দীঘিনালায় প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী চাষে সাফল্য

fec-image

দীঘিনালায় প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী চাষ করে কাঙ্ক্ষিত ফলন পেয়ে খুশি চাষিরা। উপজেলায় ২০ জন চাষী এবার সূর্যমুখী চাষ করেছেন। মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী। কম সময় ও অর্থ ব্যয় করে সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে অপার।

কৃষি বিভাগ সাধারণ কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করতে প্রথম বারের মতো সাড়ে ছয় একর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে।

জমিতে প্রথমবারের মতো উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার ও বীজ প্রণোদনার মাধ্যমে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী ফুলের।

বর্তমানে সূর্যমুখী ফুলের সমারোহে মেতে উঠেছে উপজেলার মাঠগুলো। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলনের আশা করছেন। তেল জাতীয় অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখীর চাষ অনেক সহজলভ্য ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকেরা এতে উৎসাহিত হয়ে উঠবেন বলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।

৩নং কবাখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ মিলনপুর গ্রামে সূর্যমুখী চাষ করা জমিতে গিয়ে দেখা যায়, ফুটে থাকা হলুদ সূর্যমুখী ফুলের সমাহারে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। চারদিকে হলুদ রঙের ফুলের মনমাতানো ঘ্রাণ আর মৌমাছিরা ছুঁটছেন এক ফুল থেকে অন্য ফুলে। তাতে মুখরিত হয়ে উঠেছে কৃষকের জমি। এটি যেন ফসলি জমি নয়, এ এক দৃষ্টিনন্দন বাগান।

এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অবলোকনে শুধু প্রকৃতিপ্রেমীই নয় বরং যে কারো হৃদয় কাড়বে। তবে সূর্যমুখী ফুল চাষের লক্ষ্য নিছক বিনোদন নয়। মূলত ভোজ্যতেল উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা মেটাতে এ চাষ করা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সূর্যমুখীর চাষাবাদ কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে উপজেলার ২০ জন কৃষক সাড়ে ৬ একর জমিতে প্রণোদনার প্রকল্পের আওতায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা শুরু করেছেন।

এতে সংশ্লিষ্ট উপজেলার ২০ জন কৃষক সুবিধাভোগী হিসেবে অংশ নিয়েছেন। ফুলের সৌন্দর্য দেখতে খামারে আসছেন দর্শনার্থীরা। অনেকে এটি চাষ করার পরামর্শও নিচ্ছেন। বর্তমানে একঘেঁয়েমি তামাক চাষ করে কৃষকরা তেমন একটা লাভবান হচ্ছেন না। তামাক চাষ করতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয় সেই টাকার তামাক পাওয়া যায় না।

তাই অন্যান্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষে বেশি লাভের প্রত্যাশা অনেক বেশি। সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তৈল উৎপাদন সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে ৭ মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। তেল উৎপাদন হবে প্রতি বিঘায় ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ২৫০ টাকা। বর্তমানে বাজারে ভোজ্যতেলের আকাশছোঁয়া দাম হওয়ার কারণে চাহিদা বেড়েছে সরিষা ও সূর্যমুখী তেলের।

এছাড়া সূর্যমুখী ফুলের তেল অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। তাই ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য এই তেল অন্যান্য তেলের চেয়ে অনেক উপকারী ও স্বাস্থ্যসম্মত।

৩নং কবাখালী ইউনিয়নে কৃষক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় আমি এই প্রথম ৪০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। আমার সূর্যমুখী ফুলের জমি দেখার জন্য দূরদূরান্ত লোকজন ছুটে আসছে। বিকেল বেলায় অনেকে লোকজন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেখতে আসেন এ সূর্যমুখী ফুলের জমি, জমির পাশে ছবি তুলেন সময় কাটান অনেকেই। তা দেখে আমার খুবই আনন্দ লাগে! শুনছি এটি খুবই লাভজনক একটি ফসল।

ইতোমধ্যেই প্রতিটি গাছেই ফুল ধরেছে। আশা করি সূর্যমুখী চাষে সফলতা আসবে। লাভবান হতে পারব ইনশাআল্লাহ। কৃষি অফিসের সহযোগিতা নিয়ে ধানের পরিবর্তে আগামী বছর আরও জমি বাড়িয়ে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাকে দেখে এলাকার অনেক কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন বলেন, সূর্যমুখী এক দিকে মনোমুগ্ধকর ফুল অন্যদিকে লাভজনক ফসল। কৃষকদের বিস্তারিত জানিয়ে সূর্যমুখী আবাদ করার পরিকল্পনা করি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের দিকে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ৯০-১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।

তিনি বলেন, আশা করছি ভালো ফলন হবে। আগামীতে এই উপজেলায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ ব্যাপক হারে আরও সম্প্রসারিত হবে। প্রথমবার কৃষকেরা সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হবেন বলে আমি আশাবাদী।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: দীঘিনালা, সূর্যমুখী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন