ত্রুটিপূর্ণ অভিযোগপত্র দাখিল, দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে কক্সবাজার আদালতে হাজিরের নির্দেশ

fec-image

কক্সবাজারের আদালতে ত্রুটিপূর্ণ অভিযোগপত্র দাখিল ও দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে সদর মডেল থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ আবু মোহাম্মদ শাহাজাহান কবির ও তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ মহিদুল আলমকে আগামী ২৪ আগস্ট স্বশরীরে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ করা হবে না, জানতে চেয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সদর), আমলী আদালতের বিচারক আসাদ উদ্দিন মো. আসিফ এই আদেশ দিয়েছেন।

মামলাটি (জিআর-৮০২/১৯, সদর থানা মামলা নং-৭০/১৯) অধিকতর তদন্ত করে আগামী ২৪ আগস্টের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। আদেশের অনুলিপি অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তা ছাড়াও পুলিশ সুপার এবং সদর মডেল থানার ওসির নিকট পাঠানো হয়েছে।

২০১৯ সালের ২২ জুলাই পেনাল কোডের ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩৭৯/৩৫৪/৫০৬ ধারামতে ৬ জনের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগে থানায় মামলা করেন সদরের চৌফলদন্ডি ৫ নং ওয়ার্ডের আব্দু শুক্কুরের স্ত্রী শফিকা আক্তার (২৫)।

এ মামলার এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন, উত্তর মাইজপাড়ার মৃত কবির আহম্মদের ছেলে নুর মোহাম্মদ (৩৮), নুরুল হক (৪৫), নুরুল ইসলাম (৪৮), মৃত গুরা মিয়ার ছেলে বশির আহম্মদ (৩০), নুরুল ইসলামের ছেলে মো. রিদুয়ান (২২) ও মৃত কবির আহম্মদের ছেলে কালা মিয়া (৫৪)। তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

শোকজের কারণ হিসেবে আদালত উল্লেখ করেছেন, বিচারিক আদালতে চার্জ গঠনের সময় অভিযোগপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, তদন্তকারী কর্মকর্তা ৬ জন আসামির বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩৭৯/৩৫৪/৫০৬ ধারার কক্সবাজার সদর মডেল অভিযোগপত্র (নং-২৬৮) ২০২০ সালের ২৬ মার্চ দাখিল করেন। অভিযোগপত্রের গর্ভে ১-৪ জন আসামির বিরুদ্ধে সুষ্পষ্ট অভিযোগের বর্ণনা থাকলেও ‘৫নং আসামি মো. রিদুয়ান, পিতা-নুরুল ইসলাম, সাং-উত্তর মাইজপাড়া, ৫নং ওয়ার্ড, চৌফলদন্ডী’ লিখার পর অভিযোগপত্রের পরবর্তী বক্তব্য লিপিবদ্ধ এবং অভিযোগপত্রে পূর্নাঙ্গ লিপিবদ্ধ সমাপ্ত না করে একটি অসম্পূর্ণ অভিযোগপত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা স্বাক্ষর করেছেন। মামলাটি ২০১৯ সালের ২২ জুলাই দায়ের করা হয়েছে।

দীর্ঘ ৮ মাস ১৪ দিন পর গত ২০২০ সালের ২৬ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। অর্থাৎ তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতের জন্য দীর্ঘ সময়প্রাপ্ত হয়েছেন। তদন্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করার পূর্বে থানার ওসির নিকট প্রেরণ করেন। তিনি পুনরায় পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনটি অগ্রবর্তী করে অত্রাদালতে দাখিল করেছেন।

মামলাটি আসামিদের বিরুদ্ধে বিচারের জন্য বিচারিক আদালতে প্রেরণ করা হলে চার্জ শুনানির সময় বিচারিক আদালত পর্যবেক্ষণে দেখেন যে, তদন্তকারী কর্মকর্তা একটি অসম্পূর্ণ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। উক্ত তদন্ত প্রতিবেদনটি সদর মডেল থানার ওসি আদালতে অগ্রগামী করেন। এমতাবস্থায়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ত্রুটিপূর্ণ অভিযোগপত্র দাখিলে নিজ দায়িত্বের অবহেলা প্রদর্শন করায় কারন দর্শানোর নোটিশ ইস্যু করা মামলার সংশোধিত অভিযোগপত্র দাখিল করার জন্য মামলাটি আমলী আদালতে প্রেরণ করেন।

অদেশনামায় বিচারক বলেছেন, সার্বিক বিষয়ে বিচার বিশ্লেষন করে অত্রাদালতের কাছে প্রতিয়মান যে, তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক ত্রুটিপূর্ণ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করায় মামলাটি অধিকতর তদন্ত করা আবশ্যক। এই কারনে মামলার দীর্ঘ সূত্রিতা এবং ন্যায় বিচার বিলম্বিত হওয়ায় ত্রুটিপূর্ণ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার দায় হতে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নি.) মোহাম্মদ মহিদুল আলম ও অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ আবু মোহাম্মদ শাহাজাহান কবিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দায় থেকে অব্যাহতি প্রদানের সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য, সৈয়দ আবু মোহাম্মদ শাহাজাহান কবির সিলেট রেঞ্জে এবং মোহাম্মদ মহিদুল আলম পিবিআই হেডকোয়ার্টারে কর্মরত।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আদালত, কক্সবাজার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন