টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ বেড়িবাঁধের কারণে নতুন করে আরো ২ গ্রাম প্লাবিত
মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান,টেকনাফ:
টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপের জলবায়ু পরিবর্তন ও আইলার কারণে ভেঙ্গে যাওয়া প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ গত চার বছরেও সংস্কার করা হয়নি। গতকাল ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে কোমর সমান পানিতে প্লাবিত হয়েছে শাহপরীরদ্বীপের বিভিন্ন এলাকা। এ কারণে হুমকিতে রয়েছে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ জানায়, বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে বাঁধ সংস্কার করা যাচ্ছে না। সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার উপকূলীয় সাবরাং ইউনিয়নে ৬৮ নম্বর ফোল্ডারের প্রায় তিন কিলোমিটার অরক্ষিত বেড়িবাঁধ সংস্কারের অভাবে পড়ে আছে। বিশেষ করে, শাহপরীরদ্বীপের পশ্চিমপাড়া এলাকার তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ও সংশ্লিষ্ট এলাকার ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি সাগরে বিলীন হয়ে গেছে।
অপর দিকে পার্শ্ববর্তী দক্ষিণপাড়া, ডাঙ্গারপাড়া ও উত্তরপাড়ার আরও সাড়ে ৬ শতাধিক ঘরবাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে। এ ছাড়া নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন জালিয়াপাড়া, পশ্চিম-উত্তরপাড়া, মাঝরপাড়া, ডেইলপাড়া, ক্যাম্পপাড়া, বিলপাড়া, হারিয়াখালী, কচুবনিয়া ও লাফার ঘোনা এলাকার আরও প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর থেকে কোনো ধরনের মেরামত না হওয়ায় জোয়ারের তোড়ে টেকনাফ থেকে শাহপরীরদ্বীপ আলাদা হয়ে যায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার চার বছর পার হলেও এটি মেরামত না হওয়ায় যেকোনো সংকেতের খবর শুনে সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন আতঙ্ক গ্রস্ত হয়ে পড়ে। সাবরাং ইউপির চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান জানান, শাহপরীরদ্বীপের বেড়িবাঁধের প্রায় দুই কিলোমিটার জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি পশ্চিমপাড়ার অংশের দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সাগরে বিলীন হয়ে গেছে।
জরাজীর্ণ অংশের সংস্কার না হওয়ায় দুর্যোগের হুমকিতে আছে এই এলাকার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। জরুরী ভিত্তিতে এটি সংস্কার না করলে বর্ষা মৌসুমে এ এলাকায় কেউ বসবাস করতে পারবে না। গতকাল শনিবার উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ এলাকায় জোয়ারের সময় বাঁধ ভেঙে ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এই বাঁধের দুটি স্থানে প্রায় ৩ কিলোমিটার বিলীন হয়েছে। বিগত ৪ বছর ধরে জোয়ারের পানি ঢুকে লবণের মাঠসহ লোকালয় প্ল¬াবিত হচ্ছে। সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপের ২ হাজারের বেশি মানুষ জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে।
এ ছাড়া পূর্ণিমার প্রভাবে নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গতকাল শনিবার জোয়ারের সময় প্লাবিত হয়েছে এই ইউনিয়নের অন্তত ৫টি গ্রাম। এতে এসব এলাকার পানিবন্দী ২ হাজারের বেশি মানুষ এখন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। গতকাল শনিবার সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জোয়ারের পানিতে পুরো গ্রাম ডুবে গেছে। গ্রামের বেশ কয়েকজন জানান, বিধ্বস্ত বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। গোলাপাড়া গ্রামের জাফর বলেন, বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে অনেক ক্ষতি করছে”। বাঁধ ভাইঙ্গা পানি ঢুকছে। পানি নামছে না। এরপর জোয়ারের সময় পানি আরও বেশি উঠছে। ‘অ্যারা হড়ে যাইয়ূম’। এত জ্বালা সইত ন পারির হষ্ট কি ন ফুরাইব ?’ প্রায় ২ হাজার পরিবার ৩ দিন ধরে পানিবন্দী। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের সদস্যরা ৩ দিনেও তেমন ত্রাণ না পাওয়ায় অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার সকালে নদ-নদীতে বিপদ সীমার ওপর দিয়ে ৩ দশমিক ১১ সেন্টিমিটার উচ্চতার পানি হয়। এর আগের দিন ওই বাঁধের আরও দুটি স্থান জোয়ারের চাপে বিলীন হয়ে যায়। বাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে পানি ঢুকে পড়ছে আশপাশের গ্রামগুলোতে। এতে চারটি গ্রামের দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব গ্রামের বাসিন্দাদের ঘরে হাঁটুপানি।
শাহপরীরদ্বীপের সমাজ সেবক মাষ্টার জাহেদ বলেন- ‘বজ্রমেঘের প্রভাব আর পূর্ণিমার জো-এর কারণে পানির চাপ একটু বেশি। এর ফলে নিম্নাঞ্চল কয়েক দফা প্লাবিত হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, আইলায় ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় হুমকিতে আছে এই এলাকার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। তাই জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে। কক্সবাজার পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মাঈন উদ্দিন আহমদ বলেন, টেকনাফ উপজেলায় তিন কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত। ওই এলাকা দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে।
বাঁধ সংস্কার করা না হলে এসব মানুষ দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার কবলে পড়বে। এ ইউনিয়নের প্রায় দুই কিলোমিটার বাঁধ সংস্কারের জন্য ১০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে পরিবেশ ও বন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকে একটি আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বরাদ্দ পেলেই সিসি ব্লক দিয়ে স্থায়ীভাবে এ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে।