চাকমাদের দাবী ছাত্রলীগের নেতৃত্বে হামলা: বাঙালিদের দাবী ইয়াবা নিয়ে সংঘর্ষ

টেকনাফে ‘তুচ্ছ ঘটনায়’ বাঙালি-চাকমা সংঘর্ষ, আহত ৯

fec-image

কক্সবাজারের টেকনাফে ‘তুচ্ছ ঘটনায়’ বাঙালি ও চাকমা সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে; এতে উভয়পক্ষের অন্তত নয় জন আহত হয়। ঘটনার সময় বৌদ্ধ বিহারের একটি রান্নাঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

বিডি নিউজ ও ঢাকা পোস্টের বরাতে জানা গেছে, টেকনাফ থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান জানান, রোববার বিকালে উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কাটাখালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। চাকমা সম্প্রদায়ের আহতদের মধ্যে রয়েছেন কাটাখালীর কাজল চাকমার ছেলে মহলং চাকমা (৪৫), যতীন চাকমার ছেলে উনমদি চাকমা (৩০) ও মংপ্রুচিং চাকমা (২৫), থাইংচাহ্লা চাকমার মেয়ে মৃদুলী চাকমা (১৬), ক্যায়াচু অং চাকমার ছেলে আথুইমে চাকমা (৩০)।

বাঙালি আহতদের মধ্যে আছেন কাটাখালীর আব্দুল মজিদের ছেলে মোহাম্মদ মানিক (১৮), আব্দুর শুক্কুরের ছেলে রশিদ আমিন (১৭) ও মোহাম্মদ কালুর ছেলে মোহাম্মদ সেলিম (২৮)। ঘটনার ব্যাপারে একপক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ করছে।

স্থানীয়দের বরাতে ওসি হাফিজুর বলেন, একটি ‘তুচ্ছ ঘটনার’ জেরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা নিয়ে দুই পক্ষের কাছ থেকে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।

“চাকমা সম্প্রদায়ের দাবি, দুপুরে কাটাখালী চাকমা পল্লীতে ‘কাটাখালী অরণ্য বৌদ্ধ বিহারের’ নলকূপে কয়েকজন চাকমা তরুণী হাড়ি-পাতিল ও থালা ধোয়ার কাজ করছিলেন। এ সময় বৌদ্ধ বিহারটির পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় স্থানীয় কয়েকজন বাঙালি যুবক ওই তরুণীদের উত্ত্যক্ত করে।”

ওসি বলেন, এ নিয়ে ওই তরুণীদের শোর-চিৎকারে স্থানীয় কয়েকজন চাকমা যুবক ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর বাঙালি ও চাকমা যুবকদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

ওসি বলেন, পরে বিকালে এ ঘটনার জেরে বাঙালি যুবকরা বৌদ্ধ বিহারটির ঝুপড়ির আদলের তৈরি রান্নাঘরে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর চালায়। এ সময় হামলাকারীদের বাধা দিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে চাকমা লোকজনের উপর হামলা চালায়।

অন্যদিকে বাঙালিদের বরাতি হাফিজুর বলেন, দুপুরে নিজেদের ধানক্ষেত থেকে বাড়ি ফেরার পথে কাটাখালী চাকমা পল্লী এলাকায় এক বাঙালি যুবককে স্থানীয় ২/৩ জন চাকমা যুবক থামায়। এ সময় তার কাছে ইয়াবা ট্যাবলেট থাকার দাবি করে দেহ তল্লাশি শুরু করে।

“এতে তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। এক পর্যায়ে সেখানে আরও ২/৩ জন বাঙালি যুবক উপস্থিত হলে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।” পরে বিকালে এ ঘটনার জেরে চাকমা লোকজন সংগঠিত হয়ে বাঙালিদের উপর হামলা চালায় বলে ওসি জানান।

হাফিজুর আরও বলেন, আহতদের মধ্যে চাকমা সম্প্রদায়ের ৪ জন লোক কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

ঘটনার ব্যাপারে কাটাখালী চাকমা পল্লীর কিন্তুনু চাকমার মেয়ে পপি চাকমা বলেন, কয়েকজন চাকমা তরুণী স্থানীয় বৌদ্ধ বিহারের নলকূপে থালা ও হাড়ি-পাতিল ধোয়ার কাজ করছিল। এসময় বৌদ্ধ বিহারের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কয়েকজন বাঙালি যুবক তাদের উত্ত্যক্ত করে। এতে চাকমা তরুণীরা প্রতিবাদ জানালে বাঙালি যুবকরা তাদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়।

“পরে খবর পেয়ে স্থানীয় কয়েকজন চাকমা যুবক ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বাঙালি যুবকরা হামলা চালায়। বিকালে এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ৩০/৪০ বাঙালি যুবক সংঘবদ্ধ হয়ে বৌদ্ধ বিহার ও চাকমা পল্লীতে হামলা চালায়। এসময় হামলাকারিরা বৌদ্ধ বিহারের রান্নাঘর ভাংচুর চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে।”

উপজাতী তরুণীকে ইভটিজিং করাকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ে বৌদ্ধবিহারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন ১৫ জন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারী-পুরুষ। রোববার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় হোয়াইক্যং ইউপির কাটাখালী ১নং ওয়ার্ডের ‘অরণ্য বৌদ্ধ বিহার’-এ হামলার ঘটনা ঘটে।

ঢাকা পোস্ট জানিয়েছে, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার লোকজনের অভিযোগ, এ হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন স্থানীয় ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল সম্রাটসহ ২০ জন।

পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের কাটাখালী চাকমাপল্লিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তরুণীকে ইভটিজিং করা নিয়ে বিচারে বসে বিতর্কিত ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল সম্রাট ও তার ভাই কায়সার। এ সময় নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাদের ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে তাদের মারধর ও অরণ্য বৌদ্ধবিহারে আগুন ধরিয়ে দেন বলে অভিযোগ করা হয়।

অরণ্য বৌদ্ধবিহারের কর্মকর্তা অন্তর চাকমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছাত্রলীগ নেতা তোফায়েল ও তার ভাই কায়সার বিচারে এসেছিলেন। সেখানে কথা-কাটাকাটি নিয়ে তারা আমাদের বিহারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে হামলা চালিয়ে আমাদের ১৫ নারী-পুরুষকে আহত করেছেন।

হামলার বিষয়টি স্বীকার করে ১ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল সম্রাট বলেন, বিচারে কথা-কাটাকাটি নিয়ে উপজাতীদের মারধর করা হয়েছে। তবে বিহারে অগ্নিসংযোগের বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করেন এ ছাত্রলীগ নেতা।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। সেখানে কিছু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষকে মারধর করা হয়েছে। বাকিটা আমি অবগত নই।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী বলেন, মূলত ইভটিজিংকে কেন্দ্র করে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। যেখানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, সেটা বৌদ্ধবিহারের একটি অংশ। তবে কারা অগ্নিসংযোগ করেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম মুন্না বলেন, যে তোফায়েলের কথা বলা হচ্ছে, তাকে আমি চিনি না। সে যে কমিটিতে রয়েছে, সেটি অবৈধ। হোয়াইক্যংয়ে গ্রুপিং আছে, রবি ও রুহুল আমিনের কমিটি অবৈধ ঘোষণা করা হয় আরও আগে। তোফায়েলসহ যাদের নাম এসেছে, তারা ছাত্রলীগের কেউ নয় বলে দাবি করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: টেকনাফ, বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন