ট্রাক চাপায় নিহত ৫ সহোদরের পরোলৌকিক ক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন

fec-image

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়ায় চার দিন পূর্বে ঘটে য়াওয়া মর্মান্তিক ট্রাক চাপায় নিহত ৫ সহোদরের পরোলৌকিক ক্রিয়া সনাতন ধর্মানুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার সকালে নিহতের বাড়িতে ৫ সহোদর শিশু সন্তানেরা তাদের প্রয়াত বাবাদের পরোলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করেন। গত চৌদ্দদিন আগে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫ ভাইয়ের বাবা ডা. সুরেশ চন্দ্র শীল পরলোক গমন করেন।

গত মঙ্গলবার সুরেশ চন্দ্র শীলের সন্তানেরা তাদের বাবা’র শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের জন্য সনাতন ধর্মমতে সাত ছেলে ও এক মেয়ে ভোরবেলা ক্ষৌর কর্ম (মাথার চুল ফেলে দেওয়া) সম্পন্ন করতে মালুমঘাট হাসিনাপাড়ার তিন রাস্তার মন্দিরে যান। মন্দির থেকে ক্ষৌরকর্ম শেষে বাড়ি ফেরার পথে ওইদিন ভোর ৫টার দিকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার মালুমঘাট বাজার সংলগ্ন নার্সারি এলাকায় দ্রুতগামী একটি পিকআপ গাড়ির চাপায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে একই পরিবারের ৫ সহোদর নিহত হন। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডস্থ হাসিনা পাড়া এলাকার মৃত সুরেশ চন্দ্র শীলের ছেলে ডা. অনুপম শীল (৪৬), তার ভাই নিরুপম শীল (৪০), দীপক শীল (৩৫), চম্পক শীল (৩০)।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তাদের ভাই স্মরণ শীল (৩৬)। এসময় আহত হয়েছে আরো দুই ভাই এক বোন। তাদের মধ্যে রক্তিম শীল চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে আছে। নিহতদের বোন হীরা শীল স্থানীয় মালুমঘাট খ্রীষ্টান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে তার একটি পা কেটে ফেলা হয়েছে। সনাতন ধর্মের রীতিনীতি অনুসারে নিহত ৫ সহোদরের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করার দায়িত্ব পড়েছে অবুঝ শিশু সন্তানদের ওপরে। তার প্রেক্ষিতে নিহতদের শিশু সস্তানেরা তাদের প্রয়াত বাবার পরোলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করেন শুক্রবার সকালে।

পরোলৌকিক ক্রিয়া চলাকালে শুক্রবার সকালে নিহত ৫ সহোদরের পরিবারে দেখা গেছে,
সদ্য বিধবা শিশুদের দাদী মা মানু বালা শীল তার নিহত সন্তান অনুপম শীলের স্ত্রী পপি বালা শীল, নিরুপম শীলের স্ত্রী গীতা শীল, স্মরণ শীলের স্ত্রী কৃষ্ণা শীল, দীপক শীলের স্ত্রী পূজা শীল, চম্পক শীলের স্ত্রী দেবী শীলের সাথে অংশ নেন প্রয়াত অনুপম শীলের শিশু সন্তান অর্কশীল (৭), স্মরণ শীলের শিশু সন্তান অভি শীল (৪), দীপক শীলের শিশু পুত্র আয়ুশ (৬)। নিহতদের বিধবা মা ও পিতৃহারা শিশু সন্তানদের পরোলৌকিক ক্রিয়া সত্যিই বড় বেদনাময় ও হৃদয়বিদারক। নিহত ৫ সহোদরের এই শিশু সন্তানেরা এখনো জানেনা তাদের বাবারা এ ইহজগতে আর কোন দিন ফিরে আসবেনা।

সড়ক দুর্ঘটনার বেঁচে যাওয়া নিহত ৫ সহোদরের ছোট বোন মুন্নি শীল দাবি করেন, তাঁর বাবার শ্রাদ্ধের আগে সবকিছু নিঃশেষ হয়ে গেলো। জীবনে কোন দিন ভাবতে পারি নাই এতো ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটবে পরিবারে। ট্রাক চালক চাপা দেয়ার পর পুনরায় এসে চাপা না দিলে তাদের পরিবারের এমন ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতো না। এটা পরিকল্পিত ছাড়া কিছু নয়। ঘটনার ৪দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও হাইওয়ে পুলিশ আজো ঘাতক চালককে আটক করতে পারেনি। মহাসড়কের মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ (পরিদশর্ক) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাফায়েত হোসেন বলেন, ঘাতক ট্রাক চালককে আটক করার জন্য পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিচ্ছে। চালককে আটক করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন