দীঘিনালায় দুই আঞ্চলিক দলের মধ্যেই ভোটযুদ্ধ: আ.লীগে একক বিএনপিতে রয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থী

21.03.2014_Dighinala election pic

মুজিবুর রহমান ভুঁইয়া :

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পরপরই ভোট যুদ্ধে নির্ঘূম রাত কাটাচ্ছেন দীঘিনালার ৯ চেয়ারম্যানসহ ১৬ প্রার্থী। ভোটের সমীকরণ বলে দেয় এবারের নির্বাচনে দীঘিনালায় ভোটযুদ্ধ হবে পাহাড়ের তিন আঞ্চলিক দলের তিন প্রার্থীর মধ্যেই।

ইতিমধ্যে সম্পন্ন হওয়া জেলার সাত উপজেলার মধ্যে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলাসহ তিনটিতেই জয়ী হয়েছে ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থীরা। একটিতে জয়ী হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) সমর্থিত প্রার্থী। মাটিরাঙ্গা ও রামগড় উপজেলায় আধিপত্য তৈরী করেছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। চরম ভরাডুবি হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের। মানিকছড়ি উপজেলায় জয়ের মাধ্যমে মান রক্ষা করেছে দলটি। বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে জেলার সর্বশেষ এই উপজেলায়ও বিজয় চায় পার্বত্য শান্তিচুক্তি বিরোধী আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফ। দীঘিনালা উপজেলায় জয়ের মধ্য দিয়ে হালি পূরণ করতে মরিয়া ইউপিডিএফ।

বরাবরই সহিংস রাজনীতির জনপদ হিসেবে পরিচিত দিঘীনালা। যেখানে পাহাড়ের প্রভাবশালী তিন আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলেরই রয়েছে কমবেশি আধিপত্য। নিজেদের অধিপত্যকে পুঁজি করে এবারের নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছে তিন আঞ্চলিক দল সমর্থিত তিন প্রার্থী। দেশজুড়ে ভোটের সমীকরণে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি আর নিষিদ্ধ জামায়াত‘র মাতামাতি থাকলেও ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে দীঘিনালায় এসব বাঘা বাঘা দলের প্রার্থীসহ নেতা-কর্মীরা বিজয়ের হাসি থেকে বঞ্চিত থাকবেন এমনটাই ধারণা করছেন এ উপজেলার সচেতন ভোটার মহল।

দীঘিনালা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ একক প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হাজীর্  মো: আবুল কাশেম পুরো সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে মাঠে থাকলেও বিএনপিতে রয়েছে একাধিক প্রার্থী। খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন মেরুং ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির নেতা মোশারফ হোসেন ও জেলা বিএনপির ওয়াদুদ বিরোধী বলয়ের সমর্থন নিয়ে মাঠে রয়েছেন জেলা বিএনপির আরেক নেতা খনি রঞ্জণ ত্রিপুরা। বিএনপির দুই প্রার্থীর মাঝখানে দীঘিনালায় সাংগঠনিক শক্তি, স্থানীয় প্রশাসনের সুনজর, চাকমা সম্প্রদায় থেকে একাধিত প্রার্থী আর বাঙ্গালী ইস্যুকে সামনে রেখে আ‘লীগ সমর্থিত প্রার্থী হাজী মো: আবুল কাশেম চিংড়ি প্রতীক  নিয়ে নির্বাচনী মাঠে কিছুটা ভাল অবস্থানে রয়ছেন বলে মনে করছেন কেউ কেউ। দিঘীনালায় বিএনপির সাংগঠনিক ভিত মজবুত হলেও জেলা বিএনপি’র সাম্প্রতিক গৃহদাহ ও বিদ্রোহী প্রার্থি এই নির্বাচনে বিএনপিকে আরো নাজুক অবস্থায় ফেলেছে বলে অনেকে মনে করেন।

অন্যদিকে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ২ নং বোয়ালখালী ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান চয়ন বিকাশ চাকমা ওরফে কালাধন। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফ‘র সমর্থণ নিয়ে বিজয়ের জন্য লড়ছেন নবোকমল চাকমা। আর বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ধর্মবীর চাকমা লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। এলাকায় আধিপত্য, শক্তি আর জনপ্রিয়তার বিচারে তিন প্রার্থীই সমান লড়াকু।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) সমর্থন নিয়ে গতবার চেয়ারম্যান হওয়া ধর্মবীর চাকমা এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চমক দেখাতে মরিয়া। যদিও গত পাঁচ বছরে চেয়ারম্যান হিসেবে তার অর্জনের পাল্লা খুব একটা ভারী নয়। অপরদিকে বোয়ালখালী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান পাহাড়ী-বাঙ্গালী উভয় সম্প্রদায়ের কাছে সমান জনপ্রিয় চয়ন বিকাশ চাকমা জেএসএস‘র (এমএন লারমা) সমর্থন পেয়ে চাঙ্গা অবস্থানে রয়েছেন। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণ স্বায়ত্বশাসনের দাবীতে আন্দোলনরত ইউপিডিএফ জেলার তিনটি উপজেলায় জয় পেয়ে অনেকটা চাঙ্গা মনোবল নিয়ে ‘হালি’ পূরনের স্বপ্নে বিভোর রয়েছে। খাগড়াছড়িতে উপজেলা নির্বাচনে ‘হালি’ পূরণের পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের শোধও নিতে চায় চুক্তিবিরোধী এ দলটি। আর সে লক্ষে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামিয়েছেন নবোকমল চাকমাকে।

৩১ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে দীঘিনালা উপজেলায় ৬৫ হাজার ৮‘শ ৬৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩৪ হাজার ১‘শ ২৮ ও মহিলা ভোটার ৩১ হাজার ৭‘শ ৪১ জন। দীঘিনালায় মোট ভোটরের তিন ভাগের দুই ভাগই পাহাড়ী ভোটার হওয়ায় এখানে জয়-পরাজয়ে পাহাড়ী ভোটাররাই ভূমিকা রাখবে। সেক্ষেত্রে প্রধান দুই দলের প্রার্থীর পক্ষে পাহাড়ী ভোট আসার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন দীঘিনালার সচেতন মহল। সে হিসেবে দীঘিনালার ভোটের মাঠে মুল লড়াইয়ে থাকছে পাহাড়ের দুই আঞ্চলিক দলের দুই প্রার্থী।  দীঘিনালায় আ.লীগের সাংগঠনিক শক্তি, স্থানীয় প্রশাসনের সুনজর, চাকমা সম্প্রদায় থেকে একাধিত প্রার্থী আর বাঙ্গালী ইস্যুকে সামনে রেখে আ‘লীগ সমর্থিত প্রার্থী হাজী মো: আবুল কাশেমকেও অনেকে মুল লড়াইয়ে যুক্ত রেখেছেন। তবে জেলা বিএনপি যদি এক বিদ্রোহী প্রার্থিকে সামলে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে জোরালোভাবে থাকতে পারে তবে তাদের জয়লাভের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন