তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা কারবারি ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি নির্বাচিত

fec-image

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা কারবারি হাম জালালকে কক্সবাজারের টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনা না মেনে শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে এই ঘোষণা দেয়া হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি হাম জালাল টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ছোট হাবিবপাড়ার হাজী খলিলুর রহমানের ছেলে। তার বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র আইনের অন্তত ১০টি মামলার রয়েছে।

পুলিশ জানায়, চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি ৩ হাজার ইয়াবাসহ টেকনাফ থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন হাম জালাল। এর আগে টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার পথে লোহাগাড়ায় ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি। শীর্ষ এই ইয়াবা ব্যবসায়ী কিছুদিন আগে জামিনে মুক্তি পান। জামিনে এসেই আওয়ামী লীগের সভাপতি বনে যান হাম জালাল। অথচ কোন ইয়াবা ব্যবসায়ী বা বিতর্কিত ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগের কোন পদে না আনার নির্দেশনা দিয়েছিলো কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।

টেকনাফের আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, এবার হামজালালকে কোন পদ না দিতে জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশনা অমান্য করে হাম জালালকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ঘোষণা করেন বলে অভিযোগ।

শুক্রবার টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিলের বিশেষ অতিথি জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, যেখানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মাদকের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চলছে, সকল মাদক কারবারি ও বিতর্কিত ব্যাক্তিদের দলে না রাখতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা আছে। সেখানে হাম জালালের মতো চিহ্নিত ইয়াবা কারবারিকে সভাপতি পদে প্রার্থী করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর।

তিনি বলেন, সম্মেলন চলাকালেই জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হাম জালালকে বাদ দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর কেন্দ্র বা জেলা আওয়ামী লীগের কোন নির্দেশ মানেননি। তাই সম্মেলনে উপস্থিত জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা কাউন্সিল না করেই চলে আসেন।

এ ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর বলেন, হাম জালাল দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করছেন। তার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। হাম জালালের বিরুদ্ধে ইয়াবা পাচারের অভিযোগ ও মামলা নেই। কাউন্সিলে দলের নেতাকর্মীদের সমর্থনে সভাপতি হয়েছেন।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, হামজালালের বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার বিষয়টি টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে একাধিকবার জানানো হয়েছিলে। বার বার নিষেধ করার পরও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে হাম জালালকে উপজেলা সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর সভাপতি ঘোষণা করেছেন। বিষয়টি দুঃখজনক।

তিনি বলেন, দলের গঠনতন্ত্র না মেনে কাউন্সিল করায় টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের সকল কার্যক্রম বাতিল করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে আগামীকাল রোববার জরুরি সভা ডেকেছে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ।

টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, হামজালালের পুরো পরিবার ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। ইয়াবা পাচারের সময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তার ছোট ভাই বাহাদুর নিহত হয়েছিল। টেকনাফকে মাদকমুক্ত করার জন্য পুলিশ যেখানে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে, সেখানে হামজালালের মতো একজন চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে পারা খুবই দুঃখজনক। তাকে আটক করার চেষ্টা চলছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ, ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন