তামা‌কের দখ‌লে মা‌টিরাঙ্গার সব‌জি ক্ষেত

fec-image

তামাক মানু‌ষের হৃৎপিণ্ড, লিভার, ফুসফুসকে আক্রান্ত, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ও মরণ ব‌্যধি ক্যান্সারের ম‌তো রো‌গের ঝুঁকি বাড়‌ায়। সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগা‌মী ২০৪০ সা‌লের ম‌ধ্যে তামাকমুক্ত বাংলা‌দেশ গড়ার ঘোষণা দি‌লেও দিন দিন বিষপাতা তামাকের চাষ বে‌ড়েই চল‌ছে।

পার্বত‌্য খাগড়াছ‌ড়ির সর্বা‌ধিক জনবহুল উপ‌জেলা মা‌টিরাঙ্গায় কৃ‌ষি সম্প্রসারণ ‌বিভাগ কর্তৃক বরাদ্ধকৃত প্রণোদনার না‌মে কৃষক হয়রানি, প্রয়োজনীয় কৃ‌ষি উপকরণ না পাওয়া ও কৃষি বিভাগ থেকে তেমন কোনো সচেতনতামূলক প্রচারণা না থাকায় কৃষকরা দিন দিন কৃ‌ষির প্রতি আগ্রহ হারা‌চ্ছে । একসসয় এ এলাকায় উৎপা‌দিত সব‌জি স্থানীয় চা‌হিদা মিটি‌য়ে দে‌শের বি‌ভিন্ন অঞ্চ‌লে সরবরাহ করা হ‌তো। বর্তমা‌নে সর্বনা‌শী তামাক চা‌ষের ফ‌লে এলাকার চা‌হিদা মিটা‌তে দে‌শের বি‌ভিন্ন এলাকা থে‌কে ফরমা‌লিনযুক্ত সব‌জি আমদা‌নি করতে হ‌চ্ছে। স্থানীয়ভা‌বে উৎপা‌দিত ফরমা‌লিনমুক্ত সব‌জির চে‌য়ে দামও বে‌শি দি‌য়ে কিন‌তে হ‌চ্ছে।

পক্ষান্ত‌রে প্রা‌ন্তিক কৃষ‌কদের বিনামূল্যে বীজ, সার ও পানি সেচের জন্য নাম মাত্র নগদ অর্থ ঋণ দেয়ার প্রলোভ‌নে দ‌রিদ্র কৃষক‌দের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি তামাক কোম্পানিগুলো ভালো দামে বিনামূল্যে বীজ, সারসহ নাম মাত্র অন‌্যান‌্য যে উপকরণ ‌দেয়া হয়, তা তামাক কেনার সময় লভ‌্যাংশসহ কৃষক‌দের কাছ থে‌কে আদায় ক‌রে নেয় তামাক কোম্পা‌নিগু‌লো।

এক সময়ে মা‌টিরাঙ্গার ধান, গম, সরিষা, ভুট্টা, আলুসহ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি চাষ কর‌তো কৃষক । কিন্তু এখন মাঠের পর মাঠ শুধু তামাকের ক্ষেত চোখে পড়ে। দিন যতই যাচ্ছে, ততোই বাড়ছে তামাকের চাষ। এভা‌বে তামাক চাষ বাড়‌তে থাক‌লে স্থানীয় সব‌জি ও কৃ‌ষি পণ‌্য উৎপাদন এক সময় শু‌ন্যের ‌কোটায় নে‌মে আস‌বে। তখন এলাকার বা‌হির থে‌কে আমদা‌নিকৃত ফরমা‌লিনযুক্ত কৃ‌ষি পণ্য, বি‌শেষ ক‌রে নিত‌্যপ্রয়েজ‌নীয় শাক সব‌জির জন‌্য কাঁচাবাজারের উপর নির্ভরশীল হ‌য়ে পড়‌বে মানুষ।অন‌্য দি‌কে তামাক ক্ষে‌তে উচ্চ মাত্রায় রাসায়‌নিক সা‌র ব‌্যবহা‌রের ফ‌লে কৃ‌ষি জ‌মি উর্বরতা হা‌রি‌য়ে চাষ অনুপ‌যো‌গী হ‌য়ে পড়‌বে।

জানা যায়, একসময় স্থানীয় জা‌তের “কে-৩২৬” না‌মের তামা‌কের চাষ করা হ‌তো। তা‌তে বেশি খর‌চে ফলন কম হওয়ায় বর্তমা‌নে ব্রা‌জিল থে‌কে আমদা‌নিকৃত নতুন জা‌তের
উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিড) তামা‌কের চাষ করা হ‌চ্ছে। এ‌তে কম খর‌চে বে‌শি ফলন পাওয়া যায় ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছেন নাম প্রকাশ না করা শ‌র্তে তামাক কোম্পা‌নির এক কর্মকর্তা।

এ‌দি‌কে তামাক চা‌ষি সূ‌ত্রে জানা যায়, কৃষকরা সব‌জি সহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদ করলেও তা বি‌শেষ ক‌রে পঁচনশীল সব‌জি বাজারজাত কর‌ণে নানা সমস্যা যেমন , ‌কোল্ড‌স্টোর না থাকা, কৃ‌ষি বিভা‌গের সহ‌যো‌গিতা না পওয়া, স‌ঠিক সম‌য়ে বি‌ক্রি ও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় মোটা অ‌ঙ্কের লোকসান গুণ‌তে হয়। এ‌তে পু‌ঁজি হারা হয় অ‌নেক কৃষক। তখন কৃষকরা সব‌জি চা‌ষে আগ্রহ হারায় । আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো প্রা‌ন্তিক কৃষক‌কে লোভনীয় আশ্বাসের ফাঁ‌দে ফেলে তামাক চা‌ষে উ‌দ্বুদ্ধ করে। এভা‌বে প্রা‌ন্তিক কৃষকরা তামাক চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।

গুমতী ইউ‌নিয়‌নের সা‌বেক চেয়ারম‌্যান ফারুক হো‌সেন লিটন ব‌লেন, আ‌মি উপ‌জেলা প্রশাসনকে ব‌লে‌ছি তাম‌াক চাষ শুরু‌তেই যেন বন্ধ করা হয়। এটা প‌রি‌বে‌শের জন‌্য ক্ষ‌তির। তামাক যখন চু‌ল্লি‌তে পোড়ায়, তখন এক কি‌লো‌মিটার এলাকায় বাতা‌সে গন্ধ ছড়ায়। এ‌তে প‌রি‌বেশ দূষিত হয়। তামাক চা‌ষের কার‌ণে সব‌জি উৎপাদন অ‌নেক ক‌মে‌ গে‌ছে। তামাক ক্ষে‌তে উচ্চ মাত্রায় রাসায়‌নিক সার ব‌্যবহার করার ফ‌লে কৃ‌ষি জ‌মি উর্বরতা হারা‌চ্ছে। তামাক পোড়া‌তে প্রচুর জ্বালানি কা‌ঠের প্রয়োজন হওয়ায় নিয়‌মের তোয়াক্কা না ক‌রে ব‌্যাপকভা‌বে বনভূমি কে‌টে উজার করা হ‌চ্ছে। তামাক চাষ বন্ধ করা উ‌চিত।

তামাক কোম্পা‌নি ব্রিটিশ টোবা‌কোর মা‌টিরাঙ্গা উপ‌জেলা কর্মকর্তা নওরুজ বিন রেজা মা‌টিরাঙ্গা উপ‌জেলায় তামাক চা‌ষের স‌ঠিক তথ‌্য দি‌তে অস্বীকৃ‌তি জা‌নি‌য়ে ব‌লেন, কৃ‌ষি অ‌ফিসে আমা‌দের তথ‌্য দেয়া র‌য়ে‌ছে। সেখান থে‌কে জে‌নে নি‌তে পা‌রেন। গণমাধ‌্যম‌কে তথ‌্য দি‌তে কর্তৃপ‌ক্ষের অনুম‌তি না থাকায় বিস্তা‌রিত তথ‌্য দেয়া সম্ভব হ‌চ্ছেনা।
ত‌বে কৃষক‌কে বীজ, সার বা সং‌শ্লিষ্ট উপকরণ বিনামূ‌ল্যে সর্বরাহ করা হ‌চ্ছে না। কৃষ‌কের মাধ‌্যমে তামাক ক্ষে‌তে কোম্পা‌নির বি‌নি‌য়োগ থাকায় আ‌র্থিক নিরাপত্তার জন‌্য কোম্পা‌নির একর প্রতি ২‌ থে‌কে ৫ হাজার টাকা ঋণ দি‌য়ে সহ‌যো‌গিতা ও উৎসা‌হিত করা হয়। যা ফসল কেনার সময় কে‌টে রাখা হ‌য়।

মা‌টিরাঙ্গা উপ‌জেলায় কি প‌রিমাণ তামাক চাষ হয়ে‌ছে উপ‌জেলা কৃ‌ষি অ‌ফিস তার কোন স‌ন্তোষজনক প‌রিসংখ‌্যান দি‌তে পা‌রে নি । ত‌বে ক‌য়েক দি‌নের ম‌ধ্যে বিস্তা‌রিত তথ‌্য দি‌বে ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: তামাক, মাটিরাঙ্গা, সবজি ক্ষেত
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন