টেকনাফের হোয়াইক্যং রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ইকোসেক প্রকল্পের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ইকোসেক হোয়াইক্যং অফিসের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। ওখানকার কর্মকর্তা ও কতিপয় সিও মিলে প্রকল্পের নিয়ম নীতি ভঙ্গ করে অনিয়ম ও দূর্নীতির মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। যথাযথভাবে এদের দেখভাল না করায় লাঘাম টানা দুরূহ হয়ে পড়েছে। ফলে এই অফিসের বেপরোয়া দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

খোঁজ খবর ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রোহিঙ্গা আসার পর ক্ষতিগ্রস্ত উপকারভোগিদের নিয়ে কাজ করতে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ইকোসেক প্রকল্প কার্যক্রম শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে ২০২০ সালে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের দৈঘগ্যাকাটা , লাতুরী খোলা, জয়াড়ী খোলা, ওয়্যারাপারা অর্থাৎ ৪নং ওয়ার্ডে প্রতি পরিবারে ত্রিশ হাজার টাকা প্রদানের জন্য একটি করে ফরম দেয়া হয়। মোট ৫’শ ফরম দেয় ওই প্রকল্প। এ টাকা দেওয়ার নামে কতিপয় কর্মকর্তা শুরু করে অনিয়ম ও দূর্নীতি।

এই ফরম ফিলাপ করতে ১০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ যার কাছ থেকে যত পেয়েছে তত হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। তারা এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন নি। চূড়ান্ত টাকা পাইয়ে দেয়ার জন্যও ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ আদায়ের শুরু করে দরবার। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। যারা টাকা দেননি তাদের দেয়াতো দূরের কথা উল্টো করা হয়েছে ব্যপক হয়রানি।

৪ নং ওয়ার্ডের আবুল কাশেমের ছেলে নুরুল ইসলাম বলেন, আমার কোন জায়াগা সম্পত্তি নেই। ভিলেজারি জমিতে চাষবাস করে দিনাপাত করছি। ওই এনজিও টাকা প্রদানের কথা বলে একটি ফরম দেয়। এ সব টাকা দিয়ে পানের বরজ করার পরিকল্পনা করা হয়। প্রথমে এ ফরমের জন্য ১ শ টাকা হাতিয়ে নেয় হাসিনার আক্তার। কিন্তু তার অফিসিয়াল নাম রুজিনা আক্তার। কিছুদিন পরে অফিসের এক কর্মী মুঠোফোনে ৩০ হাজার টাকা পাওয়ার জন্য কিছু খরচের টাকার কথা বলেন। টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায়, কৌশলে তারা আমাকে টাকা দেননি।’ শামসুল আলমের স্ত্রী মোহছেনাও একই কথা জানিয়ে বলেন, প্রথম ফরমের জন্য ৫ শ টাকা নেন হাসিনা ও তার সহকর্মী। কয়েকদিন পরে বাড়িতে গিয়ে ৩ হাজার টাকা দাবি করেন হাসিনা আক্তার। তিনি জানান, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খরচের টাকা না দিলে ফরমগুলো অকে হয়না।’ অবশেষে টাকা না দেওয়ায় মোহছেনাও ৩০ হাজার টাকা বঞ্চিত হন।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ বিষয় হলো দল ভিত্তিক টাকা প্রদানের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দূর্নীতির আশ্রয় নেন তারা। সব কিছু ঠিকাঠাক থাকলেও উৎকোচের টাকা না দেওয়ায় দুই দল থেকে দুই নারীকে বাদ দেয়া হয়। তারা হলেন শামীমা পারভীন ও অপর এক নারী। অথচ বাদ যাওয়ার এ দুই নারী মালিক থেকে মাছের প্রকল্প লগিয়ত নেয়। তারা বাদ যাওয়ায় কোন প্রকল্পে দেখে টাকা দেবে? এমন প্রশ্ন তাদের। তারা অভিযোগ করে বলেন, হোয়াইক্যং অফিস ইনচার্জ কাসিব উল হক একাধিকবার অফিসে যাতায়াত করিয়ে অনেক টাকা খরচ করানো হয়। সব কিছু ঠিক হলে, অগ্রণী ব্যাংক পালংখালী শাখায় দুই দলের দুইটি যৌথ হিসাব খোলা দেয় ওই অফিসার। পরে তার ইশারায় হাসিনা আক্তার ৫ হাজার করে খরচের টাকা দাবি করে। এ টাকা না দেওয়ায় সুবিধাভোগি ওই দুই নারীকে বাদ দেয়া হয়। তারা আরো বলেন, অফিস, ব্যাংক নিয়ে যাতায়াত, প্রকল্প ভাড়া নেয়া ইত্যাদি করিয়ে তারা চরম হয়রানি করা হয়।

স্থানীয়দের ধারণা কাসিব উল হকের ইশারায় সিওরা নানা অপকর্ম করেই যাচ্ছেন। অফিসের নিয়ম বহির্ভূত একাধিক কার্যকলাপেও জড়িত বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি রুজিনা আক্তার নামের সিও নারীটি তার বোনের সার্টিফিকেট ব্যবহার করে এই অফিসে কাজ করছে। তার প্রকৃত নাম হাসিনা আক্তার বলে জানা যায়। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক ফরম নেওয়া ব্যক্তি বলেন, তারা চূড়ান্ত টাকা পাইয়ে দেওয়ার শর্তে ৫-১০ হাজার টাকা দাবি করে। এ ছাড়া যারা ক্যাটাগরিতে পড়েনা তাদেরকেও টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে এক পরিবার হচ্ছে আব্দু রাজ্জাকের ছেলে জকির তারা দুইজনও টাকার আওতায় আসেন। অথচ জকিরের দুই ছেলে মনির ও শফিক বিদেশে থাকা সত্ত্বেও কৌশলে টাকা পাওয়া দুঃখজনক।

এ ব্যাপারে স্থানীয় মেম্বার বাবুধন চাকমা জানান, তাদের কার্যক্রমে মোটেই সন্তুষ্ট নন। তারা কোন ধরণের সুবিধাভোগিদের টাকা দেওয়া হচ্ছে, আমাকে জানানো হয়নি। যা সত্যি দুঃখজনক।

হোয়াইক্যং অফিসের ইনচার্জ কাসিব উল হক, লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ১শ থেকে ২০০ টাকা তারা খুশি হয়ে ফরমটি পূরণ করার জন্য দেয়া হয়েছে। খুঁজে কোনো টাকা পয়সা নেয়া হয়নি। পাশাপাশি ৩ হাজার টাকা নেওয়ার ব্যাপারে একটি মহল রিউমার ছড়িয়েছিল। কিন্তু আমরা সবাইকে নিষেধ করে দিয়েছি। এ ছাড়া শামীমা পারভীন মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন এবং ওই এলাকায় থাকেন না। যার কারণে সুবিধাভোগি হতে বাদ যান।

ওই প্রকল্পের ডোনার প্রকল্প আইআরসি প্রকল্পের স্পেশালিস্ট বা এফও মং চাকমা জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ইকোসেক প্রকল্পের প্রজেক্ট অফিসার আরজু উদ্দিন সরদার জানান, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিতে কোন অনিয়াম ও দূর্নীতি নেই। পাশাপাশি ওইসব বেনিফিসিয়ারী থেকে অর্থ আদান প্রদানের কোন সূযোগ আমাদের নেই। এটা হয়ে থাকলে সত্যি দুঃখজনক। এ ব্যাপারে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

হোয়াইক্যং মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী তাদের কার্যক্রমে অসন্তুষ জানিয়ে বলেন, তারা হোস্ট কমিউনিটির লোকজনদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অনিয়মে জড়াচ্ছে। সেই সাথে ইউনিয়ন পরিষদের সাথে কোন ধরনের সমন্বয় ছাড়া কাজ করছে এ অফিস। এ ব্যাপারে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অভিযোগ, ইকোসেক, রেডক্রিসেন্ট
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন