parbattanews

দুর্ভিক্ষের পথে সেন্টমার্টিন

 

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

পর্যটন নির্ভর সৌন্দর্য্যের অপার লীলাভূমি দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে জীবন জীবিকা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। হাহাকার শুরু হয়েছে স্থানীয় খেটেখাওয়া মানুষদের মধ্যে। দ্বীপে নেই কোনো পর্যটক। পর্যটকবাহী জাহাজও চলছে না। আবার কবে নাগাদ চালু হবে তারও কোনও নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার প্রশাসনের তদারকিতে পানিতে নামতে পারছে না স্থানীয় জেলেরা। বেকার হয়েছে আছে দ্বীপের সাড়ে ৮ হাজার বাসিন্দা। ফিশিং ট্রলার মিয়ানমারের জলসীমার কাছাকাছি গেলেই কেড়ে নেয়া হচ্ছে জেলেদের জাল ও সরঞ্জামাদিসহ সর্বস্ব। এমন সংকটময় সময় কাটাচ্ছে সেখানের বাসিন্দারা। দ্রুত সেন্টমার্টিনে পর্যটনের জন্য নিষেধাজ্ঞা তুলে না নিলে সমুদ্রবেষ্টিত দ্বীপটির বাসিন্দাদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।

সম্প্রতি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের নির্দেশনায় সেন্টমার্টিনে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন। টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে ১ অক্টোবর থেকে পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। চর জেগে উঠায় নাফ নদী দিয়ে চলাচল করতে হবে। আর তা হবে অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ।

জানা গেছে, কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীদের নিজস্ব হোটেল রয়েছে সেন্টমার্টিনে। সেখানে কক্সবাজার থেকে পর্যটক নিয়ে যাওয়া হয় সেন্টমার্টিনে। এ কারণে সেন্টমার্টিনের বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ দৈনন্দিন জীবিকা নির্বাহে পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। তবে এ বছর রোহিঙ্গা ইস্যুতে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিপাকে পড়েছে তারা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে চলাচলকারী পর্যটকবাহী জাহাজ এমভি কেয়ারী, এমভি বাঙালি, কেয়ারী সিন্দাবাদ, কেয়ারী ক্রুজ ডাইন ঘাটে নোঙর করা রয়েছে। সেখানে জাহাজে চলছে রঙের কাজ। পাশাপাশি বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন করা হচ্ছে। তবে ঘাটের যাত্রী উঠানামা জেটি মেরামত ও অভ্যর্থনা রুমের সংস্কার কাজ শেষ পর্যায়ে।

এ বিষয়ে সেন্টমার্টিনের ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ নূর আহমেদ বলেন, “সেন্টমার্টিনে সাড়ে আট হাজার মানুষের বাস। এখানে অধিকাংশ মানুষের জীবিকা নির্ভরশীল পর্যটন ও সাগরে মাছ শিকারের উপর। বছরের ছয়মাস এখানকার বাসিন্দাদের বেকার থাকতে হয়। এ বছর পর্যটন নির্ভর ব্যবসায়ীদের মাঝেও ধস নেমেছে। গত দুই মাস সেন্টমার্টিন পর্যটনশূন্য রয়েছে। অথচ প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করে থাকেন।”

এদিকে পর্যটক বাধার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চলমান রোহিঙ্গা ইস্যুটিও। যে কারণে অন্যান্য বছরের মতো এবার জেলেরা সাগরে অবাধে মাছ ধরতে পারছে না। মিয়ানমারের কাছাকাছি গেলে সে দেশের প্রশাসনের লোকজন জেলেরদের সবকিছু কেড়ে নিচ্ছে। এমন অবস্থায় প্রশাসনের কাছে ৫২৭ জেলের তালিকা দেয়া হয়। বেকার জেলেদের মধ্যে ১২৪ জনের নামে ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ নূর আরও বলেন, “সেন্টমার্টিনে এমন অচলাবস্থা চলতে থাকলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।” এ সমস্যা নিরসনে জরুরি ভিত্তিতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন দ্বীপ নৌপথে আগের নিয়মে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি তিনি জোর দাবি জানিয়েছেন।

টেকনাফ জেটি ঘারের এমভি বাঙালি জাহাজের এক কর্মী জানিয়েছেন, এ বছর রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের প্রশাসনের লোকজন বঙ্গোপসাগরে জাহাজ থামিয়ে ঝামেলা করছে। এখন মিয়ানমারের খালের মধ্যদিয়ে সেন্টমার্টিন যেতে হয়। এভাবে যাতায়াত নিরাপদ নয়। এ জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না।

বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয় টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাহিদ হোসেন সিদ্দিক এর সঙ্গে। তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা সংকটের কারণে টেকনাফ সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাহিনীর পক্ষ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের উপর আপত্তি জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। আশা করছি আগামী মাসেই জাহাজ চলাচল শুরু হবে।”

বর্তমান পরিস্থিতিতে সেন্টমার্টিনে বসবাসরত স্থানীয়দের জীবন-জীবিকা সচল রাখতে সরকারিভাবে কোনও বরাদ্দ কিংবা উদ্যোগ আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “স্থানীয় প্রতিনিধির দেয়া তালিকা অনুযায়ী জেলেদের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। নিরাপত্তা বিবেচনায় স্থানীয়দের সাবধানে থাকতে বলা হয়েছে। কোস্টগার্ড সদস্যরা নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে।’

 

সূত্র: ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডি

Exit mobile version