parbattanews

ডাক্তার সংকটে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পানছড়িবাসী : নীরব প্রশাসন

 

শাহজাহান কবির সাজু, পানছড়ি প্রতিনিধি :

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সবচেয়ে দূর্গম উপজেলাটির নাম পানছড়ি। এই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো সাপের মতো এঁকে বেঁকে বয়ে গেছে সুদুর ভারত সীমন্তে। সীমান্ত এলাকার অজপাড়া গাঁয়ের অসুস্থ রোগীরা দশ/পনের/বিশ মাইল পায়ে হেঁটে পূনরায় চান্দের গাড়ীতে চড়ে পানছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে ডাক্তারের অভাবে শেষ পর্যন্ত ধারস্থ হয় অপচিকিৎসকদের কাছে। কেউবা আবার সহায় সম্বল বিক্রি করে চিকিৎসা সেবা নিতে যায় খাগাড়ছড়ি অথবা চট্টগ্রামে। প্রশাসনের দীর্ঘ দিনের নীরব ভুমিকায় হতাশ উপজেলাবাসী।

সীমান্ত ঘেঁষা এই পানছড়ি উপজেলার প্রায় তেষট্টি হাজার মানুষের স্বাস্থ্য সেবার কোন সু-ব্যবস্থা না থাকায় এলাকাতে অহরহ চলছে কবিরাজি, বৈদ্যালি ও ঝাঁড় ফুক জাতীয় অপচিকিৎসা। এসব অপচিকিৎসার ফলে কেউ প্রাণ হারাচ্ছে অকালে, কেউ বরণ করে নিচ্ছে পঙ্গুত্ব কেউবা হচ্ছে মানসিক ভারসাম্যহীন। যার একমাত্র কারণ উপযুক্ত স্বাস্থ্য সেবার অভাব। সরকার যতই বলুক না কেন স্বাস্থ্য সেবা ঘরে ঘরে পৌছে দিচ্ছে তা কিন্তু পানছড়িবাসী মানতে নারাজ। পানছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের পদ রয়েছে তেরটি। বর্তমানে নামে মাত্র ডাক্তার রয়েছে দুই জন। একজন ডাঃ মতিউর রহমান অন্যজন এডহকে নিয়োগ পাওয়া ডাঃ বিদুর্শী চাকমা। ডাক্তার শূণ্যতার ফলে বিদুর্শী চাকমা আরএমও দায়িত্বে থাকায় প্রায়ই তাকে থাকতে হয় অফিসিয়াল কাজ নিয়ে ব্যস্ত। তাই অনেকেই দু:খের সাথে বলে, পানছড়ির তেষট্টি হাজার মানুষ উপরওয়ালার দয়ায় বেঁচে আছে।

পানছড়ি হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, একজন জ্ঞাইনী, এ্যানেস্থিওলজি একজন, মেডিসিন একজন, সার্জারী একজন, মেডিকেল অফিসার ২ জন, পাঁচটি ইউনিয়নে পাঁচ জন এম.বি.বি.এস  ও একজন স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও সরকারের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে সবগুলো পদই শূণ্য হয়ে আছে। যার পরিণতি ভোগ করছে উপজেলার তেষট্টি হাজার ভুক্তভোগী। দীর্ঘ সাত বছর যাবত কোন জ্ঞাইনী না থাকায় মহিলারা পাচ্ছে না সঠিক চিকিৎসা সেবা। সার্জারী ও মেরামতের অভাবে নষ্ট হচ্ছে প্রায় ষাট লক্ষ টাকা দামের এক্সরে মেশিন ও  সিজার  অপারেশনের মূল্যবান যন্ত্রপাতি।

বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়, পানছড়িতে কোন ডাক্তার  নিয়োগ দিলেও কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার আগেই বড় হুজুরের দয়ায় অন্যত্র বদলীর আদেশ নিয়ে চলে যায়। এভাবেই দীর্ঘদিন চলছে পানছড়ির স্বাস্থ্য সেবার এ চরম দুরাবস্থা। তাছাড়া আবাসিক ভবনের অবস্থাও বেশ নাজুক, অল্প বৃষ্টিতেই দক্ষিনের আবাসন ভবনেটিতে পানি ডুকে, তাছাড়া নেই কোন পানির ব্যবস্থা। দিনে দু’তিন দফা অন্যত্র থেকে পানি এনে দো’তলা ও তিন তলায় উঠিয়ে গোসল ও রান্না- বান্নার কাজ সেরে নিতে হয়। তাছাড়া ছাদের উপরে ভেঙ্গে চুরে পড়ে আছে পানির ট্যাংকিগুলো, পরগাছা ও শ্যাওলা জমে দেয়ালের রং হয়ে গেছে বিবর্ণ। যে কোন মুহুর্তে হতে পারে বিষধর সাপের আক্রমন। হাসপাতালের কর্মরত নার্সরাই এই নাজুক ভবনটিতে থাকে। অথচ সরকার মাস শেষে ঠিকই তাদের বেতন থেকে কেটে নিচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা। তাছাড়া ম্যানটেইনেন্স বিভাগ প্রতি বছর কোন ধরণের সংস্কার কাজ না করেই ভুয়া বিল বানিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়।

গত তিন/চার মাস আগেও ভবনগুলিতে নামে মাত্র রংঙের কাজ করে মোট অংকের বিল বানিয়েছে ম্যানটেনেইন্স বিভাগ। অথচ অর্ধ বছর পার না হতেই দেয়ালগুলো হয়ে পড়েছে বেরং। পানছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই করুণ হালের বিষয়ে খাগড়াছড়ি সিভিল সার্জন নারায়ন চন্দ্র দাস জানান, কিছু দিনের মধ্যে নতুন ডাক্তার কর্মস্থলে যোগ দিবে এবং সহসাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন সমস্যাদিও সমাধান করা হবে। পানছড়ির অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন কোটা ওয়ারী ডাক্তার দেওয়া হলে ভুক্তভোগীরা কিছুটা হলেও চিকিৎসা সেবা পাবে তাই জরুরী ভিত্তিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন।

Exit mobile version