parbattanews

তুমব্রু সীমান্তে আবারো গোলাগুলির শব্দ, বাড়ছে চোরাচালান

পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা দক্ষিণ সীমান্তের ঘুমধুমের তুমব্রু পয়েন্টে আবারো গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আর উত্তর-পূর্বে ব্যাপকহারে চোরাচালান চলছে। গত ৩ দিন ধরে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট ও পিলার এলাকা ঘুরে এ সব তথ্য পান এই প্রতিবেদক।

সূত্র জানান, সীমান্তের ঘুমধুম, জলপাইতলী, তুমব্রু পশ্চিমকূল, তুমব্রু বাজার এলাকার ওপারে তুমব্রু রাইট ক্যাম্প ও ঢেকুবুনিয়া ক্যাম্প আরকান আর্মির দখলে। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ দিন এ ক্যাম্প দু’টি দখলের সময় সেদেশের দু’বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

স্থল ও আকাশ পথে হামলা হয় প্রতিপক্ষ আরকান আর্মির বিরুদ্ধে। তবুও পিছু হটেনি আরকান আর্মি। এ ট্র্যাজেডিতে ২ বাংলাদেশি নিহত, আহত হত অনেক। রকেট লাঞ্চার ও মর্টারশেল সহ অবিস্ফোরিত বেশ গোলা এসে পড়ে এপারে।

তুমুল লড়াইয়ের সময় সে দেশের সীমান্তরক্ষীর ৩৩০ জন সদস্য প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। যাদেরকে গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমার কতৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করা হয়।

গোলাগুলির ঘটনার ১০ দিন বন্ধ থাকার পর ১৮ ফেব্রুয়ারি রোববার সকাল ৯টায় তুমব্রু রাইট ক্যাম্প থেকে আবারো ভারি অস্ত্রের গোলার আওয়াজ তুমব্রু বাজারে শুনেন স্খানীয়রা। যা স্থায়ী ছিলো ১০ মিনিট।

বাজার ব্যবসায়ী সরওয়ার কামাল, ছৈয়দ হোসাইন ও ওসাইন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, তুমব্রু রাইট ক্যাম্প ও ঢেকুবুনিয়া থেকে এ গোলাগুলি হয়েছে। এতে তুমব্রু ও হেডম্যান পাড়ার মানুষ আবারো সেই আগের মতো ভয়ে আতঙ্কিত হন তারা।

তাদের ভয় হচ্ছে, জান্তা বাহিনী তাদের হারানো রাইট ক্যাম্প ও ঢেকুবুনিয়া ব্যাটালিয়নসহ ক্যাম্প গুলো পুনরুদ্ধারে বিমান হামলা করছে কিনা জান্তা বাহিনী।

আবার অনেকের ধারণা করছেন, এসব গোলার আওয়াজ আরকান আর্মি নিজেদের জানান দিতে এ গোলাগুলি। যা ছিলো ৩৪ নম্বর পিলার এলাকা থেকে।

অনুরূপভাবে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিলার ভেতর থেকে অন্তত ৫০০ রাউন্ড গোলার আওয়াজে তুমব্রু বাজার, কোনার পাড়া, মধ্যমপাড়া, উত্তরপাড়া ও হেড়ম্যান পাড়ার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ এ বিষয়ে বলেন, এ গোলাগুলি প্রায় সময় হয়। রোববারও তাই হয়েছে। তবে জান্তা বাহিনীর বিমান হামলা করবে এ ধরণের ভূঁয়া কথা রটে গেছে সর্বত্র। যাতে সাধারণ মানুষ ভয় পাচ্ছে।

এদিকে সীমান্তের ৩৭ নম্বর পিলার বাইশফাঁড়ি এলাকা থেকে ৫০ নম্বর পিলারের লেবুছড়ির বাহিরমাঠ পর্যন্ত দীর্ঘ সীমান্তের অন্তত ২০টি পয়েন্ট দিয়ে চোরাচালান বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

সীমান্তের লোকজনের মাঝে ক্ষোভ মিয়ানমার থেকে গরু, মহিষ, ইয়াবা ও সিগরেটসহ যা আসছে ঠিকই, তার চাইতে বাংলাদেশ থেকে ভোজ্য ও জ্বালানি তেল, চাল ও বিস্কুটসহ খাদ্য সামগ্রী পাচারের ঘটনা তাদের ব্যাথিত করছে। কারণ এ সব খাদ্য সামগ্রি সে পারে যাওয়ার কারণে সীমান্তে পণ্যের দাম বেড়েছে। খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সূত্র আরো জানান, সীমান্তের ৫০ নম্বর পিলার থেকে ৪৬ নম্বর পিলার এলাকায় এখন চোরাকারবারের মহোৎসব চলছে।

ভোজ্যতেল ও জ্বালানি তেল যাচ্ছে দিন দুপুরে। তবে কৌশলে। এ সীমান্তের ৪৯ নম্বর পিলারের কয়েক’ শ ফুট তথা সামান্য পূর্ব দিকের বল ফিল্ড, ৪৮ ও ৪৭ নম্বর পিলার সংলগ্ন চেলির টাল, ৩৭ নম্বর ও ৩৮ নম্বর পিলার সীমান্ত দিয়ে মাছ,তেল, চাল ও খাদ্য সামগ্রী যাচ্ছে বেশ-আর আসছে গরু ইয়াবা, স্বর্ণ, সিগরেট ও অন্যান্য বার্মিজ সামগ্রী। যাতে জড়িয়ে পড়ছে অনেক দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইমরান বলেন, পূর্ব সীমান্তে চোরাচালান বেড়েছে ১০ গুন। বিশেষ করে চাল ভোজ্য ও জ্বালানি যাচ্ছে প্রচুর। আসছে গরু, মহিষ, সিগরেটসহ নানা অবৈধ পণ্য। যা বন্ধ না হলে এ সীমান্তে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।

তিনি রোববার দুপুরে এ প্রতিবেদককে বলেন, মিয়ানমার সংঘাতের কারণে সে দেশের লোকজন বাংলাদেশের দিকে অনুপ্রবেশের চেষ্ঠা করছে।
তারই ধারাবাহিকতায় ৩ দিন আগে ২ পরিবারের ৮-১০ জন মিয়ানমার মুরুং নাগরিক তার দোছড়ি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কুরিক্ষ্যং মৌজার মেনরোয়া পাড়ায় আশ্রয় নিয়েছে।

এ সব বিষয়ে ১১ বিজিবি অধিনায়কের সাথে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করলেও তিনি কোন প্রতিক্রিয়া জানান নি। তাই তার বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়নি।

Exit mobile version