টেকনাফে সুশীলন এনজিও সংস্থায় জাল সনদে ৬০ কর্মী নিয়োগের অভিযোগ
টেকনাফ প্রতিনিধি:
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)’র অর্থায়নে পরিচালিত হতদরিদ্র পরিবারের দারিদ্র বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টিমান বৃদ্ধির চাহিদা মেটাতে বাস্তবায়িত সাতক্ষীরা জেলার পটুয়াখালীর দশমিনার সুশীলন এনজিও সংস্থার বিরুদ্ধে টেকনাফ উপজেলায় কাজের শুরুতেই নারী চাকরি প্রার্থীদের যৌন হয়রানিসহ অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অগ্রানাইজার (সিডিও) পদে ৬০ জনকে ভূয়া ও জাল সনদ দিয়ে নিয়োগ, তাদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ গ্রহণ, হতদরিদ্র উপকারভোগীদের নাম কর্তন করে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫হাজার টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করে নাম অন্তর্ভুক্তি ও নিয়োগপত্রের মূলকপি না দেওয়া, স্থায়ী নিয়োগ না দিয়ে কর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহারসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে (ইএফএসএন)প্রকল্পের প্রজেক্ট কোট্রিনেটর নুরুল ইসলাম ও এডমিন সঞ্জয়’র বিরুদ্ধে। এছাড়া স্থানীয়দের বাদ দিয়ে বহিরাগত লোকজন এনে কাজ পরিচালনা, যৌন প্রস্তাবে রাজি না হলে চাকরিতে নিয়োগ না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সংস্থারটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জেলা প্রশাসনের নির্দেশ স্থানীয়দের নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও এই এনজিও সংস্থার কতিপয় কর্মকর্তারা লোভে বশিভুত হয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে উত্তরবঙ্গের ভাই-বোন থেকে শুরু করে শালক শালিকা ও আত্মীয় স্বজন এনে জাল সনদ দিয়ে চাকরিতে নিয়োগ দিচ্ছে। ফলে টেকনাফে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার শিক্ষিত যোগ্য যুবক যুবতিরা চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি স্থানীয়দের খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টির ঘাটতি পূরণে জরিপ চালিয়ে পুরো উপজেলার উপকারভোগী চিহ্নিত করেন এবং সুশীলন নামে এনজিওকে কাজটি দেন। কিন্তু তারা বিভিন্ন ধরণের অনিয়ম করে কাজটি পরিচালনা করেছেন।
বর্তমানে এ সংস্থায় সিডিও পদে যারা কর্মরত আছেন তারমধ্যে ৬০জন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হতে পারেনি। তারাই এখানে জাল সনদ দিয়ে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অগ্রানাইজার (সিডিও) পদে নিয়োগ পেয়েছেন শাহপরীরদ্বীপের বাজারপাড়া হাসিনা, ডেইলপাড়ার রাজিদা, সাবরাংয়ের ফাতেমা, সাবরাংয়ের নুর কায়দা, অলিয়াবাদের নুর নাহার ও শামছুর নাহার, ডেইলপাড়া শোভা রানী, লম্বরীর তসলিমা আক্তার, লেঙ্গুরবিলের শফিকা, রাজারছড়ার সাদিয়া, কচুবনিয়ার আরিফা, রোজিনা, নুর বেগম, ইয়াছমিন, কামরুন নাহার, ছলেমা, আমিনা, মর্জিনা, রোজিনাসহ ১২০জন প্রার্থীর মধ্যে প্রায় ৬০ জন জাল ও ভূয়া সনদ দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন।
শাহপরীরদ্বীপ থেকে চাকরি নিতে আসা সনজিদা বেগম নামে নারী প্রার্থী বলেন, ১২০জন সিডিও পদে চাকরি নিল, তার মধ্যে প্রায় ৬০ জনের জাল এবং ভূয়া সনদ এটা আমি চ্যলেঞ্জ করছি, তারা সুশীলন কর্মকর্তাদেরকে টাকা দিয়ে নিয়োগ পেয়েছে। আমাকে অন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আমি তাতে রাজি হয়নি। তাই আমাদের চাকরি হয়নি। ২য় শ্রেণীও পড়েনি তারা চাকরি পেয়েছে। আমরা কেন পেলাম না। কর্মকর্তারা জাল সনদ তৈরীর জন্য শিখিয়ে দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কম্পিউটার অপারেটর জানায়, সুশীলন এনজিওতে চাকরির জন্য কমপক্ষে ৩০ জনকে জাল সনদ বানিয়ে দিয়ে প্রচুর টাকা আয় করেছেন।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক ব্যক্তি জানায়, তার মাধ্যমে ২০জন নারী নিয়োগ পেয়েছেন, সে সনদগুলো কক্সবাজার থেকে তৈরি করে এনেছে। তাকে প্রথমে ২ হাজার টাকা দিয়েছে। বাকী টাকাসমূহ নিয়োগের প্রথম মাসের বেতন পাওয়ার পর তাকে প্রতিজন ৫ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বেতন পাওয়ার পর আর তার ফোন রিসিভ করছেন না জাল সনদ প্রদানকারী কর্মীরা। তাকে উল্টো কর্মীরা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। বিষয়টি সাংবাদিকদেরকে ফাঁস করে দেয় সংশ্লিষ্ট লোকজন এবং এব্যাপারে জনপ্রতিনিধিকেও বিচার দেয়। বিষয়টি নিয়ে টেকনাফে এখন রশি টানাটানি চলছে।
হ্নীলার দেলোয়ার হোসেন নামে এক শিক্ষিত যুবক অভিযোগ করে বলেন, দেশী- বিদেশী এনজিও সংস্থা সরকারের নির্দেশ অমান্য করে রংপুর, বরিশাল, কুষ্টিয়া, নাটোর, খুলনা ও রাজশাহী থেকে লোক এনে চাকরি দিচ্ছে এবং সুশীলন এনজিও সংস্থার কতিপয় কর্মকর্তা নিয়োগ বানিজ্য করছে। টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হয়। যারা টাকা দিতে পারে তারাই কেবল চাকরি পায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেকনাফের এক গণ্যমান্য ব্যক্তি বলেন, সুশীলন সংস্থার কার্যক্রমের ব্যাপারে তথ্যপাত্ত নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিও বুর্যে ও বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি ও দুদক অফিস বরাবর লিখিত অভিযোগ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশীলনের প্রজেক্ট কোট্রিনেটর নুরুল ইসলাম সিডিও পদে ৬০ জনকে জাল সনদে নিয়োগ দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেনি এবং কর্মীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে বলেছেন তিনি মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা রবিউল হাসান জানায়, বিষয়টি এখনো আমার নজরে আসেনি, জাল সনদের ব্যাপারে সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।