parbattanews

তীব্র পানি শূন্যতায় কুতুবদিয়া দ্বীপের ৪ ইউনিয়ন

বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট চলছে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার ৪ ইউনিয়নে। ফলে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ সুপেয় খাবার পানি থেকে বঞ্চিত এ শুষ্ক মৌসুমে।

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের বাসিন্দাদের বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, উপজেলার কৈয়ারবিল, লেমশীখালী, দক্ষিণ ধুরুং ও উত্তর ধুরুং ইউনিয়নে শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নেমে যায়। ফলে সাধারণ নলকুপে পানি ওঠেনা। বিশুদ্ধ খাবারের পারি জন্য দৌড়াতে হয় এ গ্রাম থেকে ঐ গ্রামে।

দক্ষিণ ধুরুং ইউনিয়নের বাসিন্দা সাবেক মেম্বার আবু তাহের আনছারী, বশির মাঝি, ধুরুংকাচা গ্রামের নজির আহমদ প্রমূখ বলেন, বর্ষা মৌসুমে নলকুপে পানি পাওয়া গেলেও শীতকালে বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে নলকুপের পানি গভীরে চলে যায়। বাসা-বাড়ি, দোকানে স্থাপিত নলকুপে পানি থাকেনা। এসময় অন্তত ১২ ফুট নিচে চলে যায় পানির স্তর।

তারা আরো বলেন, যারা পানি সেচে ধান চাষ করেন তাদের অনেকেই সাধারণ নলকুপে মটর লাগিয়ে পানি উঠানোয় গৃহস্থের বাড়ির নলকুপে পানি নেই। এ ব্যাপারে তারা বেশ কয়েকবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগও করেছেন বলে তারা জানান।

লেমশীখালী হাজারিয়া পাড়ার বাসিন্দা বশির উল্লাহ বলেন, এমনিতেই নলকুপের সংকট। শুষ্ক মৌসুমে পানি মোটেও থাকেনা। ৩ গ্রাম পার হয়ে তারা খাবারের পানি নিয়ে আসেন। পুকুরের পানি অনেক সময় ব্যবহার করায় নানা রোগ-ব্যধিতে আক্রান্তের কথাও জানান তিনি।

কৈয়ারবিলের বাসিন্দা শওকত মুস্তাফা বলেন, যেখানে ৪০-৫০ ফুট গভীরে মিস্টি পানি মেলে। সেখানে শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গ্রামের অধিকাংশ নলকুপ অকেজো পড়ে আছে। ধান চাষে পুকুরের পানি ব্যবহার করলে নিত্য ব্যবহার্য পানি নিঃশ্বেষ হয়ে পড়ে। যে কারণে প্রায় সারা বছরই বিশুদ্ধ খাবার পানি সংকট লেগেই থাকে।

স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সূত্র জানায়, উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার নলকুপ বসানো হয়েছে। এ ছাড়াও চলতি অর্থ বছরে গভীর-অগভ্রী মিলে আরো ৩টি প্রকল্পের আওতায় ২০৯ টি নলকুপ স্থাপন কাজ চলমান রয়েছে।

অধিকাংশ ইউনিয়নে বিশেষ করে উত্তরজোনের ৪ ইউনিয়নে পানির স্তর অস্বাভাবিক ভাবে নিচে চলে যায় শুষ্ক মৌসুমে। ফলে অধিকাংশ নলকুপ অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

ওই অফিসের কর্মচারি মিজানুর রহমান জানান, সম্প্রতি বিদেশী জরিপ অনুযায়ি শুষ্ক মৌসুমে অন্তত ৮ ফুট নিচে নেমে যায় পানির স্তর। যে কারণে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বর্ষা মৌসুমেও নিয়মিত খাবারের পানি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে দ্বীপাঞ্চলে।

হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা: মোহাম্মদ জায়নুল আবেদীন বলেন, শুষ্ক মৌসুমে অধিকাংশ নলকুপে পরিমিত পানি না পাওয়ায় অনেক পরিবারে পুকুরের পানি পান করে থাকে। এটি পরিশুদ্ধ না থাকায় অনেক সময় ব্যবহারকারীরা পেটের পীড়া সহ নানা ধরণের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

দক্ষিণ ধুরুং ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমদ চৌধুরী বলেন, তার ইউনিয়নে বেশির ভাগ স্থানে একহাজার থেকে ১২ ‘শ ফুট নিচে বিশুদ্ধ খাবার পানি মেলে। এসব এলাকায় সাধারণ নলকুপ বসানোর খরচও বেশি। তাছাড়া প্রয়োজনীয় সরকারি নলকুপ বরাদ্ধও মেলেনা। বর্ষা মৌসুমে নলকুপগুলোতে পানি পাওয়া গেলেও শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর অন্তত ৮ ফুট নিচে চলে যায়। একই সাথে ধান চাষে অনেকে নলকুপে মটর বসানোয় আশ-পাশের নলকুপে পানির ঘাটতি পড়ে যায়। যে কারণে আবাসিক বাড়িগুলোতেও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট তৈরি হয় বলে তিনি জানান।

Exit mobile version