parbattanews

দালাল চক্রের হাতে জিম্মী পেকুয়ার কৃষি ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিনিধি, পেকুয়া:
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক পেকুয়া শাখা এখন দালাল চক্রের হাতে জিম্মী হয়ে গেছে। প্রায় ডজনখানেক সক্রিয় দালালরা ওই ব্যাংক টিকে ঘিরে সিন্ডিকেট তৈরি করে সেবামুলুক ওই প্রতিষ্ঠানটিকে অকার্য্যকর করেছে তুলেছে। বর্তমানে কৃষি ব্যাংক পেকুয়া শাখা মানে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি ও গ্রাহক হয়রানি শুরু হয়েছে।

দালাল চক্রের দৌরাত্ম সম্প্রতি এভাবে বেড়ে গেছে যে ওই ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের নাভিশ্বাস জন্মেছে। ফলে, ব্যাংকটির নিজস্ব স্বক্রিয়তা অনেকটা দালাল চক্রের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, এসবের পিছনে মূলত দায়ী কৃষি ব্যাংক পেকুয়ার শাখা ব্যবস্থাপক নাছির উদ্দিন সহ বেশ কয়জন অসাধু কর্মকর্তা। তাদের যোগসাজষে কৃষি ব্যাংক পেকুয়া শাখায় সব কিছুর অঘোষিত নিয়ন্ত্রক এখন ওই দালাল চক্র।

বিশেষ করে ঋণ বিতরণে দালালরা মূখ্য নিয়ন্ত্রক। ব্যাংকটির নিজস্ব মাঠ কর্মকর্তা সহ ঋন বিতরণে তাদের নিজস্ব জনবল ও নিয়ম নীতি থাকলেও এক্ষেত্রে এসবের সিদ্ধান্তের মালিক ওই দালালরা। তারা যাদেরকে সনাক্ত করেন মূলত ঋন পেয়ে থাকেন তাদের পছন্দের লোকজন। আবার এসবের মধ্যেও তাদের স্বার্থ অন্তর্নিহীত।
জানা গেছে, ঋন বিতরণে দালাল চক্রের শর্ত মানে যেসব গ্রহীতা ওই ব্যাংক থেকে ঋন নেন মূলত ঋনের জন্য মনোনীত করা হয় তাদেরই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতিপূর্বে ওই ব্যাংক থেকে যেসব গ্রহীতা ঋন নিয়েছেন তারা শুধুই ঠকেছেন।

ত্রিশ হাজার টাকা নির্ধারিত লোনের মধ্যে গ্রহীতারা পেয়ে থাকেন শুধুমাত্র ১০ হইতে ১৫ হাজার টাকা। আর অবশিষ্ট টাকা ভাগাভাগি করে চলে যায় দালাল ও অসাধূ ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটে।
এছাড়া, ওই ব্যাংক থেকে প্রদত্ত দশ হাজার টাকার লোনের মধ্যে গ্রহীতারা ভোগ করেন মাত্র ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা। অপরদিকে, ঋন বিতরণে প্রকৃত উপকারভোগী নির্ণয় ছাড়াই অধিকতর অযোগ্যদের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়ে থাকে লোন।

এমনকি, লোনের বিপরীত গ্রহীতাদের যেসব দলিল দস্তাবেদী সহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টে গ্রহণে দেখা গেছে প্রকৃত দলিল কিংবা কাগজের মালিক তাদেরকে দেওয়া হয়না কোন ধরনের সূযোগ সুবিধা। যেসব ব্যক্তিরা দলিল দস্তাবেজ ভুয়া কিংবা জালিয়াতি সৃজন করে ব্যাংকে জমা দেন লোন দেওয়া হয় তাদেরকে।
এছাড়া, লোনের ফাঁদে ফেলে কৃষি ব্যাংক পেকুয়া শাখার নাম ভাঙ্গিয়ে উপজেলার ৭ ইউনিয়নের শত শত লোকজনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই দালাল চক্র। এনিয়ে পেকুয়ায় একাধিক স্থানে দালাল চক্রের লোকজনের সাথে স্থানীয়দের মারামারীও হয়েছে। মামলা হয়েছে একাধিক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষি ব্যাংক পেকুয়া শাখাকে ঘিরে ডজনেরও বেশি দালাল চক্র বর্তমানে সক্রিয়। এরা হলেন, মগনামা ইউনিয়নের মরিচ্যাদিয়া এলাকার রহিমুল্লাহ, চান্দারপাড়া এলাকার শাহ আলম, সদর ইউনিয়নের মেহেরনামা এলাকার নুরুল হোসেন, সাবেকগুলদীর আবদুস ছালাম, উজানটিয়ার নতুনঘোনা এলাকার আবুল কাসেম, বিলহাঁচুড়া এলাকার বাচ্চু, রাজাখালীর আব্বাস মেম্বার, শিলখালীর বাদশা মেম্বার, বারবাকিয়া ইউনিয়নের মোস্তাক আহমদ, টইটং ইউনিয়নের নুরুল ইসলাম সহ প্রায় ডজনেরও বেশী লোকজন জড়িত।

প্রতারিত হয়েছে উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের মফিজুর রহমান, বহদ্দারপাড়ার কবির আহমদ, মগঘোনার আবুল হোসেনসহ উপজেলার ৭ ইউনিয়ন থেকে শত শত লোকজন। এদের মধ্যে উজানটিয়া ইউনিয়নের এক ব্যক্তি তার জমির দলিল দেখিয়ে লোন নেওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের জড়িতদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করেছে বলে জানা গেছে।

এব্যাপারে মগনামা ইউনিয়নের সামশুল আলম জানান, আমাকে লোন দেওয়ার কথা বলে ৩হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দালাল চক্র। কিন্তু এযাবত লোনও দেননি টাকাও ফেরৎ দেননি। এ ব্যাপারে, কৃষি ব্যাংক পেকুয়ার শাখা ব্যবস্থাপক নাছির উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগে চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Exit mobile version