parbattanews

তিন পার্বত্য জেলায় নিয়োগের বিষয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে নিবিড় তত্ত্বাবধানের নির্দেশ

ফাইল ছবি

সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তত্ত্বাবধানে দেওয়ার পর প্রায় শতভাগ স্বচ্ছতা এসেছে। প্রশ্নফাঁস, কেন্দ্রভিত্তিক সিন্ডিকেট, একজনকে দিয়ে অন্যজনের পরীক্ষা বা সহযোগিতা নেওয়ার প্রবণতা প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। শুধু প্রাথমিক নয়, সরকারি প্রায় সব চাকরিতে লিখিত পরীক্ষায় অনিয়ম কমে আসলেও স্থানীয় জেলা পরিষদের অধীনে নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ায় তিন পার্বত্য জেলায় নিয়োগে এখনও চলছে স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও জালিয়াতি।

সর্বশেষ তিন পার্বত্য জেলায় (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটে। সরকারের গোপনীয় গোয়েন্দা প্রতিবেদনে প্রশ্নফাঁসে বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পরও সেই নিয়োগ শেষ করেছে পার্বত্য জেলা পরিষদ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তির (শান্তি চুক্তি) পর তিন জেলার উন্নয়ন ও প্রশাসনিক সুবিধা নিশ্চিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, প্রাণী ও মৎস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ ২৮টি বিভাগের নিয়োগ স্ব স্ব জেলা পরিষদের মাধ্যমে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তিন জেলার শিক্ষিত ও স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়োগ দিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তিন পার্বত্য জেলায় নিয়োগের বিষয়টি নিবিড় তত্ত্বাবধানে করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই ওই তিন জেলায় যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগের পরীক্ষা হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ সরাসরি তা মনিটরিং করতে পারবে। কিন্তু এ সুযোগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পাহাড়ি সংগঠন ও স্থানীয় কর্মকর্তারা সিন্ডিকেট করে এসব নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এমন অভিযোগের প্রমাণ মেলায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পার্বত্য জেলায় নিয়োগ কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিংয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

গত এপ্রিল মাসে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সব মন্ত্রণালয়-বিভাগে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠায়। সেখানে বলা হয়, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রশ্নফাঁস হওয়ার পরও লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশসহ নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান থাকায় জনসাধারণের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তিন পার্বত্য জেলায় জেলা পরিষদের অধীনে নিয়োগের ক্ষেত্রে এ ধরনের পরিস্থিতি প্রমাণ করে যে, নিয়োগে এ ধরনের অনিয়ম হওয়ায় যোগ্য চাকরিপ্রত্যাশীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

পাহাড়ি সংগঠন ও স্থানীয় কর্মকর্তারা সিন্ডিকেট করে এসব নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এমন অভিযোগের প্রমাণ মেলায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পার্বত্য জেলায় নিয়োগ কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিংয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সার্বিক বিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এ ধরনের পরিস্থিতির যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সে লক্ষ্যে পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর অধীনে চাকরিতে নিয়োগের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগসহ (যখন যে মন্ত্রণালয়/বিভাগে নিয়োগ পরীক্ষা হবে) পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিবিড় তত্ত্বাবধানে হতে পারে। এ বিষয়ে সব মন্ত্রণালয়/বিভাগকে নির্দেশনা প্রদান করা হলো। এ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর সায় ও অনুমোদন রয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি পাঠায়। সেখানে বলা হয়, তিন পার্বত্য জেলায় নিয়োগের বিষয়টি নিবিড় তত্ত্বাবধানে করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই ওই তিন জেলায় যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগের পরীক্ষা হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ সরাসরি তা মনিটরিং করতে পারবে।

এ প্রসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনা সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়েছে। যে মন্ত্রণালয়/বিভাগের অধীনে পরীক্ষা হবে তারা স্ব স্ব উদ্যোগে তা তদারকি করবে এবং মন্ত্রিপরিষদকে জানাবে। নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বশিরুল হক ভুঁঞা গণমাধ্যমকে বলেন, মন্ত্রিপরিষদের যে নির্দেশনা তা আমরা মানতে বাধ্য। আগামীতে সব নিয়োগে ওই নির্দেশনা মেনে চলা হবে।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির মধ্যে শান্তি চুক্তি সম্পন্ন হয়। ওই চুক্তির অধীনে সরকারি বিভিন্ন সংস্থাসহ ৩৩টি বিষয় পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর হওয়ার কথা। কয়েকটি বাদে সবগুলো বিষয় ইতোমধ্যে হস্তান্তর হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, তিন পার্বত্য জেলায় জনবল নিয়োগ জেলা পরিষদগুলো করে থাকে।

সূত্র: ঢাকা পোস্ট

Exit mobile version