তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় আশ্রিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ

fec-image

বান্দরবান নাইক্ষ‍্যংছড়ির সীমান্ত জুড়ে ৫২ কিলোমিটার এলাকা গোলাগুলির শব্দে আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সোমবার ( ১৪ নভেম্বর) সীমান্তরক্ষীদের চৌকি লক্ষ্য করে রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহীরা এসব গোলা নিক্ষেপ করে। এতে কেঁপে ওঠে সীমান্ত এলাকার বসতবাড়ি।

সারাদিন মর্টার শেলের আওয়াজে আতঙ্কিত তুমব্রুর লোকজন সন্ধ্যার পর ভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। তুমব্রু জিরো লাইনে আশ্রিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রধারী দুই গ্রুপের মধ্যে প্রচণ্ড গোলাগুলি শব্দে দ্বিকবিদিক ছুটে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত গোলাগুলি চলছিল।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আজিজ। তিনি বলেন, সারাদিন সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমারের ভেতরে মর্টার শেলের আওয়াজ শুনেছেন তিনি। কিন্তু মাগরিবের পর হঠাৎ করে সীমান্তের জিরো লাইনে আশ্রিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একে -৪৭ রাইফেল ও এম-১৬ এর গোলাগুলি শুরু হলে, স্থানীয়রা ও রোহিঙ্গারা প্রথমে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। গোলাগুলির গতি বাড়তে থাকলে লোকজন নিরাপদে আশ্রয়ে সরে যায়।

তিনি ধারণা করেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের ধরতে গেলে হয়তো সরকারি কোন বাহিনীর এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে এ বিষয়ে দায়িত্বশীল কারোর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

নাইক্ষংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা ফেরদৌস বলেন, গোলাগুলির খবর শুনে তিনি উপজেলা সদরে অবস্থান করা ঘুমধুমের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আজিজকে দ্রুত ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

অবস্থার অবনতি হলে জরুরি খবরে তিনি সব ধরনের ব্যবস্থা নেবেন বলে তাকে জানান।

এ দিকে নাইক্ষ‍্যংছড়ি-মিয়ানমার সীমান্তে গত ৭ দিন কোন বিস্ফোরণের শব্দ ছিল না। এতে মানুষের মাঝে স্বস্থি ফিরতে শুরু করেছিল। কিন্তু হঠাৎ সোমবার (১৪ নভেম্বর) ভোর ৫টা ৫০ মিনিট থেকে জামছড়ি, ফুলতলি, দৌছড়ি ইউনিয়নের পাইনছড়ি পযর্ন্ত প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে কিছুক্ষণ পরপর গোলাগুলিও আওয়াজে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল সীমান্তে বসবাসরতরা। থেমে থেমে অগণিত মর্টার শেল এবং গুলির আওয়াজ বাংলাদেশ সীমান্তের অন্তত ২ কিলোমিটার অভ্যন্তরে বসবাসরতদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

সীমান্তের কাছে বসবাসরত মো. রহমান, কামাল হোসেন, ফয়েজ হাসান, আব্দুস সালাম, কাদের, ছাবের আহমদ, বদি আলম, সোহেল, রবিন তঞ্চঙ্গ্যা এবং শোয়েবুল ইসলাম এ ব্যাপারে সত্যতা নিশ্চিত করেন।

একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, নাইক্ষ‍্যংছড়ি সীমান্তের ৪৪, ৪৮ ও ৫১নং পিলারের মাঝামাঝি জায়গা দিয়ে অগণিত বিস্ফোরণের শব্দ তারা নিজ কানে শুনেছেন এবং ভয়ে আছেন। বিস্ফোরিত শব্দগুলো মিয়ানমারের কিছুটা ভেতর থেকে এসে বাংলাদেশের দুই কিলোমিটার ভিতর পর্যন্ত মাটি কাঁপিয়ে তুলছে। শব্দের তীব্রতা মাঝেমধ্যে অনেক বেশি হয় আবার মাঝে মাঝে অল্পমাত্রার হয়। এমন ভয়ানক বিস্ফোরণের শব্দে উক্ত জনপদে থাকা হাজারো মানুষের মধ‍্য আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

৮নং জামছড়ি ওয়ার্ডের স্থানীয় ইউপি সদস‍্য সাবের বলেন, দুপুর ১টা পযর্ন্ত এলাকায় অবস্থান করা পযর্ন্ত আমিও শুনতে পেয়েছি, মিয়ানমারের ভিতর থেকে আসা গোলাবারুদ বিস্ফোরণের বিকট শব্দ।

জামছড়ির মো. রহমান জানান, ৪৫নং পিলার দিয়ে সন্ধ‍্যা ৫টা ৩০ মিনিট থেকে ৬টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত মিয়ানমার অভ‍্যন্তর থেকে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের আওয়াজ বাংলাদেশের ভিতরে এসে মাটি কাঁপনের সৃষ্টি করেছে। এতে রাতের জামছড়িতে আতঙ্ক শুরু হয় মানুষের মধ‍্যে।

নাইক্ষ‍্যংছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেল, বিভিন্ন প্রকার গোলাবারুদ বিস্ফোরণের শব্দে কাঁপছে ৮নং ওয়ার্ডের জামছড়ি এলাকা। এ খবর তিনি শুনেছেন বিভিন্ন মাধ্যমে, তবে আতঙ্ককের কিছু নেই, যা হচ্ছে সব মিয়ানমারের অভ‍্যন্তরে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: তুমব্রু, রোহিঙ্গা, সীমান্ত
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন