টেকনাফে কলেজ ছাত্র সাইফুল ‘সন্ত্রাসী’?

fec-image

টেকনাফে কলেজ পড়ুয়া ছাত্রকে সন্ত্রাসী সাজিয়ে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ঘটনাটি ঘটেছে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া গ্রামে।

জানা যায়, মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ন্যাচার পার্ক সংলগ্ন দমদমিয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম বন বিভাগের জমিতে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে। মুলত বনবিভাগের জমি হলেও পাহাড় থেকে অনেক দূরে প্রধান সড়ক ঘেষা জমিটি অবস্থিত। ২০১৭ তে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা এদেশে মানবিক কারণে আশ্রয় নিলে ওই নুরুল ইসলামের ধান চাষের জমির উপর নির্মাণ করা হয়েছে ২৭ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের (সিআইসি) অফিস। গরিব নুরুল ইসলাম কিছুই বলতে পারেনি। যেহেতু বন বিভাগের জমি ছিল। সরকার মানবিক হয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও অমানবিকভাবে জমিটি দখল করে ধান চাষকৃত জমির উপর নির্মাণ করা হয় সিআইসি অফিস। অসহায় ছিল হত দরিদ্র নুরুল ইসলাম। কিছুই বলতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে।

মঙ্গলবার সকাল ১১টারদিকে সিআইসির পাঠানো কর্মচারিদের কর্তৃক একই কায়দায় বাকি জমিটিও দখল করতে চাইলে তাতে নুরুল ইসলামের সাথে কলেজ পড়ুয়া ছাত্র সাইফুল করিমও মৌখিক ভাবে বাধা প্রদান করে। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ চলে যান। হঠাৎ দুপুরের দিকে এপিবিএন সদস্যদের উপস্থিতিতে জমিটির চারদিক ঘেরা দেওয়া হলে এতে আর কোন বাধা না দিয়ে অসহায় ভাবে নুরুল ইসলাম চেয়ে থাকেন। কাউকে আর কিছুই বলেনি। এক পর্যায়ে এপিবিএন সদস্যরা সাইফুল করিমকে আটক করে নিয়ে গিয়ে সিআইসি অফিসের কর্মচারিদের উপর হামলা, প্রাণনাশের হুমকি, অফিসের ঘেরা বেড়া ভাংচুর ও সন্ত্রাসী তকমা লাগিয়ে মিডিয়াতে প্রেসবিজ্ঞপ্তি প্রদান করে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ও ভাইরাল হয়ে উঠে। সাইফুলকে আটকের বিষয়ে হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিজেই ক্ষোভ প্রকাশ করে তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “সাইফুল সন্ত্রাসী না। সে আমার ইউনিয়নে ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও একটি কলেজে এইচএসসিতে অধ্যায়নরত নিয়মিত ছাত্র। পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ কে পুঁজি আজ তাকে সন্ত্রাসী বানানো হল। আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করছি তার প্রতি সদয় হবার জন্য কিন্তু তা করলো না। আমি আবারো বলছি সাইফুল সন্ত্রাসী না,আজকের এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই”

তাঁর এই লিখায় কমেন্ট করেছেন অর্ধশতকের অধিক শুভাকাঙ্খী। মনিরুল ইসলাম নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, “সাইফুল করিম কক্সবাজার জেলার ফলাফলের ক্ষেত্রে ২য় শীর্ষ কলেজ হ্নীলার মঈন উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজের এইচএসসি ১ম বর্ষের মেধাবী একজন ছাত্র।। যখন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ২৭ নং সি,আই,সির নির্দেশে তাদের দখলীয় জায়গা বেদখল করে অতর্কিত দখল করে যাচ্ছে নিশ্চয়ই ছেলেটি তাদের পরিবারের সম্পত্তি রক্ষার জন্য প্রতিবাদ করেছে। সেই বাধা তো আর সন্ত্রাসী কার্যক্রম হতে পারেনা। সরকারি চাকরি তো খুনি প্রদীপরা ও করেছে তাই বলে কি তার বিচার হচ্ছেনা এদেশে? তাই সকলের আইনের সম্মান প্রদর্শন করা উচিত।। একজন মেধাবী ছাত্রের উপর এহেন বর্বরোচিত তকমা লাগানোর আগে একটু ভেবে দেখুন না হলে সচেতন সমাজ প্রতিবাদ করতে কখনো পিছপা হবেনা। এই সাজানো ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। অবিলম্বে সাইফুল করিম নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হোক”।

এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন, যুব সমাজ, ছাত্র ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছেন।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর জাদিমুড়া বৃটিশ পাড়ার যুবক জাফর আলমকে হয়রানি, নাজেহাল এবং গ্রেফতারের প্রতিবাদে এক ঘন্টার বেশি কক্সবাজার -টেকনাফ প্রধান সড়কে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভের মুখে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় এপিবিএন।

সিআইসি খালিদ হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে জানান, সাইফুল করিম এসে অফিসের ঘেরা বেড়া ভাংচুর করেছে। সে অপরাধের কারণে তার বিরুদ্ধে পুলিশকে অভিযোগ করেছি। পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিয়েছে। এদিকে সাইফুলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেসব অপরাধের কোন প্রত্যক্ষদর্শী আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে, সিআইসি নেই বলেও জানান ।

এদিকে, এপিবিএন ইনচার্জ রাকিবুল ইসলাম জানান, ঘটনা সম্পর্কে আমরা কিছুই জানিনা। সিআইসির অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে আমরা আটক করে থানায় হস্তান্তর করেছি। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার এই কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে গিয়ে ভাংচুর, কর্মচারীদের গালমন্দ ও হুমকি-ধমকি দেওয়ার খবর পেয়ে সাইফুল করিমকে আটক করে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: টেকনাফে, সন্ত্রাসী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন