ফলোআপ: দুবাই পালিয়ে যাওয়া আসামির ফের ওয়ারেন্ট

টেকনাফে করিম উল্লাহ খুনের রহস্য উদঘাটনে তৎপর সিআইডি

fec-image

টেকনাফে আলোচিত হাজী করিম উল্লাহ খুনের মামলাটি অবশেষে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ক্লু উদঘাটনের দ্বার প্রান্তে পৌঁছেছে।

সিআইডি কক্সবাজার জেলার বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহেদ মিয়া (২১ মে) রবিবার টেকনাফের কচ্ছপিয়া ব্রীজ, নিহতের ঘরসহ সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো: শাহাদাত হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর ঢাকা পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অ্যাডিশনাল ডিআাইজি (ক্রাইম রেঞ্জ) মোহাম্মদ শাহ জালাল স্বাক্ষরিত পত্রে উল্লেখ করা হয় ” টেকনাফ মডেল থানার মামলা নং-৬০ তারিখ :১৭/০৯/২০২১ খ্রি: ধারা: ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোডের তদন্তভার আদিষ্ট হয়ে সিআইডি-তে হস্তান্তর করা হলো।”

এই আদেশের পরপর সিআইডি কক্সবাজার অফিসের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো: শাহাদাত হোসেন মামলাটি তদন্তভার গ্রহণ করেছেন। তিনি গত ইতিমধ্যে মামলার ডকেট সংগ্রহ, ঘটনাস্থল পরিদর্শন, প্রয়োজনীয় স্বাক্ষ্য প্রমান, তথ্য উপাত্ত নিয়ে নিবিড় ভাবে এই খুনের রহস্য উন্মোচনে গ্রাউন্ড ওয়ার্ক শেষ করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। ইতিমধ্যে ক্লু লেস এই মামলাটির তদন্ত কাজ শেষ পর্যায়ে বলেও জানান তিনি।

মামলাটি সিআইডি তদন্ত করায় এ খুনের আসল রহস্য উন্মোচন ও প্রকৃত খুনিরা চিহ্নিত হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন টেকনাফ পৌর সভার ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল বশর নুরশাদ ও নিহতের ভাই হাজী আমিন উল্লাহ।

এ ঘটনায় প্রথমে ২০২১ সালের ৩০ অক্টোবর (শনিবার) খুনের অন্যতম মাস্টার মাইন্ড ও নিহতের জামাতা (আপন মেয়ের স্বামী) মোহাম্মদ হোসেনকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই তারেক বুধবার (৩ নভেম্বর-২০২১) কক্সবাজার আদালত ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে দু” দিন মঞ্জুর করে। দু” দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদও করে তদন্ত কর্মকর্তা। এ ঘটনার সাথে জড়িত অটোরিকশা চালক এমরান(২৭)কেও( ১ নভেম্বর-২০২১) আটক করে পুলিশ। সে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মাঠ পাড়া গ্রামের মো. আয়ুবের ছেলে। তবে তাদের বেশি দিন কারাগারে থাকতে হয়নি।

মামলা পরিচালনায় বাদীর উদাসীনতা, তদন্ত কর্মকর্তার সময় ক্ষেপণ ও নানাবিধ কারণে আটক আসামি উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে বের হয়ে আসে। এরমধ্যে অতি সংগোপনে নিহতের জামাতা মোহাম্মদ হোসেন দুবাই-তে পাড়ি জমান।

এদিকে মোহাম্মদ হোসেন দুবাই পালিয়ে গেলেও দির্ঘ্যদিন ধরে অসুস্থতার কথা বলে আলালতে উপস্থিত থাকতো না। সিআইডি প্রদত্ত তদন্ত কর্মকর্তা বিষয়টি আদালতে উত্থাপন করলে পরে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ফের গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে বলে নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাহাদাত হোসেন।
অনুসন্ধানে

জানা যায়, টেকনাফ পৌর সভার ৯ নং ওয়ার্ডের মৃত হাজী সাব্বির আহমেদের ছেলে হাজী করিম উল্লাহর মৃতদেহ গত ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের কচ্ছপিয়া ব্রিজের নিচ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি আগের দিন ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে মেয়ের ঘরে দাওয়াত খেয়ে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে যান। এ সময় তার মোবাইল বন্ধ ছিল। পরের দিন সকালে অজ্ঞাত মৃতদেহ হিসেবে পুলিশ উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর মর্গে প্রেরণ করে। ওই দিন সন্ধ্যায় পরিবার তার লাশ সনাক্ত করে। এরপর ১৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে নিহত হাজী করিম উল্লাহর জানানা শেষে টেকনাফ পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়।

গত ২০২১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর স্ত্রী মুরশিদা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে। এরপর থেকে টেকনাফ মডেল থানার এসআই তারেক রহস্যময় এ মামলার তদন্ত কাজ শুরু করেন।

স্হানীয়রা জানিয়েছেন, হাজী করিম উল্লাহ ওই দিন রাতে নাস্তাসহকারে আপন মেয়ের ঘরে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মাঠ পাড়ায় দাওয়াতে অংশ নেন। সেখান থেকে অটোরিকশা যোগে ফেরার পথে খুনের শিকার হন। কিন্তু এ বিষয়টি প্রথম থেকেই ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করে হাজী করিম উল্লাহর স্ত্রী ও জামাতা। এ থেকে অনেকে সন্দেহের তীর ছুড়ে যে, এই খুনের মাস্টার মাইন্ড স্ত্রী ও মেয়ের জানাতা। কিন্তু স্ত্রী মামলার বাদী হওয়ায় পুলিশ সতর্কতার সঙ্গে মামলার তদন্ত কাজ পরিচালনা করে। তথ্য প্রযুক্তি, মোবাইল ট্র্যাকিং ইত্যাদির মাধ্যমে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা হাজী করিম উল্লাহর খুনের মাস্টার মাইন্ড হিসেবে আপন মেয়ের স্বামী মোহাম্মদ হোসেনকে চিহ্নিত করে।

পরে অবশ্য ওই দিন রাতে মেয়ের ঘরে দাওয়াতে অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করে তারা। অবশেষে মামলার প্রায় দেড় মাসের মধ্যে তাকে আটক করে রহস্যের দ্বার উন্মোচন করতে পারলেও মামলার চার্জশিট দিতে পারেনি থানা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা ।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আবদুল হালিম জানান, আলোচিত এই খুনের মামলাটি এক বছরেরও অধিক সময় ধরে টেকনাফ মডেল থানার একজন উপ-পরিদর্শক তদন্ত কার্যাক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন এবং ঘটনায় জড়িত বেশ কয়েকজনকে আটকও করেছে। মামলাটি আরো বেশি গভীর হলে তদন্তের জন্য সিআইডি-তে হস্তান্তর করা হয়েছে। “

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন