফ

টেকনাফে দু’গ্রামবাসীর মধ্যে আবারও সংঘর্ষ: কার ভাংচুর  
teknaf news( K) 05-7-13.doc          

                                
টেকনাফে দু’গ্রামবাসীর মধ্যে আবারও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের সময় ১টি কার ভাংচুর করা হয়েছে। ৫ জুলাই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দু-গ্র“প নাজির পাড়া বনাম মৌলভীপাড়া ও হাবিবপাড়া মূখামূখি অবস্থানের ফলে এএলাকায় টমটমে পরিস্থিতি বিরাজ করে আসছিল। খবর পেয়ে  থানা পুলিশের সেকেন্ড অফিসার শাহ আলম ও চেয়ারম্যান নুরুল আলম, পৌরসভার প্যানেল মেয়র আব্দুল্লাহ মনির ও ইউপি সদস্য ছৈয়দ হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং উভয় পক্ষের সাথে বৈঠক করে সমঝোতার চেষ্টা করে। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়া ও হাবিরপাড়া এলাকার গ্রামবাসীর মধ্যে সংর্ঘষের সূত্রপাত হয়। এতে কমপক্ষে ১৫-২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলির ঘটনা ঘটে ৪০ জন আহত হয়। মূলত ফুটবল খেলার পরাজয় মেনে নিতে না পারায় নাজির পাড়া এনামূল হক একাদশ বনাম হাবিবপাড়া ও মৌলভীপাড়া একাদশের মধ্যকার ০-৩ গোলে হাবিবপাড়া একাদশ বিজয়ী হয়। খেলার শেষের এক পর্যায়ের সাবরাং’র এক খেলোয়াড় নিয়ে বাকবিতন্ডা হয়।

এতে কথা কাটাকাটির জের ধরে সন্ধ্যায় ছিদ্দিক আহমদ, নুরুল আমিন ও রশিদ আলম মোটরসাইকেল যোগে টেকনাফ থেকে বাড়ি ফেরার পথে চকবাজার এলাকায় তাদের গতিরোধ করে মারধর ও রশিদ আলমকে ছুরিকাঘাত করে। খবর পেয়ে হাবিরপাড়ার গ্রামবাসীরা এগিয়ে এসে উভয়পক্ষ দেশীয় তৈরি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ে। এদিকে গুরুতর আহত রশিদ আলমকে আশংকাজনক অবস্থায় কক্সবাজার হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যন্য আহতদের উদ্ধার করে টেকনাফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন অথ্যাৎ শুক্রবার সকাল থেকে জড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী সূত্রে সরজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়- নাজিরপাড়ার ইউপি সদস্য ছৈয়দ হোছনের পুত্র আলাউদ্দিন সাবরাং স্কুলে যাওয়ার পথে হাবিবপাড়া তিন রাস্তায় পৌঁছলে তাকে রিক্সা থেকে নামিয়ে আটকে রাখা হয়েছে মর্মে সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে নাজিরপাড়ার এলাকাবাসী সড়কে মহড়া দেয় এবং উদ্ধার করে আনতে প্রস্তুতি নেয়। এ সময় মৌলভীপাড়ার এলাকার মৃত লাল্লুর পুত্র নবী হোছেন ভূট্রো প্রাইভেট কার নিয়ে টেকনাফ বাজার থেকে যাওয়ার পথে নাজিরপাড়ায় পৌঁছলে নাজিরপাড়ার লোকজন চট্টমেট্রো ১১-০৬১০ নম্বর কার গাড়িতে ভাংচুর চালায় ও মৌলভী পাড়ার ফজল হাজীর পুত্র আবদুর রহমানের একটি গৃহপালিত ছাগল ধরে নিয়ে যায়। বর্তমানে ভাংচুরকৃত গাড়িটি থানার হেফাজতে রয়েছে এবং এএলাকায় পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এ রির্পোট লেখা পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফরহাদ বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।  দোষী বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে ।
                                           
টেকনাফের  বাল্যবিবাহ নিয়ে তোলপাড়
টেকনাফ উপজেলা  হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে একটি বাল্য বিবাহ নিয়ে তোলপাড় চলছে । বাল্য বিয়ের এই ঘটনা ঘটেছে গতকাল বৃহস্পতিবার ৪ জুলাই বিকালে । সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার, কাজী ও ইউপি চেয়ারম্যন তাঁদের দায়-দায়িত্ব অস্বীকার করেছেন । কনে হচ্ছে- হোয়াইক্যং ্ইউনিয়নের বালুখালী গ্রামের বদরজ্জামানের কন্যা মনোয়ারা বেগম (১৫), আর বর হচ্ছে পাশাপাশি গ্রাম কোনাপাড়ার মোঃ ছালামের পুত্র জাহাঙ্গীর (১৬) । বর জাহাঙ্গীর ও তার অভিভাবকদের অভিযোগ- ৩ জুলাই সন্ধায় তাকে রাস্তা থেকে জোরপুর্বক মেয়ের আত্মীয়-স্বজনরা ধরে নিয়ে গিয়ে রাতভর আটকে রাখে । ৪ জুলাই বিকালে কান্জরপাড়া থেকে কাজী ডেকে এনে কাবিন সম্পাদন ও বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হয় ।

বর জাহাঙ্গীরের জেঠা গ্রাম পুলিশ আবু ছিদ্দিক জানান- তার ভ্রাতুষ্পুত্র জাহাঙ্গীরকে আটকে রাখার খবর পেয়ে সে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদেরকে এই অসম বিয়ে বন্ধ করতে অনেক অনুনয়-বিনয় করেছিল, কিন্ত তারা তাতে কর্ণপাত করেনি । তিনি আরও জানান-মনোয়ারার পিতা বদরজ্জামান ডাকাতি মামলায় আসামী হয়ে গত দশ বছর ধরে টেকনাফে অবস্থান করছে। তার  মেয়ে মনোয়ারা বেগম গত ১ মাস আগে চাচা নুরুজ্জামানের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। মনোয়ারার বয়স বড়  জোর ১৫ এবং জাহাঙ্গীরের বয়স ১৬ বছরের বেশী হবেনা।

এ ব্যাপারে  যোগাযোগ করা হলে  হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের  মেম্বার  মোস্তফা কামাল  চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের কাবিন সম্পাদন ও বিয়ে পড়িয়ে দেয়ার কারণ জানতে চাইলে  হোয়াইক্যং ইউনিয়নের দায়িত্ব প্রাপ্ত বিবাহ ও তালাক রেজিস্টার (কাজী) আকতার কামাল নুরী বলেন, আমি বর্তমানে জরুরী কাজে কক্সবাাজারে অবস্থান করছি, আমার  কেরানী   এ ধরনের আইন বিরুধী কাজ করেছে কিনা আমার জানা  নেই। আমি অফিসে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। এ দিকে কনের বয়স ১৯ করে একটি জন্ম নিবন্ধন সনদ আনা হয়েছে বলে জানা গেছে, তবে বরের কোন  জন্ম নিবন্ধন সনদ আনা হয়নি। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বয়স বাড়িয়ে দিয়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ ইস্যু বিষয়ে জানতে চাইলে  হোয়াইক্যং মডেল ইউপি  চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাও. নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, এ ধরনের বাল্যবিবাহ ও জন্ম নিবন্ধন সনদ ইস্যু সম্পর্কে আমি অবহিত নই।

টেকনাফ পৌরসভার রমজানের পবিত্র রক্ষার্থে প্রশংসনীয় উদ্যোগ                                        
আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে টেকনাফ পৌর এলাকার রাস্তাঘাট পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও যানজট নিরসন সংক্রান্ত বিষয়ে গত ৫ জুলাই টেকনাফ পৌরসভা মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভা টেকনাফ পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব মোঃ ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত হয়। টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সেলিনা কাজী, উপজেলা নির্বাহী অফিসাররের পক্ষে উপজেলা মৎস্য অফিসার সৈয়দ হুমায়ূন মোর্শেদ, টেকনাফ মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার এস,আই মো আলম  ও কাউন্সিলারবৃন্দ, সাংবাদিক, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ যানবাহন প্রতিনিধিও ব্যবসায়ীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এতে সভায় রমজানের পবিত্র রক্ষার্থে মতামত পেশ করেন এবং সিদ্ধান্ত সমূহ গৃহীত হয়। সিদ্ধান্ত গুলো হচ্ছে- টেকনাফ পৌর এলাকার যানজট নিরসনের জন্য পৌরসভার অর্থায়নে ০৪ (চার) জন আনসার ও পৌরসভার ০৬ (ছয়) জন মাস্টার রোল কর্মচারী নিয়োগ করে দায়িত্ব ভাগ, পুরাতন হাসপাতালের সামনে কোন সি.এন.জি ও টমটম দাড়াতে  না দেওয়া, কুলাল পাড়া জীপ ষ্টেশন সংলগ্ন দক্ষিণ পার্শ্বে ১০টি সি.এন.জি ও ০৪টি চান্দের গাড়ী দাড়াতে পারবে, রমজান মাসে টেকনাফ বাজার টমটম প্রবেশ করতে না দেওয়া, ফুয়ারার নিচে গর্তটাকে ভরাট করে ট্রাফিক দাড়ানোর ব্যবস্থা, ফুয়ারার চর্তুর পার্শ্বে সরকারী জায়গা খালি করার ব্যবস্থা, স্পেশাল সার্ভিস এর গাড়ী ০২টি ও নাফ সার্ভিসের গাড়ী ০১টি কাউন্টারের সামনে থাকতে পারবে, ফুয়ারা চত্ত্বরে কোন গাড়ী না থামানো, স্পেশাল সার্ভিস কাউন্টারের পার্শ্বে ২৫ টি সিএনজি দাড়াতে পারবে, ষ্টেশন সমজিদের সামনে কোন সি.এন.জি দাড়াতে পারবে না, লেঙ্গুর বিল রোডে ফাইভষ্টার মার্কেটের পূর্ব পার্শ্বে কোন টমটম আসতে পারবে না, বাস ষ্টেশন ও মংগ্রী মার্কেটের সামনে কোন ড্রাম রাখা যাবে না, টমটম কায়ুকখালী ব্রীজের পার্শ্বে দাড়াবে,  মসজিদের সামনে ০৩টি জীপ গাড়ী দাড়াবে। হানিফ, সিলভার লাইন, সেন্টমার্টিন সার্ভিস ছাড়ার ০১ ঘন্টা পূর্বে কাউন্টারের সামনে দাড়াবে ও মাইক্রোবাস (নোহা ও হাইস) একসাথে ১০টির বেশী দাড়াতে পারবেনা।

টেকনাফে গ্যাস ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি ভোক্তারা                                        
টেকনাফ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা হঠাৎ  করে গ্যাসের অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধি করেছে। সাতদিনের ব্যবধানে ১১ শ টাকা থকে একলাফে ১৭ শ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। অসহায় গ্যাস ব্যবহারকারীরা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ ও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার দাবী উঠেছে। চট্্রগ্রাম থেকে গ্যাস ক্রয়সহ টেকনাফ আনা পর্যন্ত সিলিন্ডার প্রতি খরচ হয় সাড়ে ৮শ টাকা। এখন তার দ্বিগুন দাম নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা ছিনিয়ে নিচ্ছে বলে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগ।

ভোক্তারা জানান আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মতো গ্যাসের বাজারেও আগুন লেগেছে। বর্তমানে সিলিন্ডার গ্যাস পাওয়া গেলে দাম গত সপ্তাহের চেয়ে অনেক বেশী। সামনের দিনগুলোতেও মূল্য কমার কোন সম্ভাবনা নেই, এমনটিই বলেছেন গ্যাস পরিবেশকরা। তবে মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি তাদের হাতে নেই বলেও জানালেন কয়েকজন গ্যাস পরিবেশক। চট্টগ্রাম থেকে বেশি মূল্য কিনতে হয় বলে টেকনাফ বাজারে বেশি মূল্যে বিক্রি করতে হয় দাবি পরিবেশকদের। জানা যায়, চট্্রগ্রাম থেকে কক্সবাজার আনা পর্যন্ত প্রতি সিলিন্ডার গ্যাসের পেছনে ব্যবসায়ীদের ব্যয় হয় প্রায় সাড়ে আটশ টাকা।

আর টেকনাফে এসেই তা দ্বিগুণ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে গণমাধ্যমে লেখালেখির পর কিছুদিনের জন্য ব্যবসায়ীরা গ্যাসের মূল্য কমিয়ে দেয়। তবে তা কখনো এক হাজার টাকার নীচে নামেনি। মূলত ব্যবসায়ীরা কৌশল হিসেবেই এই মূল্য কমিয়ে দেয়। জানা যায়, টেকনাফ উপজেলায় কয়েকজন গ্যাস পরিবেশকের নেতৃত্বে রয়েছে একটি সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটই উপজেলার সিলিন্ডার গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। নিজেদের দখলে উপজেলার জন্য বন্টনকৃত লাইসেন্সের দখল থাকার এ কাজ করতে তাদের বেগ পেতে হয় না। আর এটিই বর্তমানে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম রয়েছে। উপজেলার বড় গ্যাস পরিবেশকদের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিষ্টানে গ্যাস বিক্রি না করারও অভিযোগ রয়েছে। নিজেরা বিক্রি না করে বিভিন্ন  ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে তারা গ্যাস বিক্রি করে দেন।

এ ক্ষেত্রে কয়েক হাত বদল হয়ে গ্যাস ব্যবহারকারীদের হাতে পৌঁছায়। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির এটিও একটি অন্যতম কারণ। ৫ জুলাই গ্যাসের দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, সরকারী এল.পি. গ্যাস প্রতি সিলিন্ডার বিক্রি করা হচ্ছে ১৬শ  থেকে ১৭ শ’ টাকায়। অন্যদিকে যমুনা, বসুন্ধরা গ্যাস বিক্রি হচ্ছে প্রতি সিলিন্ডার ১৫শ ২০ টাকায়। গত সপ্তাহেও যা ১৫শ থেকে সাড়ে ১৫শ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এক সপ্তাহের ব্যবধানেই যা ৩শ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা বেড়ে গেছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন