parbattanews

টেকনাফে মালয়েশিয়া মানবপাচার সংক্রান্ত ঘটনায় বসতভিটা দখল

মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ প্রতিনিধি:
টেকনাফে মালয়েশিয়া মানবপাচার সংক্রান্ত ঘটনায় সামাজিক নৈরাজ্য বেড়েই চলছে। টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে দালাল চক্রের প্রলোভনে পড়ে মালয়েশিয়া পাচার হওয়া অথবা রঙ্গিন স্বপ্নে বিভোর হয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় অনেকে স্বইচ্ছায় মালয়েশিয়া পাড়ি দিয়েছিল।

এদের মধ্যে অনেকে চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে স্বপ্নের মালয়েশিয়া পৌঁছতে পারলেও অনেকের ভাগ্যে নেমে আসে করুণ পরিণতি। আবার অনেকে সেই ভাগ্য যাত্রাই নিখোঁজ হয়ে স্বজনদের কান্না আর দীর্ঘশ্বাসকে শুধু দীর্ঘায়িতই করেছে।

এমনিভাবে আড়াই মাসে পূর্বে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়া পাড়ি দিয়েছিল টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ছোট হাবির পাড়া এলাকার দুই যুবক কালা মিয়ার পুত্র রহিম উল্লাহ(২০) ও মোঃ হোসেনের পুত্র নুরুল আমিন (১৯)।

এদের মধ্যে নুরুল আমিন মালয়েশিয়া পৌঁছলেও এখনো পর্যন্ত হদিস নেই কালা মিয়ার পুত্র রহিম উল্লাহর।

তাদের পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বন্দুকযুদ্ধে নিহত শীর্ষ মানব পাচারকারী উখিয়া উপজেলার সোনার পাড়া এলাকার জাফর মাঝির মাধ্যমে টেকনাফের ঐ দুই যুবক মালয়েশিয়া পাড়ি দিয়েছিল। জানা গেছে, নুরুল আমিনের মাতা নুর নাহার ও রুহুল আমিনের পিতা কালা মিয়া তাদের দুই সন্তানকে সোনার পাড়া এলাকায় গিয়ে দালালের হাতে তুলে দেয়।

পরবর্তীতে তারা থাইল্যান্ডে পৌঁছলে দালাল চক্র পরিবারের কাছে খবর দেয়। এসময় নুরুল আমিনের পিতা মালয়েশিয়ায় থাকা মোঃ হোসেন দালালদের টাকা দুই লক্ষ টাকা পরিশোধ করে ছেলেকে মালয়েশিয়া নিয়ে যায়। অপরদিকে রুহুল আমিনের পরিবারের পক্ষ থেকে দালালদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় ছেলেকে উদ্ধার করতে পারেনি। এরপর থেকে রুহুল আমিনের কোন সন্ধান জানেনা পরিবার।

এদিকে রুহুল আমিনকে দালাল চক্রের হাত থেকে উদ্ধার করতে না পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে সপ্তাহ খানেক পূর্বে মালয়েশিয়া যাওয়া অপর যুবক নুরুল আমিনের পৈত্রিক বসত ভিটা ও ঘর বাড়ি দখল করে নেয় কালা মিয়ার পরিবার। তারা বসত ভিটা দখল করে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয় নুরুল আমিনের মাতা নুর নাহার ও তার সন্তানদের। সেই থেকে নুর নাহার পালিয়ে বেড়ালেও তার ছোট ছোট ৭ সন্তান আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

কালা মিয়ার পরিবারের অভিযোগ নুরুল আমিনের মা নুর নাহার তার সন্তানের সাথে রুহুল আমিনকে মালয়েশিয়া যেতে প্ররোচিত করেছিল। তবে নুর নাহার জানায়, তারা উভয়ে স্বইচ্ছায় তাদের সন্তানদের সোনার পাড়ার দালাল জাফরের মাধ্যমে মালয়েশিয়া পাঠিয়েছিল। রুহুল আমিনের পিতা দালালদের টাকা দিতে না পেরে তার কাছ থেকে দুই লক্ষ টাকা দাবি করছেন। নুর নাহার জানায় তার স্বামী মালয়েশিয়া গেলেও তাদের পরিবারে নুন আনতে পানতা ফুরায় তিনি দুই লাখ টাকা কিভাবে দেবেন?

সরেজমিন পরিদর্শনে ছোট হাবির পাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রুহুল আমিনের মা পুত্রের হদিস না পেয়ে ক্রন্দন করতে করতে বলছেন মাসে মাসে ভালো বেতনের চাকরির আশ্বাস দেওয়ায় ছেলেকে দালালদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। এছাড়া ছেলের হদিস পেলে নুর নাহারের বসত ভিটার দখল ছেড়ে দেবেন বলেও জানান। ওদিকে কালা মিয়ার একই সীমানায় নুর নাহারের বসত ঝুপড়ি বাড়িটি ছিল তালাবদ্ধ। তার সন্তানরা পার্শ্ববর্তী আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান করছিল।

এব্যাপারে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার হামজালালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালা মিয়ার এক ছেলে নিখোঁজ থাকা ও নুর নাহারের বসত ভিটা দখলের সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

Exit mobile version