ইয়াবা ব্যবসায়ী ফয়সালকে আটকের কারও কুদরত নেই!

টেকনাফে ইয়াবা ব্যবসায়ীর নির্যাতনে এলাকা ছাড়লো মসজিদের ইমাম

fec-image

টেকনাফে একের পর এক শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী আটক ও বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেও এখনো ইয়াবার হাল ধরে বসে আছে ফয়সাল নামের এক কারবারী। অথচ ছোট-বড় ইয়াবা ডন বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হয়ে ইয়াবার রাজ্য হিসেবে খ্যাত টেকনাফ শুন্যের কোটায় চলে আসছে। সেই কোটায় কালো টাকায় ম্যানেজ করে ইয়াবার রাজা বনে যাওয়া ফয়সাল এখন আবার নতুন আলোচনায় এসেছে সুড়ঙ্গ ও মসজিদের ইমামকে নির্যাতন করে।

সেই ইমাম নুরুল ইসলাম নির্যাতনের শিকার হয়ে মসজিদের চাকরী ছেড়ে দিয়ে নিজ এলাকা পর্যন্ত ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে।

জানা গেছে, হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার মরিচ্যাঘোনার মৃত ফজলুল করিমের ছেলে ফয়সাল ও তার পরিবারকে স্থানীয় কিছু অসাধু নেতা ও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। মানুষের কৌতুহল ইয়াবা নির্মুল হচ্ছে সেখানে তিনি কেন চালিয়ে যেতে পারছেন। কিভাবে ফয়সাল শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরী করে বহাল তবিয়তে রয়েছে।

এলাকার লোকজন এই ইয়াবা ডন অধরা থাকায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। মানুষ এখন বলছেন, ফয়সাল গংদের আটকের কারও কুদরত নেই আর। এতো ঘটনার পরেও কেন বহাল তবিয়তে।

থানা সুত্র জানা গেছে, মরিচ্যা ঘোনার এই সুড়ঙ্গ ভবনের ডন ফয়সালের স্ত্রী পারভীনের বোন জেসমিন ইয়াবা নিয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। তার স্বামী মুফিদ আলমও কয়েকমাস আগে মেরিন ড্রাইভে বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। তারপরেও থেমে নেই এই ইয়াবা পরিবার। তার বিরুদ্ধে রয়েছে কক্সবাজার সদর, উখিয়া ও টেকনাফ থানায় একাধিক মামলা ও অভিযোগ।

এই ইয়াবা পরিবারের কারনে স্থানীয় মসজিদের ইমাম একই এলাকার নুরুল ইসলামকে চাকরী ছেড়ে এলাকা পর্যন্ত ত্যাগ করতে হয়েছে। তিনি এ প্রতিবেদককে আক্ষেপ করে জানান, গত বছরের মে মাসে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল হাসানের নির্দেশক্রমে মসজিদে নামাজের পর মাদকের বিরুদ্ধে আলোচনা করতে। তখন তিনি সেই নির্দেশনা অনুযায়ী মসজিদে বয়ান করেন। পরক্ষণে একদিন এশারের নামাজের পর ফয়সালসহ তার ভাই মিলে মসজিদে মাদকের বিরুদ্ধে কেন কথা বলেছেন বলে উক্ত ইমামকে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়।

এরপর ইয়াবা ফয়সাল গুলি করতে ভাইকে নির্দেশ দিয়ে বলে-তাকে মেরে ফেলতে। পরে আশপাশ এলাকার লোকজন ও মুসল্লিরা এগিয়ে আসলে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ব্যাপক মারধর করে পালিয়ে যায়। তখন ইমাম নুরুল ইসলামকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

উক্ত ঘটনায় তাৎক্ষনাত টেকনাফ থানায় অভিযোগ দেয়া হয়। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে আসেন টেকনাফ থানার ওসি তদন্ত এবিএম দোহা। তিনি ফয়সালের ইয়াবা বাড়িতে গিয়ে ভাংচুরও চালায় এবং ঘটনার সত্যতা পায়। এরপর তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল হাসান একাধিক বিচার সালিশ করেও ঘটনার সঠিক বিচার করতে পারেনি। ইউএনও পর্যন্ত অসহায় হয়ে ইমামকে মসজিদ থেকে চাকরী ছেড়ে দিতে বলেন।

মসজিদের ইমাম নুরুল ইসলাম আরো বলেন, প্রথমে পুলিশ তারঁ পক্ষে কথা বললেও পরে কালো টাকার বিনিময়ে ফয়সালের পক্ষ হয়ে যায়। এরপর থানা থেকে সরাসরি বলে দেন ওসি তদন্ত আমাকে থানায় না যেতে। বেচারা ইমাম অসহায় হয়ে মসজিদের চাকরী ছেড়ে দিয়ে নিজ মরিচ্যাঘোনা এলাকা থেকে এখন লেদায় গিয়ে মসজিদে চাকরী করছে।

অদ্যবধি কোন বিচার পাননি উক্ত নির্যাতিত ইমাম। এখনো তাকে খুন করবে লাশ উপহার দিবে বলে হুমকি দিচ্ছে। তিনি বর্তমানে মাঝেমধ্যে ভয়ে চুরি করে মরিচ্যাঘোনায় তার বাড়িতে যাওয়া আসা করে তাও সকালে গিয়ে বিকালে চলে আসতে হয়।

এভাবে আরও অনেক মানুষকে নির্যাতন করেছে এই ফয়সাল ইয়াবা গং। তাদের বিরুদ্ধে কোন বাধা বিপত্তি আসলে তারা টাকার বিনিময়ে সব তাদের নিয়ন্ত্রণে করে ফেলে। তাই এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে কথাও বলতে পারেনা কেউ।

জানা গেছে, হ্নীলা মরিচ্যাঘোনার ইয়াবা ডন ফয়সালের বিলাসবহুল বাড়ি। তাঁর ঘরের বাথ রুমের সাথে বিশাল সুড়ঙ্গ প্রকাশ পেয়েছে। এরপর আইন শৃংখলা বাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করে সত্যতাও পায়। তারপরেও কি অদৃশ্য কারনে ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ তা ভাবিয়ে তুলেছে।

এই ফয়সালের রয়েছে গাড়ি-বাড়ি, কক্সবাজার শহরের আপন টাওয়ারের সামনে হোটেল প্রিন্স নামে হোটেল, চট্টগ্রামে হরেক ব্যবসা ও এলাকায় রয়েছে এদের বিপুল জায়গা-জমিসহ নামে বেনামে সম্পত্তি।

এছাড়া কক্সবাজার লিংক রোডসহ আরো কয়েকটি এলাকায় রয়েছে কয়েকটি ভবন। মরিচ্যা ঘোনার ফয়সাল ভবন, যেখানে রয়েছে সুড়ঙ্গ। এত বছর ধরে ইয়াবার টাকায় নির্মিত সুড়ঙ্গ ভবনটি পুলিশের চোখ এড়াল কিভাবে ?

বর্তমানে এসব সুড়ঙ্গ ও ইয়াবা কাহিনী ধামাচাপা দিতে মাঠে নেমেছে ফয়সাল ডনের লোকজন কোটি টাকার মিশন নিয়ে। আবার এসব অভিযোগ দামাচাপা দিতে তার স্ত্রী পারভিন হ্নীলা কমিউনিটি পুলিশিং এর সাধারণ সম্পাদক চাঁদা দাবী করেছে বলে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ীতে একটি অভিযোগ দিয়েছে।

ইয়াবা পাচারের মামলা থেকে রক্ষা এবং ইয়াবার তকমা লোকাতে কোটি টাকার মিশন নিয়ে পুলিশের নিকট না গেলেও দালাল ফড়িয়ার দ্বারস্থ হয়েছে। ফলে ফয়সাল কিছুদিন আত্মগোপনে গেলেও তার স্ত্রী সামাল দেয় বিভিন্নভাবে।

স্থানীয়রা জানান, ইয়াবা ডন ফয়সালের ঘরের বাথরুমের সাথে যে সুড়ঙ্গটি রয়েছে সেটি প্রতিবেশী রহমত উল্লাহর ঘরে গিয়ে আরেক প্রবেশ মূখ রেখেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার এক সচেতন যুবক জানান, মাদক ব্যবসায়ী ফয়সালের ব্যবসা, গাড়ি, বাড়ি, সহায় সম্পত্তি বহাল তবিয়তে এবং তিনি নিজ অবস্থানে নিরাপদে অবস্থান করছে। এলাকাবাসীর দাবী হয়তো এসব ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করা হোক। না হলে পরিবেশ পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়ে যাবে।

সচেতনমহল জানিয়েছেন, কিছু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনের সঙ্গে ইয়াবা সিন্ডিকেটের আঁতাত ও সম্পৃক্ত থাকার কারণে মাদকবিরোধী এই কঠিন অভিযানেও ফয়সালদের মতো ডন বেঁচে আছে। এসব ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা না হলে হাজারো মাদক বিরোধী অভিযানে সফলতা আসবে না। কারণ, এসব ইয়াবা ব্যবসায়ীর রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি এবং তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানের রাঘববোয়াল ইয়াবা সিন্ডিকেট।

স্থানীয়রা এই আলোচিত ইয়াবা সিন্ডিকেট এর কবল থেকে এলাকাকে রক্ষা ও তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানান।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ জানান, এসব চিহ্নিত মাদক কারবারিদের আটকে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেলে পুলিশের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার কোন সুযোগ নেই।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ইয়াবা, টেকনাফ, ডন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন