দীঘিনালায় স্মরণসভা ও প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত

fec-image

পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রথম শহীদ ভরদ্বাজ মুনি’র আত্মবলিদানের ৩ দশকপূর্তিতে স্মরণসভা ও প্রীতি ফুটবল ম্যাচ উদ্বোধন করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) দীঘিনালা ইউনিট।

বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর ২০২২) বেলা ২টার সময় দীঘিনালা উপজেলার ডিপি পাড়া স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন ইউপিডিএফ’র দীঘিনালা ইউনিটের সমন্বয়ক মিল্টন চাকমা।

ইউপিডিএফ সংগঠক সুজয় চাকমার সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বাবুছড়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার গগণ বিকাশ চাকমা, সুরেশ কান্তি চাকমা ও প্রতিভা চাকমা, ইউপিডিএফের সাবেক সংগঠক সমাজকর্মী অলকেশ চাকমা এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা আহ্বায়ক এন্টি চাকমা।

স্মরণসভা শুরুর পূর্বে শহীদ ভরদ্বাজ মুনি’র স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এতে ইউপিডিএফের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সজীব চাকমা ও অতল চাকমা, শহীদ পরিবারের পক্ষে দয়া মোহন চাকমা ও সুচরিতা চাকমা, তিন সংগঠন (পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন)-এর পক্ষে মিঠুন চাকমা, এন্টি চাকমা ও জ্ঞান প্রসাদ চাকমা এবং এলাকাবাসীর পক্ষে জনপ্রতিনিধি গগন বিকাশ চাকমা, সুরেশ কান্তি চাকমা ও প্রতিভা চাকমা প্রমুখ।

পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে শহীদ ভরদ্বাজ মুনি’র সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

স্মরণসভায় গগন বিকাশ চাকমা ভরদ্বাজ মুনি’র কথা স্মরণ করে বলেন, যে সময় ভরদ্বাজ মুনি শহীদ হন সেই সময় তিনি সবেমাত্র ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তেন। তিনি বলেন, ৭০ বছর বয়সে ভরদ্বাজ মুনি আন্দোলনে নেমে শহীদ হতে পারলে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম কেন পারবে না? পার্বত্য চট্টগ্রাম অধিকার আদায়ে সফল হতে হলে অবশ্যই সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

অলকেশ চাকমা বলেন, ভরদ্বাজ মুনি জনগণের অধিকারের জন্য আন্দোলনে অংশ নিতে এসে শহীদ হয়েছেন। তিনি কোন সংগঠনের কর্মী ছিলেন না। তিনি অধিকারকামী জনগণের মধ্যেকার একজন শহীদ ব্যক্তি। কাজেই তাঁকে স্মরণ করা শুধু ইউপিডিএফের দায়িত্ব নয়, এটা সমগ্র জুম্ম জনগণেরই দায়িত্ব।

তিনি বলেন, ভরদ্বাজ মুনি পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রথম শহীদ। তার নাম ইতিহাসের অক্ষরে অক্ষরে লেখা থাকবে।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী এন্টি চাকমা বলেন, শহীদ ভরদ্বাজ মুনি পার্বত্য চট্টগ্রামে এক গর্বিত নাম। অধিকার আদায়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রথম শহীদ হিসেবে পাহাড়িদের অবশ্যই তাঁর কথা স্মরণ রাখতে হবে। তরুণ প্রজন্মকেও ইতিহাসে নাম লেখা শহীদ ভরদ্বাজ মুনি সম্পর্কে জানতে হবে এবং লড়াইয়ের চেতনা ধারণ করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ইউপিডিএফ নেতা মিল্টন চাকমা বলেন, শহীদ ভরদ্বাজ মুনি পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এক সাহস ও অনুপ্রেরণাকারীর নাম। ৭০ বছর বয়সে তিনি গণ সমাবেশে যোগদান করতে এসে শহীদ হয়েছেন। আমরা জাতিগতভাবে তাঁর কথা কখনো ভুলে যেতে পারি না, পারবো না। ইতিহাসে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

তিনি আরো বলেন, ভরদ্বাজ মুনি যে আশায় আত্মবলিদান দিয়েছেন তা এখনো পূরণ হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকারহারা জুম্ম জনগণের প্রকৃত অধিকার প্রতিষ্ঠা হলেই তাঁর আত্মবলিদান সার্থক হবে। তিনি নতুন প্রজন্মকে শহীদ ভরদ্বাজ মুনি’র আত্মবলিদান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন বেগবান করার আহ্বান জানান।

স্মরণসভা শেষে বিকালে শহীদ ভরদ্বাজ মুনি’র স্মরণে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ উদ্বোধন করা হয়। ম্যাচটি উদ্বোধন করেন শহীদ ভরদ্বাজ মুনি’র ছেলে দয়া মোহন চাকমা।

উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালের ১৩ অক্টোবর দীঘিনালায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের আহুত গণসমাবেশে যোগদান করতে এসে মাইনি ব্রিজের সন্নিকটে শহীদ হন ভরদ্বাজ মুনি চাকমা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: দীঘিনালা, স্মরণসভা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন