দুর্গম পাহাড়ে ‘লিটল ডক্টর’

fec-image

কক্সবাজারের রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি জনপদ ডাকভাঙ্গা গ্রামে চলমান করোনা ভাইরাস রোধে প্রচারনা ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে জনসচেতনতায় কাজ করছে লিটল ডক্টরস। ওই গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ডাকভাঙ্গা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ‘লিটল ডক্টর’ দলটি কয়েক বছর ধরে গ্রামের বাসিন্দাদের বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে বাঁচাতে সচেতনতামূলক প্রচারনা, উঠান বৈঠক চালিয়ে আসছে। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকলেও চলমান করোনা পরিস্থিতিতে ১০ সদস্যের লিটল ডক্টর দলটি গ্রামের পাড়া-মহল্লায় উঠোন বৈঠক করে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং করোনা থেকে বাঁচতে গ্রামবাসীকে দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি ডাকভাঙ্গা গ্রামে সরেজমিন দেখা গেছে- লিটল ডক্টর দলের কার্যক্রম। গ্রামের মধ্যখানে একটি উঠানে বিছানো ত্রিপলে বসে আছেন পাড়ার নারীরা। সামনে দাঁড়িয়ে তাদের করোনা ভাইরাস সম্পর্কে একে একে সচেতনতামূলক বক্তব্য রাখছিলো ডাকভাঙ্গা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লিটল ডক্টর দলের সদস্য নিশরাত জাহান তামান্না, নুশরাত ফারজানা মিম, আরকান হোসেন, সাজ্জাদুল করিম, সাইফুল হক, সাহামনি আক্তার, রিফা আকতার, জন্নাতুল ফেরদৌস ও মিফতাহুল জান্নাত মিম। সচেতনতামূলক সভায় উপস্থিত জনসাধারণকে বিনামূল্যে মাস্ক, স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন- ডাকভাঙ্গা বাংলাদেশ এর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মো. জুয়েল তালুকদার। অতিথি হিসেবে ছিলেন সাংবাদিক সোয়েব সাঈদ। এছাড়াও ডাকভাঙ্গা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সলিম উল্লাহ, এসএমসি সদস্য সেলিনা আক্তার, সহকারি শিক্ষক মো. আলমগীর আলম, মার্জিয়া বেগম, সালেহা আক্তার এবং মৈষকুম ওসমান সরওয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. আবদুল হামিদ সভা চলাকালে উপস্থিত ছিলেন।

ডাকভাঙ্গা বাংলাদেশ এর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মো. জুয়েল তালুকদার জানিয়েছেন- ডাকভাঙ্গা এলাকায় প্রশিক্ষিত দক্ষ লিটল ডক্টরস টিম দ্বারা কমিউনিটি উন্নয়ন ও সচেতনতার লক্ষে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে তৃনমূল পর্যায়ে মাস্ক বিতরণ, স্বাস্থ্য-শিক্ষা, স্যানিটেশন, আর্সেনিক ও ম্যালেরিয়া সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান আছে। লিটল ডক্টরদের প্রতিবছর এমবিবিএস চিকিৎসক দ্বারা প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। প্রশিক্ষিত হয়ে তারা নিজ এলাকার লোকজনকে বিভিন্ন রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা ও বিভিন্ন মহামারী সম্পর্কে সচেতন করেন।

বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের মধ্যে বুলবুল আক্তার, খালেদা বেগম ও ছেনুআর বেগম জানান- তারা করোনা ভাইরাস সম্পর্কে তেমন কিছু জানতেন না। এখন লিটল ডক্টরস উঠান বৈঠক করে তাদের এ ভাইরাসের বিস্তার সম্পর্কে জানিয়েছে। পাশাপাশি করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য অনেক সচেতনতামূলক পরামর্শও তারা দিয়েছে। তারা আরও বলেন-দুর্গম এলাকা হওয়ায় তারা অনেক রোগের চিকিৎসা সহজে পাননা।

ডাকভাঙ্গা বাংলাদেশ এর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মো. জুয়েল তালুকদার আরও জানিয়েছেন- রামুর কাউয়ারখোপ ও কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে মৈষকুম ওসমান সরওয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ডাকভাঙ্গা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫০০ জন ছাত্র-ছাত্রী পড়ালেখা করছে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখা ও তাদের খাদ্য, চিকিৎসা ও বস্ত্র নিশ্চিত করে জীবনমান উন্নয়নে এতিম ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ২০ জনকে শিক্ষা সহায়তা বাবদ ১০০ টাকা করে প্রতি মাসে প্রদান করা হবে। এ টাকা প্রতি মাসের ১ তারিখে তাদের নিজস্ব নগদ/বিকাশ নম্বরে পাঠানো হবে। পরবর্তীতে ফান্ড পাওয়ার সাপেক্ষে তাদের সুযোগ-সুবিধা পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করা হবে। এছাড়া আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহায় এতিম, প্রতিবন্ধী ও হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের পরিবারকে মাংস বিতরণ করা হবে।

ডাকভাঙ্গা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সলিম উল্লাহ জানান- রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা মইশকুম এবং কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা ডাকভাঙ্গা গ্রামে ডাকভাঙ্গা বাংলাদেশ নামে একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠিত দুটি বেরসকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। এরফলে ওই গ্রাম দুটিতে অসহায় শিশুরা মানসম্মত শিক্ষা অর্জনের সুযোগ পাচ্ছে। বিদ্যালয়ে পাঠদানের পাশাপাশি শিশুদের মানসিক বিকাশে নিয়মিত ক্রীড়া-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার আয়োজন করা হয়। গ্রামবাসীকে রোগ-ব্যাধি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লিটল ডক্টর টিম। ৪র্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ১০ জন শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠন করা হয় লিটল ডক্টর টিম।

কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু ইসমাইল মো. নোমান জানিয়েছেন- লিটল ডক্টরদের মাধ্যমে দুর্গম এ এলাকার লোকজনকে করোনা, ম্যালেরিয়া সহ বিভিন্ন মহামারী রোগ-ব্যাধি সম্পর্কে সচেতন করার এ উদ্যোগে প্রশংসনীয়। এর মাধ্যমে এলাকাবাসী নিজেদের সুরক্ষার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ লাভে আরো এগিয়ে যাবে। মানসম্মত পাঠদান এবং জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী ডাকভাঙ্গা বাংলাদেশ ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কৃতজ্ঞতা জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন