parbattanews

থানচিতে প্রথম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন উদ্বোধন

স্বাধীনতা ৫২ বছরের বান্দরবানে থানচিতে প্রথম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনটি শুভ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। আগামী রবিবার (২৪ এপ্রিল) প্রধান মন্ত্রী ভিডিও কমফারেন্সে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শুভ উদ্বোধন করবেন।

দুর্গম পাহাড়ে থানচি উপজেলা বাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশীত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সার্ভিস এর কার্যক্রম চালু হয়েছে। এতে করে এলাকার সর্বস্তরের মানুষে মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। এবার সারা দেশে ৪০ টি ফাইয়ার সার্ভিস স্টেশন ও বান্দরবানে রুমা ও থানচি উপজেলা দুইটি উদ্বোধনের আওতায় আনা হয়েছে।

জানা যায়, ২০১৭ সালে ২২ জুলাই পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন উদ্বোধন করেন। বান্দরবান গণপূর্ত বিভাগের প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ের দীর্ঘ সাড়ে ৫ বছর সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ সমাপ্তি ঘটে।

সম্প্রতি মাস্টার্সে শিক্ষার্থী থানচি হেডম্যান পাড়া বাসিন্দা হ্লামংউ মারমা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাহাড়ের বসবাসরত জনগোষ্ঠীদের ভালবাসা ও আন্তরিকতা আছে বলে দুর্গম থানচির মত উপজেলা অভ্যন্তরীণ ও জেলা শহর থেকে উপজেলা সদর পর্যন্ত রাস্তা ঘাট, শিক্ষাব্যবস্থা, চিকিৎসা ব্যবস্থা,বাসস্থানের অবকাঠামোসহ পাহাড়ে এত উন্নয়ন দৃশ্যমান দেখা গেচ্ছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

তিনি আর ও বলেন, আমার বাবা-মা আত্বীয় স্বজনরাসহ ১৯৯০ সাল থেকে এক টানা বান্দরবানের সাংসদ ও বর্তমান পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুরকে ভোট দিয়ে গেছেন। সুতরাং তিনি (বীর বাহাদুর এমপি) থানচি উপজেলা ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। তার আন্তরিকতা আমরা অনেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর সুদির্ঘায়ু জন্য মহান সৃষ্টি কর্তা নিকট সর্বক্ষণিক প্রার্থনা করি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গতি, সেবা, ত্যাগ এ শ্লোগানের চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ৩ তারিখ থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের মৌখিক অনুমতি নিয়ে যাত্রা শুরু করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সার্ভিস। আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধনের আগেই বিভিন্ন জনবান্ধব কার্যক্রম পরিচালনা করে থানচি উপজেলা বাসীর আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন কর্মকর্তারা।

স্টেশন সাব অফিসার মোহাম্মদ ইসমাইল মিয়া জানান, ২ টি গাড়ি , ৭ জন ফায়ার ফাইটারস, ৩ জন ড্রাইভার ও ১ জন সাব স্টেশন কর্মকর্তা নিয়ে ২৪ ঘন্টা সেবা প্রদানে পুরোপুরি প্রস্তুত এই প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে দীর্ঘদিনের চাওয়া ফায়ার স্টেশন পেয়ে খুশি থানচি উপজেলা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। বিশেষ করে থানচি বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যেন আনন্দের জোয়ার বইছে।

থানচি বাজারের ব্যবসায়ী লিটন চৌধুরী বলেন ,এই পর্যন্ত ৩ বার ভয়াবহ আগুনে সবকিছু হারিয়ে আমি আজ প্রায় নিঃস্ব। তিনি আরো বলেন থানচি বাজারের কয়েকজন দোকানদার আগুনে দোকান পুড়ে যাওয়ার কারণে দেউলিয়া হয়ে গেছে। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম শুরু হওয়াতে খুশি হয়েছি । তিনি জানান, বিগত দিনে ৩ বারের যে আগুনের সূত্রপাত ফায়ারসার্ভিস থাকলে একটির বেশি দোকান ও ক্ষতিগ্রস্ত হবার কোনো সম্ভাবনাই ছিলোনা।

ভুক্তভোগী বকুল আক্তার বলেন, ইস,আমার ঘরটা তে আগুন লাগার সময় যদি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সার্ভিসটা থাকতো তাহলে আমাদের পরিবার পরপর ২ বার আগুনে পুড়ে নিঃস্ব হবার হাত থেকে নিশ্চয়ই রক্ষা পেতো। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সার্ভিস তাদের কার্যক্রম শুরু করার কারণে এখন একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি।

সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয় থানচি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সার্ভিস -এর সাব স্টেশন কর্মকর্তা মো.  ইসমাইল মিয়া’র সাথে। তিনি বলেন, দেশের মানুষের সেবা করার ব্রত নিয়ে আমি এবং আমার ডিপার্টমেন্টের সকল সদস্য নিজেদের সর্বোচ্চ টা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই আমরা থানচি বাজারের অধিকাংশ দোকানে ফায়ার ইস্ট্রিং বুশার দিয়েছি, অধিকাংশ জায়গায় আমাদের সেবা গ্রহণের জন্য অফিসের মোবাইল নাম্বার সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার কাজ চলমান।

এই সময় তিনি আরো বলেন, আগামী ২৪ তারিখ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ফায়ারসার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সার্ভিসের আনুষ্ঠানিক ভাবে শুভ উদ্বোধন করবেন। এতে করে কাজে আরো অনেক বেশি গতিশীলতা আসবে বলে মনে করি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তীতে এ অঞ্চলে কোন সড়ক পথ ছিলনা ২০১২ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থানচি উপজেলা প্রথম পা রেখেছেন এবং চোখে দেখেছেন। সুতারাং প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি গোচর হওয়া আজকের সিভিল ডিফেন্স ফাইয়ার সার্ভিস স্টেশন সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,  চিকিৎসা ব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থা , বাসস্থানের ব্যবস্থা, খাদ্য বান্ধব ব্যবস্থাসহ থানচিকে একটি মডেল উপজেলা পরিণত করার সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে।  সে লক্ষ্যে পরিকল্পিত উন্নয়নের এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সারাদেশে ৪০টি বান্দরবান জেলা রুমা ও থানচি দুইটি স্টেশন রোববার যথারীতি শুভ উদ্বোধন করবেন।

 

Exit mobile version