দর্শনীয় স্পটে পরিণত কুতুবদিয়া বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প

Bayu-2 copy

কুতুবদিয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় দেশের প্রথম পরীক্ষামূলক বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পে নাম মাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ হলেও এটি এখন বিনোদনের দর্শনীয় স্থানে পরিণত হচ্ছে। সাগর কন্যা দ্বীপ কুতুবদিয়ায় অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন সুবিধা সৃষ্টির সুযোগ থাকলেও সরকারী উদ্যোগ না নেয়ায় নিভৃতেই থেকে যাচ্ছে জেলার অন্যতম এ বালুকাময় ২৫ কিলোমিটার জুড়ে সৈকত-সমূদ্র। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর লবণ, মাছ, শুঁটকি উৎপাদনের কেন্দ্র ছাড়াও পর্যটক আকৃষ্ট করে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ঐতিহাসিক বাতিঘর ও তার ধ্বংসাবশেষ।

এ ছাড়াও নতুন বাতিঘর, উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাধক হযরত আব্দুল মালেক শাহ (রহ:) আল কুতুবীর মাযার। আরও রয়েছে যার নামে দ্বীপ কুতুবদিয়া সেই কুতুব আউলিয়ার মাযার, আকবর শাহ‘র মাযার সহ পশ্চিম তীরে রয়েছে স্থানীয় বন বিভাগের উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পের নয়াভিরাম ঝাউ বাগান। সর্ব শেষ ধুরুং বাজারের পূর্ব পার্শ্বে নির্মিত হয়েছে সরকারী আর্থিক সহায়তায় দেশের অন্যতম গ্রীণ হাউজিং এনার্জি লিমিটেড‘র বাস্তবায়নে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প। যা দ্বীপে এখন পর্যন্ত সব চেয়ে বেশি সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ।

উপজেলার দর্শনীয় স্থান হিসেবে আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নে দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় ২০০৮ সালে। প্রাথমিক পর্যায়ে ১৪কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০০কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন পাওয়ার প্লান্ট শুধু নামেই ছিল। ৫০টি পাখার সাহায্যে উৎপাদিত বিদ্যুৎ উপজেলা সদরে সরবরাহ দেয়া সম্ভব হয়নি দূর্ঘটনা, অচল সহ নানা কারণে। শেষ পর্যন্ত এটির উৎপাদন ক্ষমতা অনেকটাই নেমে আসে।

কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর সেটি মেরামত করা হয়। পাশাপাশি ২০ টারবাইন সমেত ১০০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন আরও একটি প্রকল্প চালু করা হয়। দু‘টো প্লান্টে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কল্যাণে আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের কিছু অংশে স্থানীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের হিসেব অনুযায়ি প্রায় ৩‘শ গ্রাহক মিটার নিয়েছে বলে জানা যায়।

কবি জসীম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিছুর রহমান জানান, বায়ু বিদ্যুতের কোন সুবিধাই পাচ্ছেনা এলাকাবাসি। এটি মূলত, তারা অচল মনে করে। সন্ধ্যায় নাম মাত্র বিদ্যুৎ সরবরাহ দিয়েই দায় সারেন কর্তৃপক্ষ। একই কথা জানালেন আলী আকবর ডেইল ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা আ‘লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা নুরুচছাফা। সন্ধ্যায় দেড় ঘন্টা বিদ্যুৎ পান বলে তিনি জানান।

অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রকৌশলী সাজ্জাদ ছিদ্দিকী জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, বায়ু বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করে বাতাসের উপর। নভেম্বরে বাতাস কম থাকায় সরবরাহ কম ছিল। এখন প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ৫ঘন্টা করে প্রায় ৩‘শ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। দু‘টি প্লান্টে ২০০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

দ্বীপ আলো করতে নতুন প্রযুক্তির বায়ু বিদ্যুতের সুবিধা কম পেলেও দর্শনীয় বিষয় হয়ে উঠছে সংশ্লিষ্ট এলাকা। সেখানে ছুটির দিনে বেড়াতে আসা অনেকেই মনে করেন মনোরম পরিবেশের কথা।

ইপিআই টেকনিশিয়ান ছৈয়দ কামরুল হাসান, স্থানীয় ব্রাক কর্মী উম্মে খায়রুন নেছা, কুতুবদিয়া সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী আস্সাবরু মিফতাহুল ফারজি জানান, উপজেলার বিশাল বালুকাময় সমূদ্র সৈকত ঘেঁষে দেশের প্রথম স্থাপিত বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প দেখে তারা মুগ্ধ। প্রকল্প রক্ষাবাঁধ সহ বেড়ানোর সুবিধা অন্য জায়গার চেয়ে উত্তম পরিবেশ রয়েছে এখানে। সূর্যস্নান সহ সাগরের ঢেউ দেখার অপূর্ব জায়গা এটি।

তবে প্রকল্প রক্ষা বাঁধের অনেক স্থানে সিসি ব্লক দেবে গেছে। এগুলো মেরামত করা গেলে স্থানীয় দর্শনার্থী সহ বাহিরের পর্যটকদের আরও আকৃষ্ট করবে বলেও তারা মনে করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন