দীঘিনালা উপজেলা নির্বাচন : শেষ মুহূর্তে পাল্টে গেল চিত্র

Al amin news(u p )

মো. আল আমিন:

নির্বাচনী প্রচারনার শেষ দিনের ঠিক আগের দিন শুক্রবার দিঘীনালা উপজেলা বিএনপি  আয়োজন করেছে তৃনমূল কর্মীসভার। উপজেলা নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থী মোশাররফ হোসেনের পক্ষে দলের তৃনমূল কর্মীদের অংশগ্রহন আরও বৃদ্ধি করতে তাদের উৎসাহ ও তাগিদ প্রদানই এই কর্মীসভার মূল উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন দিঘীনালা উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি মোসলেম উদ্দীন। কর্মীসভায় উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি জেলা ও দিঘীনালা উপজেলা বিএনপি, এর অঙ্গ-সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, নবনির্বাচিত রামগড় ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যানদ্বয় ও মাটিরাঙ্গা উপজেলার ভাইস-চেয়ারম্যান। উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের বিভিন্ন নেতার আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আলহাজ্ব কাশেমের পক্ষে কাজ করা নিয়ে ক্ষোভ লুকাচ্ছেন না তাদের কেউই। কর্মী সভায় সরাসরি এই বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন সকল নেতৃবৃন্দ।

মরিয়া হয়ে নির্বাচনে জয়লাভে মনোনিবেশ করায় যদিও বিএনপি নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ ঝাড়ছেন, তবুও পরিস্থিতি বলছে এখন পর্যন্ত নির্বাচনী হাওয়া বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষেই। মূলত বিদ্রোহী প্রার্থীর কারনে মানিকছড়ি এবং অত্যন্ত স্বল্প ব্যাবধানে খাগড়াছড়ি ও পানছড়িতে হেরে যাওয়ায় দিঘীনালায় পূর্ন শক্তি ব্যয় করছে জেলা বিএনপি। নেতাকর্মীদের সার্বক্ষনিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন স্বয়ং জেলা বিএনপি সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ওয়াদুদ ভূইয়া এবং জেলা বিএনপি’র জ্যোষ্ঠ নেতৃবৃন্দরা বেশ কয়েকদিন ধরেই অবস্থান করছেন দিঘীনালায়। তবে পরিস্থিতি তখন থেকেই বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মোশাররফ হোসেনের অনুকূলে চলে যায়, যখন ৬ জন উপজাতি প্রার্থী কেউ কাউকে ছাড় না দেয়ার মানসিকতায় নির্বাচনে অংশগ্রহন চূড়ান্ত করেন। দীঘিনালায় ৬৫, ৮৭৩ ভোটারের মধ্যে দুইভাগ ভোটার উপজাতি ও একভাগ বাঙালি। উপজাতি ভোটার তুলনামূলক অনেক বেশি হলেও ৬ জন উপজাতি প্রার্থীই কাছাকাছি মানের হওয়ায় ভোট ভাগাভাগি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সেক্ষেত্রে এবার ভাগ্য শিকে পড়লেও পড়তে পারে দুই বাঙালি প্রার্থীর যে কোন একজনের। তবে উপজাতি প্রার্থীদের মধ্যে তুলনামূলক শক্তিশালী অবস্থানে আছেন ইউপিডিএফ সমর্থিত নব কমল চাকমা, জেএসএস (সংস্কার) সমর্থিত চয়ন বিকাশ চাকমা (কালাধন) ও বর্তমান চেয়ারম্যান ধর্মবীর চাকমা। এদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া সত্বেও জেলা বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক খনি রঞ্জন ত্রিপুরার বিরুদ্ধে কৌশলগত কারনে ব্যাবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে মনে করা হচ্ছে। একে বিপুল ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ভোট আওয়ামী লীগ, ইউপিডিএফ বা জেএসএস (সংস্কার) প্রার্থীর পক্ষে না নেওয়ার কৌশল বলে মনে করছেন অনেকে।

 এদিকে মেরুং ইউনিয়নের বিশাল বাঙালি সম্প্রদায়ের ভোট দীঘিনালায় বাঙালিদের সবচেয়ে বড় ভোট ব্যাংক। সেখানে ওয়াদুদ ভূইয়ার অসম্ভব জনপ্রিয়তার কারনে ও মেরুং-এর ঘরের ছেলে হওয়ার সুবাদে মোশাররফ হোসেন অনেক এগিয়ে আছেন। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী আলহাজ্ব মোঃ কাশেম বাঙালি হওয়া সত্বেও পিছিয়ে আছেন। তবে সরেজমিনে সেখানকার বহু ভোটার নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানিয়েছেন, সরকারদলীয় প্রার্থী আলহাজ্ব কাশেম, তাঁর ছোট ভাই এবং তাদের কর্মীরা প্রকাশ্যে ও পরোক্ষভাবে ভোটারদের হূমকি দিচ্ছেন। যার ফলে তার বিরুদ্ধে ভোটারদের মনে একটি বিরূপ মনোভাব তৈরী হচ্ছে। আবার বাঙালি হওয়ার কারনে, আলহাজ্ব কাশেম আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়া সত্বেও উপজাতিদের তেমন একটা ভোট পাবেন না বলেই ভাবা হচ্ছে। এই সকল ভোট ৬ জন উপজাতি প্রার্থীর ঘরেই যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

 এদিকে আজ সন্ধ্যায় ওয়াদুদ ভূইয়ার টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে কর্মীসভায় বক্তব্য দেয়ায় বিপুল উজ্জীবিত বিএনপি’র তৃনমূল নেতাকর্মীরা। শেষ মুহূর্তের এই চমক টনিক হিশেবে কাজ করছে বলে জানা গেছে। কর্মীরা বিপুল উৎসাহ নিয়ে মাঠে নামছেন। ভোটের হালচিত্রের রং বদলে গেছে একটি সন্ধ্যায়ই। ওয়াদুদ ভূইয়া টেলিকনফারেন্সের মাধ্যেমে ভয়ভীতির তোয়াক্কা না করে, নেতাকর্মীদের প্রতি মাঠে নামার উদাত্ত আহবানের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় আবেগিক ভাবে ফুটিয়ে তোলেন। এসময় সমাবেশস্থলে মাঝেমাঝেই নিরবতা নেমে আসছিল। খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রবীন চাকমা, জেলা যুবদলের সভাপতি দাউদ ইসলাম অনেকদিন ধরেই নির্বাচনী প্রচারনায় দীঘিনালায় অবস্থান করছেন। গতকাল মেরুং-এ এক কর্মী সমাবেশে জেলা বিএনপি’র সাধারন সম্পাদক ও মাটিরাঙ্গা পৌর মেয়র আবু ইউসুফ চৌধুরী, নবনির্বাচিত রামগড় ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ও তাজুল ইসলাম, মাটিরাঙ্গা উপজেলার নবনির্বাচিত ভাইস-চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন যোগদান করেন।

শুক্রবার উপজেলার জামতলী বাজারে বিএনপি’র অস্থায়ী কার্যালয়ে আরেকটি কর্মী সমাবেশেও অংশগ্রহন করেন তারা। এর ফলে নেতা কর্মীরা উৎসাহ-উদ্দীপনায় নির্বাচনী কাজে অংশ নিচ্ছেন বলে সরেজমিনে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, নেতাকর্মীরা গভীর রাত পর্যন্ত গণসংযোগে ব্যাস্ত সময় পার করছেন বলে বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর আসছে। সবকিছু মিলিয়ে বলা যায়, নির্বাচনের রেসে মোশারররফ হোসেনের ঘোড়াই এগিয়ে আছে। এখন ভোটারদের অপেক্ষা ও চাওয়া সারাদেশে অনুষ্ঠিত শেষ তিন পর্যায়ের নির্বাচনের পূনরাবৃত্তি না হওয়া ও নিরাপদে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করা।  

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন