দুর্ভোগের যন্ত্রণায় কাতর রোহিঙ্গারা

উখিয়া প্রতিনিধি:

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জাতিগত হত্যাযজ্ঞ ও নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নাগরিকরা আশ্রয়ের অভাবে বিপন্ন মানবতার জীবনযাপন করছে। মাথা গোজার ঠাই মেলেনি এখনো। খোলা আকাশের নিচে অথবা পলিথিনের ছাউনি দিয়ে একটু আশ্রয়স্থল করলেও প্রশাসনের উচ্ছেদের কবলে পড়ে দূর্ভোগ র্দূদশা কাতরে হাজার হাজার রোহিঙ্গা পরিবার। ঝড়ে ভিজে রোদে পুড়ে এক অহসনীয় জীবনযাপন বিভিষিকাময় হয়ে উঠেছে।

কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালংস্থ টিভি রিলে কেন্দ্রের পাশে গড়ে উঠা নতুন রোহিঙ্গা বস্তিতে আশ্রয় নেওয়া আমেনা বিবি (৫২) জানান, মিয়ানমারের রাচিদং গ্রাম হতে ৫ দিন পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে স্বামী সন্তান সহ ৭জন বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। অপর ছেলে রাহামত (২৫) সবার সামনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ধরে নিয়ে যায়। জীবিত কিংবা মৃত্যু কোন খবর এখনো জানা যায়নি।

সোমবার বয়স্ক আমেনা বলেন,  টিভি রেলি কেন্দ্রের পার্শ্বে ঘুমধুম পাহাড়ে অন্যান্য পরিবারের সাথে একটি পলিথিনের ছাউনি দিয়ে নিখোঁজ ছেলের দিকে চেয়ে থেকে কোন রকম দিন পার করছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের লোকজন আমাদেরকে উচ্ছেদ করে অন্য পাহাড়ে চলে যেতে মাইক দিয়ে ঘোষণা করা হয়। সমারুক বেগম (২৭) বলেন, সারাদিন থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি শেষ হলে প্রচণ্ড রোদ। এরই মধ্যে ২ বছরের কন্যা শিশু ও ৫ বছরের ছেলে মুনিয়া নিয়ে থাকবো কোথায়। স্বামী আব্দুলকে সেনাবাহিনী সদস্যরা ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করার বর্ণনা দিয়ে তিনি হাউ মাউ করে কেঁধে উঠেন।

ছগির আহমদ (৬৫) ও আবু শমা (৬০) জানান, প্রায় ২ শতাধিক রোহিঙ্গা ঝুঁপড়ি ঘর উচ্ছেদ করে দিয়েছে প্রশাসন। এমনিতে এক বেলা খেতে পারলেও অনেক সময় উপোস থাকতে হয়। ছোট ছোট শিশু সন্তানদের নিয়ে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে এক দুর্ভোগের দিন পার করছি। এরই মধ্যে প্রশাসনের উচ্ছেদের কবলে পড়ে যেন মরার উপর খাড়ার ঘাঁ।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেড জানান, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য কুতুপালং মুধুর ছড়া পাহাড়ি এলাকায় ২ হাজার একর বনভূমি জায়গা নির্ধারন করা হয়। ওই জায়গায় গড়ে তুলা হবে নতুন শরণার্থী ক্যাম্প। তাই বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গা নাগরিদেরকে নির্ধারিত জায়গা বা ক্যাম্পে নেওয়ার জন্য সরকারের সিদ্ধান্তে এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

রত্নপালং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল কবির চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সারাদিন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। এরই মধ্যে আশ্রয়স্থল ও সেট নির্মাণ বা তাবু তৈরি না করেই আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদেরকে উচ্ছেদ করায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে তারা।

উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট রাখাইন প্রদেশে ১০টি স্টেট পুলিশ পোস্টে হামলার অভিযোগ তুলে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের উপর নির্বিচারে গুলি করে হত্যা, বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন, নিপিড়ন শুরু করে। সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুরহত্যাযজ্ঞ দেখে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী পুরুষ সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে।

ইউএনএইচসিআর ও আর্ন্তজাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এক জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জাতিগত নির্মম হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে এই পর্যন্ত ১০ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন