parbattanews

তীব্র শীতে কাঁপছে নাইক্ষ্যংছড়ি-রামুর পাহাড়ি জনপদের আড়াই লাখ মানুষ

পৌঁষের প্রচণ্ড শীতে কাঁপছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ৫ ইউনিয়নের ৭০ হাজার মানুষ। আর রামু উপজেলার ৫ ইউনিয়নের ২ লাখ মানুষও একইসাথে শীতে কাবু। এক কথায় দু’উপজেলায় ১০ ইউনিয়নের আড়াই লাখের অধিক মানুষ তাদের পালিত পশু-পাখিও শীতের ঠান্ডায় এখন দিশেহারা। পাশাপাশি বন্যপ্রাণীতো আছেই। যারা শীতের তীব্রতায় নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে আবার অনেকে মারাও পড়ছে। খবর প্রত্যক্ষর্দশী স্থানীয় একাধিক সূত্রের।

তারা আরো জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ৫ ইউনিয়নের জনসংখ্যা প্রায় ৭০ হাজারের অধিক। পাশাপাশি রামু উপজেলার পাহাড় বেষ্টিত ৫ ইউনিয়নের জন সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষাধিক। আর এ দু’উপজেলায় গৃহপালিত পশু-পাখির সংখ্যা ৫ লাখেরও অধিক। এর মধ্যে রয়েছে গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, হাঁস, দেশি, বিদেশী মোরগ, কবুতর এবং পাহাড়ি নানা প্রজাতি বন্যপ্রানী। যে সব এখন শীতের কবলে।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর এলাকার মো: ইউনুছ, আবুছালাম, মংনু মার্মা সহ অনেকের মতে-এ বছর শীত শুরু হয়েছে প্রায় ১ মাস পার হলো। চতুর্পাশে পাহাড়, তার মধ্যে ঠান্ডা ছড়া-র্ঝণা-পুকুর মিলে শীতকে আরো তীব্র করে তুলেছে সেই সময় থেকেই। তার পরেও কৃষি ও গ্রাম প্রধান এ এলাকার মানুষ গুলো তীব্র ঠান্ডা উপেক্ষা করে মাঠে যায় নিয়মিত। চাদর, কম্বল, কাঁথা জড়িয়ে ঠক্ ঠক্ করে কাঁপতে কাপঁতে তারা পথ চলে। কাজ করে মাঠে-ময়দানে। আর পশু পাখিরাও অনুরূপভাবে ঠান্ডায় লণ্ড-ভণ্ড।

এ অবস্থায় শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, গরীব-কৃষক সকলে সেই একটি কমন পরিস্থিতির শিকার। আর তা হলো ঠান্ডা আর ঠান্ডা জনিত রোগের। আর একদল গ্রামবাসীর দাবি, প্রচণ্ড এ শীতে অনেক প্রাণীর অকালে প্রাণ হারিয়েছে নানা স্থানে। আরো হারানোর পথে অনেক প্রাণীকুল। লোকজনের দাবি তারা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত শীতের জামা কাপড় পাচ্ছে না। আর চিকিৎসা সেবা মোটেও নেই দু’উপজেলার অধিকাংশ এলাকায়। শুধু অফিস কেন্দ্রিক কিছু তৎপরতা আছে মাত্র।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তের জামছড়ি, পাইনছড়ি, মারেগ্য পাড়া, মুইঅং পাড়া, ফাত্রাঝিরি, সহ উপজেলা দর্গূম পাহাড়ের অধিবাসীরা জানান, তাদের শীত নিবারণের উপযুক্ত কাপড় নেই। নেই কোনো গরম আশ্রয়স্থলও।

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিউল্লাহ জানান, তিনি ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার কম্বল বিতরণ করেছেন উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন, পর্যায় ক্রমে সব প্রয়োজনীয় স্থানেই করবেন ভবিষ্যতে।

বিষয় নিয়ে কথা বলতে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পপ কর্মকর্তা ডা: আবু জাফর মো: সেলিম বলেন, বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সর্বত্র শীত। এ কারণে ঠান্ডাজনিত রোগ বাড়ছে।  বিশেষ করে নিউমনিয়া ও ডায়রিয়া রোগ বাড়ছে আর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে অন্যান্য সময়ের চাইতে বেশি। অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, তারা উপজেলা হাসপাতাল ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ক্লিনিক গুলোকে সজাগ করে রেখেছেন। সেখানে তারা ঠান্ডজনিত রোগিদের সেবা দিচ্ছেন।

রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনের কচ্ছপিয়া আদর্শ হাফেজখানার ছাত্র হাফেজ মো: আওলাদ জানান, তারা শীতের জ্বালায় সারারাত কাঁপে। তাদের হুজুরও অতি কষ্টে আছে। তাদের কাছে যা আছে তা দিয়ে তারা অতি কষ্টে রাত কাটায় আর কুরআন পড়ে। তারা শীতের কাপড়ের জন্যে আরজ করেন সংশ্লিষ্টদের কাছে। এভাবে গর্জনিয়া, ঈদগড়, কাউয়ারখোপ, কচ্ছপিয়া ও জোয়ারিয়ানালার অনেক প্রতিষ্ঠান এবং হাজার হাজার মানুষ শীতের তীব্রতায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন বাধ্য হয়ে।

রামু উপজেলার পাহাড়ি জনপদ কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু মো ইসমাঈল নোমান জানান, পাহাড়ি জনপদ হিসেবে তার এলাকায় আসলেও শীত। তিনি ইতিমধ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং সরকার থেকে পাওয়া মাত্র ৪ শত কম্বল নিজে এবং মেম্বারদের মাধ্যমে তালিকা করে গরীব অসহায়দের মাঝে বিতরণ করে দিয়েছেন।

Exit mobile version