তামাক তাড়িয়ে বাদামে বাম্পার

fec-image

কক্সবাজার চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর চরে ও তীরবর্তী এলাকায় তামাকের পরিবর্তে সবজি চাষের পাশাপাশি বেড়েছে বাদামের চাষ। নদীর চরের বিভিন্ন পয়েন্টে এপার-ওপারে প্রান্তিক কৃষকেরা বাদাম পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। কম খরচে অধিক লাভের আশায় চাষীরা ঝুঁকছে বাদাম চাষের প্রতি। অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর আবহাওয়ার প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় আশাতিত ফলন হওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষক পরিবারের মাঝে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক।

জানাগেছে, মাতামুহুরী নদীর চর ও তীরবর্তী এলাকায় প্রতি বছর অক্টোবর মাস থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত জমিতে বাদামের বীজ লাগানো হয়। আর রোপিত বাদাম জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারীতে কৃষকরা ক্ষেত থেকে এই বাদাম তোলা শুরু করে। বাদামের বীজ লাগানোর আগে হাল চাষ দিয়ে সামান্য নরম করে দিতে হয় মাটি। তারপর সারি সারি করে লাগানো হয় বাদাম বীজ। প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদীর চরে পলি জমে মাটি উর্বর হয়। তাই চরের এ মাটিতে লাগানো হয় বাদাম। স্বল্প পুঁজির এই বাদাম চাষে কোনো অতিরিক্ত সার কিংবা কীটনাশক দিতে হয় না । তিন মাসের মধ্যেই পরিপূর্ণ বাদাম ফলনে তাই অল্প কষ্টে অধিক লাভ হওয়ায় তামাক চাষের পরিবর্তে বাদাম চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা ।

বিগত বছরের তুলনায় চলতি বছরে মাতামুহুরীর চরে বাদামের বাম্পার ফলন হওয়ায় সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরা। নদীর চরে টংঘর তৈরি করে ক্ষেতে লাগানো বাদাম পরিচর্যা করে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। চলতি মৌসুমে বাদামের আশাতিত বাম্পার ফলন হওয়ায় মাতামুহুরী নদীর তীরবর্তী কৃষকের মুখে যেন হাসির ঝিলিক।

মাতামুহুরী নদীর বিভিন্ন চরাঞ্চল সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নদীর চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বিগত কয়েক বছর আগেও নদীর দুই তীরবর্তীতে শুষ্ক মৌসুমে তামাকের চাষ করতো চাষিরা। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে উপজেলা প্রশাসন নদীর চর বা সরকারি খাস জমিতে তামাক চাষ নিষিদ্ধ করেন। ফলে, নদীর তীরের প্রান্তিক চাষিরা তামাকের পরিবর্তে ভরাট চরে বিভিন্ন সবজি চাষের পাশাপাশি বাদাম চাষ শুরু করে। বিগত বছরের তুলনায় এবার বাদাম চাষে ফলন হয়েছে আশাতিত। বাজারে বাদামের ন্যায্য মূল্যও পাওয়া যাচ্ছে। তাই আগামীতে বাদাম চাষের ব্যাপকভাবে করতে আরো উৎসাহী হয়ে উঠছেন এসব চাষিরা।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলার মাতামুহুরী নদীর বিভিন্ন চরে ১৩৫ হেক্টর জমিতে ত্রিদানা ও ঝিঙ্গা বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ৩২৬ হেক্টর অধিক পরিমাণ জমিতে এ বাদাম চাষ করা হয়েছে। চরের বালুতে প্রতি হেক্টর জমিতে ১৫-১৬ মণ বাদাম হয়। আর প্রতিমণ কাঁচা বাদাম ১৮শ’ থেকে ২হাজার টাকা দরে পাইকারিভাবে বিক্রি করা হয়। এবছর উপজেলার মাতামুহুরীর ব্রিজ পয়েন্ট, বেতুয়া বাজান ব্রিজ সংলগ্ন চরে, হাজিয়ান, কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, বমুবিলছড়ি, ফাঁসিয়াখালী, উপজেলা মাতামুহুরীর নদীর চর ছাড়াও চকরিয়া উপজেলার হাজিয়ানের চর, চকরিয়া পৌরসভার বাটাখালী, আমাইন্ন্যার চর, পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের ঘাইট্টার চর, কাকারা ইউনিয়নের মাঝের ফাঁড়ি, সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের মাতামুহুরী-সংলগ্ন চরে বিভিন্ন জাতের বাদামের চাষ করা হয়েছে। কোনো রোগ বালাই না থাকায় বাদামের গাছ নষ্ট হয়নি। তাই বাদামের ফলন অনেক ভালো হয়েছে।

উলে­খ্য, চকরিয়ায় বাদাম চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে। এ বিষয়ে চাষিদের ভাল প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে চাষিদের তামাকের পরিবর্তে বাদাম চাষ করতে অনুপ্রেরণা যুগিয়ে একদিন তামাক চাষ চকরিয়া অঞ্চল থেকে উধাও হয়ে যাবে বলে মনে করন স্থনীয় কৃষকেরা ।

সুরাজপুর-মানিকপুর এলাকার নুর মোহাম্মদ জানান, পূর্বের বছরের তুলনায় চলতি বছরে আবহাওয়া ও পরিবেশ ভাল থাকায় বাদামের ফলন ভাল হয়েছে। মাতামুহুরীর চরে অন্য যেকোন চাষের চেয়ে বাদাম চাষ করলে বেশ লাভ করা যায়।

দিগরপানখালী এলাকার কৃষক বাহদুর দাশ বলেন, চলতি মৌসুমে মাতামুহুরী নদীর চরে প্রায় ১৪ কানির মতো বাদাম চাষ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ক্ষেতের কোনো ধরণের রোগ বালাই না থাকায় ফলনও ভাল হয়েছে এবং একটি বাদামের গাছও নষ্ট হয়নি। তাই আশা করেছি বিগত বছরের তুলনায় এ বছর অধিক লাভ হওয়ার সম্ভবনা বলে জানান তিনি।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন ও উপ-সহকারী কর্মকর্তা রাজিব দে বলেন, চাষের শুরুতে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে কৃষকদের বাদাম চাষে উৎসাহিত করা হয়েছে। চলতি বছরে উপজেলায় নদীর বিভিন্ন চরে ১৩৫ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আশার কথা হচ্ছে, এবছর বৈরী আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং ক্ষেতে রোগ-বালাই না থাকার কারণে শীতকালীন রকমারি সবজির পাশাপাশি বাদাম চাষেও বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই চাষিরা এ বছর অধিক লাভ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে বাদামের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় তা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: তাড়িয়ে, তামাক, বাদামে
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন