তাইন্দং সহিংসতাকে পুঁজি করে পাহাড়ীরা বিদেশী প্রভুদের অনুকম্পা পেতে তৎপরতা চালাচ্ছে

13591_556015647789233_286866143_n

মুজিবুর রহমান ভুইয়া, তাইন্দং (মাটিরাঙ্গা) থেকে ফিরে :

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং সহিংসতাকে পুঁজি করে বিদেশী প্রভুদের অনুকম্পা পেতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে সেখানকার পাহাড়ীরা। বাঙালীদের অভিযোগ, নিজেদের ঘরে নিজেরাই অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়ে দেশী-বিদেশী মিডিয়ায় বাঙ্গালী বিরোধী প্রচারনা চালিয়ে স্বাধীন জুম্মল্যান্ড প্রতিষ্ঠার যে নগ্ন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে তা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সে প্রশ্ন এখন বড় হয়ে দাড়িয়েছে।

দেশের এক-দশমাংশ পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালী জনগোষ্ঠি যুগ যুগ ধরে এখানে বঞ্চিত হয়ে আসছে। এখানে তাদের মৌলিক মানবাধিকার বলতে কিছুই নেই। প্রতিনিয়ত পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে বাঙ্গালীদের হত্যা, গুমসহ অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে। খনিজ সম্পদে ভরপুর পার্বত্য চট্টগ্রামকে তাদের স্বপ্নের স্বাধীন জুম্মল্যান্ড প্রতিষ্ঠার সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তারা নিজেরা সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে তার দায় বাঙ্গালীদের ঘাড়ে চাপানোর এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছে। তারই অংশ হিসেবে কিছু বিদেশী প্রভুদের খুশী করতে, তাদের অনুকম্পা পেতে এবং মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তাইন্দং সহিংসতাকে পুঁজি করে নতুন করে পাহাড়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে তারা।

গত ৩ আগষ্ট শনিবার দুপুরের দিকে এক মোটরসাইকেল চালককে অপহরনের জের ধরে জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার সীমান্তঘেঁষা তাইন্দংয়ের পাহাড়ী পল্লীতে অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর কোন ধরনের হুমকি ছাড়াই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া এবং কয়েকটি পাড়ার পাহাড়ীদের পার্শ্ববর্তী পানছড়ি উপজেলায় আশ্রয় নেয়ার ঘটনা থেকে সহজেই বাঙ্গালী বিরোধী ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যায়। কারণ দুই-তিনটি পাড়াতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় পাহাড়ী দুই জনপ্রতিনিধিসহ কারবারীদের নেতৃত্বে মুহুর্তের মধ্যেই পাহাড়ীরা নিজ নিজ বাড়ি-ঘর ছেড়ে চলে যায়।

ঘটনার পরদিন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার ভয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে চলে যাওয়া পাহাড়ীদের নিজ নিজ বসত ঘরে ফিরে আসার জন্য যা যা করেছেন তা সহজেই অনুমেয়। তিনি সীমান্তরেখায় গিয়ে পাহাড়ীদের সাথে কথা বলে তাদের পুনর্বাসন, ক্ষতিপুরণ ও দোষীদের বিচারের আশ্বাস দিলেও এর পুর্বে একাধিক বাঙ্গালী গ্রামে সশস্ত্র পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের অব্যাহত চাঁদা দাবীতে হামলা ও গুলিবর্ষনের ঘটনায় টু-শব্দটিও করেননি। জাতীয় পতাকাবাহী গাড়িতে চড়ে সরকারী খরচে তিনি একটি বিশেষ গোষ্ঠির পক্ষে কাজ করবেন তা কোন সচেতন মানুষের কাম্য হতে পারেনা। কিন্তু পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী প্রমাণ করলেন তিনি পাহাড়ীদের মন্ত্রী বাঙালীদের নয়।

১৯৫৫ সাল বা তার আগে থেকে মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দংয়ে বাঙ্গালীদের বসবাস শুরু হলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তাইন্দংয়ে অনুপ্রবেশকারী পাহাড়ীরা বাঙ্গালীদের বহিরাগত দাবী করে তাদের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে দাবী করেছে সেখানকার বাঙ্গালীরা। তাদের মতে, দফায় দফায় পাহাড়ীরা বিভিন্নভাবে তাইন্দংয়ে বাঙ্গালীদের উপর নির্যাতন ও অত্যাচার চালালেও কিছু মিডিয়া একটি বিশেষ গোষ্ঠির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বাঙ্গালী বিরোধী প্রচারনায় নেমেছে। কতিপয় বুদ্ধিজীবি ও মিডিয়াগুলো শুধুমাত্র তাইন্দংয়ে বাঙ্গালী বিরোধী প্রচারনাই করছে না একই সাথে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে সু-গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারা বলেন, দফায় দফায় বাঙ্গালী গ্রামে পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলা ও গুলি বর্ষনের ঘটনা ঘটালেও এখানে আসা বুদ্ধিজীবি ও মিডিয়াগুলো সে বিষয়ে কোন কথা বলছেনা। এমনকি তারা তাইন্দং এসে শুধু মাত্র পাহাড়ীদের সাথে কথা বলেই ফিরে যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন বা বাঙ্গালী নেতৃবৃন্দের কোন বক্তব্য শোনার প্রয়োজন মনে করছেনা।

তাইন্দং সহিংসতার পর পুরো তাইন্দং এলাকায় পাহাড়িদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া আতঙ্ক কেটে গেছে দাবী করে বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন-বিজিবির যামীনিপাড়া জোন অধিনায়ক মেজর শোয়াইব বলেন, পাহাড়ীদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরী হয়েছে। তারা ধীরে ধীরে বিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। এখন তাইন্দংয়ের পুরো এলাকাজুড়ে সৃষ্ট শঙ্কা কেটে শান্তির সুবাতাস বইছে। বেসামরিক প্রশাসনকে ত্রান কাজে সহায়তার পাশাপাশি বিজিবি নিরাপত্তা বিধানে সার্বক্ষনিক কাজ করছে। ইতিমধ্যে তাইন্দংয়ে পাড়া ভিত্তিক সম্প্রীতি সংরক্ষন কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রত্যেক পাড়া থেকে একজন পুরুষ, একজন মহিলা ও একজন কার্বারীকে কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিজিবির অধিনায়ক কমিটির প্রধান উপদেষ্ঠা হিসেবে কাজ করবেন। কোন রাজনৈতিক দলের কর্মীকে কমিটির সদস্য করা হবেনা বলেও জানিয়েছেন বিজিবির যামীনিপাড়া জোন অধিনায়ক মেজর শোয়াইব। কিন্তু পাহাড়ীদের মধ্যে আস্থা ফিরে এলেও বাঙালী গ্রামগুলো এখনো পুরুষ শূন্য। গ্রেফতার আতঙ্কে ঈদের আগে থেকেই তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বিশেষ করে সরকার বিরোধী সমর্থক, নেতাকর্মীরা বাড়িতে ফিরতেই পারছেনা। সরকার ঘটনাটি নিযে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চাওয়ায় আসল অপরাধ ও অপরাধিরা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ড. মোহাম্মদ মাহে আলম পার্বত্যনিউজকে জানান, তাইন্দংয়ের পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক। মানুষের মধ্যে সৃষ্ট আতঙ্ক ও ভীতি কেটে গেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ত্রান সহায়তাসহ সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পাহাড়ীদের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ত্রান না পাওয়া এবং তাদের নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ দু:খজনক উল্লেখ করে বলেন, কোন ধরনের অপপ্রচারে কান না দিয়ে সরেজমিনে সত্যতা যাচাই করে সংবাদ পরিবেশন করা উচিত।
 
উল্লেখ্য, গত শনিবার দুপরে মো: কামাল হোসেন নামে এক মোটর সাইকেল চালককে অপহরণের জের ধরে তাইন্দংয়ের চারটি পাহাড়ি গ্রামে অগ্নিসংযোগ-লুঠপাট এবং ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় কয়েক হাজার মানুষ তাইন্দং ছেড়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের নো মেন্স ল্যান্ড ও আশে-পাশের গভীর জঙ্গলে আশ্রয় নেন এবং কয়েকটি পাড়ার পাহাড়ীরা ভয়ে পার্শ্ববর্তী পানছড়ি উপজেলায় আশ্রয় নেয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন