দুই বছরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৩২ রোহিঙ্গা নিহত

fec-image

উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে গত দুই বছরে বন্দুকযুদ্ধে ৩২ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ১২ জন বিজিবি ও ২০ জন পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় বলে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশ।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: ইকবাল হোসাইন বলেন, রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেওয়ার পর অবস্থান যতটা নিরব ছিল। এখন তেমনটি নেই। আগে তাদের চাহিদা ছিল খাদ্য এবং চিকিৎসার উপর। এখন রেশনের খাবার খেয়ে আলস্যতার কারণে তাদের মাথায় দুষ্টবুদ্ধি কাজ করে প্রতিনিয়ত। তাছাড়া ক্যাম্প গুলোতে অর্ধেকেরও বেশি যুবক। ফলে অপরাধ প্রবণতা বাড়ার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে সংখ্যাগত দিক দিয়ে একটু খারাপের দিকেই যাচ্ছে। তবে এখনো পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিশাল এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যত নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন পুলিশের এই কর্তা।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট পরবর্তী মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর নিজেদের মধ্যে অধিপত্য বিস্তার, ত্রাণ সামগ্রী বণ্টণ নিয়ে বিরোধ, পূর্ব-শত্রুতার জের, ইয়াবা কারবার, অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধে অপহরণ, খুন, ধর্ষণের মতো অনেক ঘটনা ঘটেছে।

তিনি আরো বলেন, মাদকের চালান দেশে অনুপ্রবেশ কালে বিজিবি, পুলিশের সাথে বিভিন্ন সময় বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় গত দুই বছরে উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে ৩২ জন রোহিঙ্গা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। তৎমধ্যে উখিয়ায় ২৪ জন, টেকনাফে ৮ জন নিহত হয়।

সর্বশেষ ২৩ আগস্ট (শুক্রবার) গভীর রাতে টেকনাফের জাদিমুরা পাহাড়ের পাদদেশে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যায় জড়িত দুই রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। নিহতরা হল- জাদিমুরা ক্যাম্পের বাসিন্দা মো: শাহ ও আবদু শুক্কুর। এ সময় দুটি বন্দুক ও ৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশের তিন সদস্যও আহত হয়। এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছন টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ প্রদীপ কুমার দাশ।

অপরদিকে গত ২২ আগস্ট ভোরে হোয়াইক্যং উলুবনিয়া কাটাখাল এলাকায় বিজিবির সাথে বন্দুকযুদ্ধে’ দুই রোহিঙ্গা যুবক নিহত হয়। নিহতরা হলেন- উখিয়ার কুতুপালং ৭ নম্বর ক্যাম্পের সৈয়দ হোসেনের ছেলে মো. সাকের (২২) ও টেকনাফ মুচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে নুর আলম (৩০)।

বিজিবির দাবি, নিহত দুজনই ইয়াবা চোরাকারবারি। অভিযানের সময় তিনটি দেশীয় অস্ত্র (এলজি), দুটি কিরিচ ও ৫০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

গত ২৪ জুলাই টেকনাফে বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে রোহিঙ্গাসহ দুইজন নিহত হয়। এ সময় বিজিবির তিন সদস্য আহত হয়। নিহতরা হলো, উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লক-২ এর বাসিন্দা মো. ইসলামের ছেলে মো. কামাল (২২) এবং হোয়াইক্যং ইউনিয়নের মহেশখালীয়া পাড়ার আবু শামার ছেলে মো. হাবিবুর রহমান (২৩)। ঘটনাস্থল থেকে এক লাখ পিস ইয়াবা ও দুইটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে বিজিবি।

বিজিবি আরো জানায়, গত ১০ জুন দমদমিয়া বিওপির নায়েক মো. হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে জাদিমোরা টহলরত অবস্থায় নৌকাযোগে ৪/৫জন বাংলাদেশ জলসীমায় প্রবেশ করলে বিজিবি সদস্যরা চ্যালেঞ্জ করা মাত্র গুলিবর্ষণ শুরু করে। ঐ সময় ৫০ হাজার ইয়াবা, একটি দেশীয় একনলা বন্দুক, ২ রাউন্ড গুলির খালি খোসা ও একটি কাঠের নৌকাসহ গুলিবিদ্ধ এক রোহিঙ্গা নিহত হয়।

নিহত মাদক কারবারি মিয়ানমারের মন্ডু থানার দক্ষিণ নাগাকুরার পেরাংপুরের মোহাম্মদ নুরের ছেলে মো. রফিক (৩০) জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

৭ জুন টেকনাফ লেদা ক্যাম্পের পিছনে পাহাড়ে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তিন রোহিঙ্গা নিহত হয়। নিহতরা হলেন নুর আলম (২৩), মোহাম্মদ জুবায়ের (২০) ও হামিদ উল্লাহ (২০)। তারা তিনজনই নিবন্ধিত নয়াপাড়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা। ঐ সময় ঘটনাস্থল থেকে চারটি এলজি এবং ৭ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।

৬ মে টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে দুজন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। নিহতরা হলো টেকনাফের হ্নীলার নয়াপাড়া ক্যাম্পের মোহাম্মদ আলম (৩৫) ও জাদিমোরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মো. রফিক (২০)।

২৭ মার্চ ভোরে টেকনাফ খারাংখালী এলাকায় বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুই রোহিঙ্গা নিহত হয়। নাফ নদী পাড়ি দিয়ে অনুপ্রবেশ কালে বিজিবি সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। আত্মরক্ষার্থে বিজিবিও পাল্টা গুলি চালায়। পরে ঘটনাস্থলে দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের দেহ তল্লাশি করে এক লাখ ৯০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

২২ ফেব্রুয়ারি র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নুরুল আলম নামে রোহিঙ্গা ডাকাত নিহত হয়। সে নয়াপাড়া আনসার ক্যাম্প লুট ও আনসার কমান্ডার হত্যা মামলার প্রধান আসামি। ওই সময় তার কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও ১৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে র‌্যাব।

এছাড়াও ২০ ফেব্রুয়ারি টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ৫ নম্বর সুইসগেট দিয়ে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে বিজিবির সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় নয়াপাড়া মুছনী ক্যাম্পের মো. জাফর আলম।

বন্দুকযুদ্ধে রোহিঙ্গা নিহতের ঘটনা ছাড়াও বালুখালী ক্যাম্পের হেড মাঝি লালু মিয়া জানান, গত ২০১৮ সালের  ১৬ আগস্ট বালুখালীতে রোহিঙ্গা দুর্বৃত্তরা আরিফুল্লাহ মাঝিকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে।

২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট বিকেলে টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-ব্লকের রোহিঙ্গা দুর্বৃত্তের গুলিতে মো. আবু ইয়াছির (২২) নামের এক রোহিঙ্গা যুবক ঘটনাস্থলে নিহত হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এদিকে দেশী-বিদেশী দাতা সংস্থা গুলোর কারসাজিতে পরপর দুই বার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হওয়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যেখানে রোহিঙ্গাদের এমন অপরাধ কর্মকান্ড ও সহিংস আচরণে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকেও ভাবিয়ে তুলেছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার, রাখাইন, রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন