টেকনাফ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে মৃত ব্যক্তির নামে দলিল সম্পাদন
টেকনাফ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত ও ভূয়া দাতা সাজিয়ে একটি দলিল সম্পাদনের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের লেঙ্গুর বিল মৌজার হাবিরছড়া এলাকার ৭৩ শতক জমি নিয়ে। এ ঘটনায় উক্ত জমি হাতিয়ে নিয়েছে একটি জালিয়াতি সিন্ডিকেট।
জানা যায়, বিগত ২০১১ সনের ৩ অক্টোবর টেকনাফ সাব রেজিস্ট্রি অফিসের ২৮১৩ নং দলিলমূলে আলী আহমদ ও আমির নেছা হতে লেঙ্গুরবিল মৌজার বি, এস ৯২৭ নং খতিয়ানের ৭৩ শতক জমি মৌঃ আবদুল হামিদ ও মোঃ হোছানই ক্রয় করে। উক্ত দলিলটি জাহাজপুরা এলাকার দলিল লেখক সৈয়দুর রহমান সৃজন করেছেন। যার সনদ নং- ৬৬/০৫। এতে মৃত আলী আহমদকে জীবিত ও প্রকৃত আমির নেছাকে গোপন রেখে তার স্থলে অপর ব্যক্তিদের দিয়ে উক্ত দলিলটি রেজিস্ট্রি সম্পাদন করেছে জালিয়াতি সিন্ডিকেট।
বিষয়টি গোপনে রেজিস্ট্রি সম্পাদন করা হলেও দীর্ঘদিন পর উক্ত ক্রয়কৃত জমি দখলের চেষ্টা করলে মৃত আলী আহমদের ওয়ারিশগণের গোচরে আসে এবং এতে বাধা সৃষ্টি করে। বর্তমানে জমিটি প্রকৃত আলী আহমদের ওয়ারীশগণের দখলে রয়েছে। এছাড়া যাদের দাতা বানিয়ে ছবি ও জম্ম নিবন্ধন ব্যবহার করা হয়েছে তাও ভূয়া। এধরনের জম্ম সনদ পাওয়া যায় নি। যাদের দাতা বানিয়ে রেজিস্ট্রি কার্য সম্পাদন করা হয়েছে তাদেরও কোন খোঁজ নেই।
এদিকে জমির প্রকৃত মালিক আলী আহমদ দীর্ঘকাল ধরে স্ব-পরিবারে আরব আমিরাত বসবাসরত অবস্থায় সেখানে তাঁর মৃত্যু ঘটে। আরব আমিরাত থেকে আলী আহমদের স্ত্রী আমির নেছা ও ছেলে মোঃ ইয়াছিন দেশে সফরে আসলে প্রকৃত ঘটনাটি জেনে যায়। এখন দলিল জালিয়াতি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে তিনি জানান।
তিনি আরো জানান, দলিল গ্রহীতা মৌঃ আবদুল হামিদ প্রকৃত জমির মালিক প্রবাসে থাকার সুযোগে ভূয়া দাতা সাজিয়ে দলিলটি সম্পাদন করিয়েছে। এভাবে শুধু একটি অভিযোগ নই। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কতিপয় কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দলিল সম্পাদনের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। এক শ্রেণির দালাল প্রকৃতির লোক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ভূয়া জম্ম নিবন্ধন ও আইডি কার্ড ব্যবহার করে দলিল সম্পাদন ও নামজারী সৃজন করে প্রকৃত জমির মালিকদের হয়রানী করে আসছে। কতিপয় দলিল লেখকদের যোগসাজসে এসব অপকর্ম হয়ে থাকে বলে জানা গেছে।
ইতিপূর্বেও এধরনে ঘটনা ঘটে থাকলেও দালাল সিন্ডিকেটসহ দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ওই সিন্ডিকেটগুলো আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এদিকে রেজিস্ট্রি অফিসের এক শ্রেণির কর্মচারীরা ওই দালালদের সাথে আতাঁত করে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে সম্পাদিত দলিলের পৃষ্টা বদল, ছবি বদলসহ বিভিন্ন প্রকারের অনিয়ম করারও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া প্রতিটি দলিল সম্পাদন করতে ঘুষ ছাড়া চলেইনা। শুধু সাব-রেজিস্ট্রারের জন্য প্রতি দলিলের পেছনে প্রতি লাখে ১২ শতাংশ হারে কেটে নেয়া হয় বলে জানা গেছে। এতে করে দুর্নীতির পাশাপাশি সাধারণ ক্রেতারা হয়রানির শিকার হচ্ছে।
এক শ্রেণির দলিল লেখকদের ভুলে ভরা দলিল সম্পাদনের কারণে নামজারী খতিয়ান সৃজনে আরও বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জমি ক্রেতাদের। এসব দালাল সিন্ডিকেট, দুর্নীতি সম্পৃক্ত কর্তা ব্যক্তি ও এসএসসি পাশ না করা ব্যক্তিদের যত্রতত্র সার্টিফিকেট প্রদানে কোন প্রকার ব্যবস্থা না নেয়ায় এখন সাব-রেজিস্ট্রার অফিসটি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এসব বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন টেকনাফের সচেতন মহল।
এদিকে জালিয়তির ব্যাপারে দলিল গ্রহীতা মৌঃ আবদুল হামিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এসব বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। স্থানীয় দালাল মোঃ হোছন ওরফে মাছনের মাধ্যমে জমিটি ক্রয় করা হয়েছে।
দলিল লিখক সৈয়দুর রহমান জানান, জমির দাতা ও গ্রহীতার সম্মতিতে আমি এ দলিল করেছি। কোন জমির মালিক আসল কি ভূয়া সেটা পরীক্ষা করবে সাবরেজিস্ট্রি অফিস, এখানে দলিল লেখকদের কোন দায়িত্ব নেই।
এব্যাপারে টেকনাফ সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা খন্দকার ফজলুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ভূয়া ব্যক্তি সেজে কেউ দলিল সম্পাদন করলে তা ঠেকানোর মতো তেমন কোন ব্যবস্থা রেজিস্ট্রি অফিসে নেই তবে প্রতারণার শিকার ব্যক্তি মামলা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে প্রতারণার জন্য শনাক্তকারী ও নকল মালিকদের বিরুদ্ধে ৭ বছর পর্যন্ত দণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া রেজিস্ট্রি অফিসের কমিশন বাণিজ্য ও দুর্নীতির কথা তিনি অস্বীকার করেন।