টেকনাফে লবণ মাঠের ব্যবহৃত পলিথিন বিক্রি জমজমাট

siddek teknaf news 19-05-2013
মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান,টেকনাফ : 
টেকনাফে  লবণ মাঠের  ব্যবহৃত পলিথিন বিক্রি জমজমাট  চলছে। হালকা মাঝারী কয়েক পশলা বৃষ্টি হতে না হতেই টেকনাফের হাট বাজার গুলোতে “গরীবের ছাউনী ” হিসাবে পরিচিত পলিথিন বিকিকিনি জমজমাট ভাবে শুরু হয়েছে। ছাউনীতে ব্যবহৃত ওমপাতা ও বাঁশের বাজারে দামে আগুন জ্বলছে। টেকনাফ, হ্নীলা, শাহপরীরদ্বীপ, হোয়াইক্যং, সাবরাংসহ প্রত্যেক স্থানে বিশেষতঃ হ্নীলা ও টেকনাফে সিন্ডিকেট বাণিজ্যের কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছে ওমপাতা ও বাঁশ। বর্ষাকাল অতি নিকটে। যেভাবেই হউক মাথা গোঁজার স্থানে আবশ্যিক ভাবে ছাউনী দিতে হবে। খেটে খাওয়া শ্রমিক, অসহায় দিন মজুরসহ নিম্ম আয়ের ও অভাবী শ্রেণীর মানুষ নিরুপায় হয়ে বিকল্প ছাউনী হিসাবে লবণ মাঠে ব্যবহৃত পলিথিন বা ত্রিপলের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। টেকনাফের হাট বাজারে বর্তমানে এসব পলিথিন বা ত্রিপল বেচা কেনার ধুম পড়েছে। বিকিকিনি হচ্ছেও প্রচুর। সহজলভ্য হওয়ায় এর কদরও বাড়ছে। এমনকি প্রতিদিনই পলিথিন বা ত্রিপল কিনতে উদয়াস্ত মহিলাসহ ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়। জানা যায়- আধুনিক পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদনে পুরু শক্ত এবং সাইজে বড় এসব পলিথিন(রং কাল) মাঠে ব্যবহার করে লবণ চাষীরা। বর্তমানে লবণ উৎপাদন মৌসুম আর নেই। পুরোপুরিই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। লবণ চাষীরা মাঠে ব্যবহৃত পলিথিন ধুয়ে না ধুয়ে ভাঁজ করে হাট বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে আসে। আবার এসব বিক্রির নির্ধারিত কোন স্থান নেই। প্রধান সড়কের পাশে, যেকোন মার্কেটের সামনে, জনসমাগম মোড়ে স্তুপ করে রাখে। ‘গরীবের ছাউনী’ হিসাবে পরিচিতি লাভ করায় কেউ তাদের বাধাও দেয়না। হোয়াইক্যং, হ্নীলা, টেকনাফ, সাবরাং, নয়াপাড়া, শাহপরীরদ্বীপ, শামলাপুর বাজার এবং ষ্টেশনসহ বিভিন্ন হাট বাজারে প্রত্যেক দিনই এই পলিথিন বেচা-কেনা হয়। ৮ হাত প্রস্থ ২০/২২ হাত লম্বা একটা পলিথিন সাড়ে তিনশত থেকে ৫০০ টাকায় পর্যন্ত বেচাকেনা হয়। ফুটো থাকলে অবশ্য দামও কমে যায়। অনেক মহিলাাকেও দেখা গেছে ছাউনীর জন্য এই পলিথিন কিনতে । পছন্দ হলে ভাঁজ করে সুতলি দিয়ে বেঁধে রিক্সায় করে সহজে বাড়ী নিয়ে যেতে পারে। বাঁশ ও ওমপাতার মতো বাড়তি পরিবহণ খরচ লাগেনা। ছাউনী হিসাবে ব্যবহারও তুলনামূলক সহজ। পলিথিন ছাউনীর কাজে ব্যবহার স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্মত কিনা, টেকসই হবে কিনা, কোন ধরণের ক্ষতির আশংকা বা সম্ভাবনা আছে কিনা এনিয়ে সাধারণ গরীব মানুষের ভাবনা এবং মাথা ব্যথা নেই। কম খরচে মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেই হল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়- ছাউনী হিসাবে পাকা ছাদ ও ঢেউটিনের ব্যবহার অতি সাম্প্রতিক। আবহমান কাল থেকেই ছাউনী হিসাবে ওমপাতা ও বাঁশের ব্যবহার চলে আসছে। তাছাড়া এসব গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যও বটে। কিন্তু ওমপাতা ও বাঁশের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় গরীব লোকেরা নাড়া (ধান কেটে ফেলার পর নিচের শক্ত অংশ), বেরমী (প্যারাবনে গজানো এক প্রকার খড়), শন এবং মুচপাতা (বনের এক প্রকার গাছের গোল গোল পাতা) দিয়ে ঘরের ছাউনী হিসাবে ব্যবহার করে আসছে। উপরোক্ত ৪ প্রকারের উপকরণ বর্তমানে সহজে পাওয়া যায়না। এখন লবণ মাঠে ব্যবহৃত পলিথিন সে স্থান দখল করে নিয়েছে। উল্লেখ্য, টেকনাফে ১০০ টি বাঁশ বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ম ৪ হাজার ২০০ টাকায়। গত বছর ছিল ৩ হাজার ২০০ টাকা। এবছর প্রতি শ’তে ১০০০ টাকা করে দাম বেড়েছে। যে ওমপাতা গত বছর সাড়ে ৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা বেচা কেনা হয়েছিল, এখন তা সর্বনিম্ম ৬ হাজার টাকা। এভাবে ছাউনীতে ব্যবহৃত প্রত্যেক উপকরণের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন