parbattanews

‘দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে আদিবাসী ট্যাবলেট খাওয়াতে উদ্যোগ নিচ্ছেন মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান’

বিশেষ প্রতিনিধি, পার্বত্যনিউজ :

সামরিক বাহিনী সম্পর্কে পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসীদের অবিশ্বাস ও শঙ্কা দুর করতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের আলোচনার উদ্যোগের খবরে পাহাড়ী জনপদে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ীরা তার এ বক্তব্যে উল্লসিত হলেও বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে তার এ বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। বাঙ্গালী নেতৃবৃন্দ তার এ উদ্যোগকে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক সেনাবাহিনী ও বাঙ্গালী বিরোধী ‘কমিশন ষড়যন্ত্র’ বলেও দাবী করেছে।

তাদের মতে, উদ্যোগটি ভাল হলেও মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ইতোমধ্যে তার বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন তিনি উগ্র বাঙালী বিদ্বেষী ও পাহাড়ে সন্ত্রাসী পাহাড়ীদের পৃষ্ঠপোষক। তিনি তার নিরোপেক্ষতা হারিয়েছেন। বাঙালী নেতৃবৃন্দ বলেন, আমাদের সংবিধানে আদিবাসী শব্দের অস্তিত্ব না থাকলেও ‘ আদিবাসী’ তত্ত্বের পক্ষে অবস্থান নিয়ে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের মতো সাংবিধানিক পদে বসে তিনি সংবিধান ও শপথ ভঙ্গ করে চলেছেন অনবরত। কাজেই তার এ উদ্যোগকে বাঙালীরা সন্দেহের চোখে দেখছেন। তাদের মতে, দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনীকে আদিবাসী ট্যাবলেট খাওয়াতে বিদেশী সংস্থার হয়ে মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান এ উদ্যোগ নিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সেমিনার শেষে সামরিক বাহিনী সম্পর্কে পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসীদের অবিশ্বাস ও শঙ্কা দুর করতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আলোচনার উদ্যোগ নিবে বলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে জানান। একই সময় তিনি পাহাড়েরর সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ ও জেএসএসের মধ্যকার দ্বন্দ্ব-সংঘাত দুর করতেও কমিশন সংলাপের উদ্যোগ নেবে বলে জানান কমিশন প্রধান।

বিভিন্ন সময়ে দক্ষতার সাথে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়া আমাদের সেনাবাহিনী যেখানে বছরের পর বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের সংঘাত-সংঘর্ষ বন্ধ করে পাহাড়ী জনগোষ্ঠির ভাগ্যোন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সেখানে ড. মিজানুর রহমান সেনাবাহিনীকে পাহাড়ীদের বন্ধু নয় প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্ঠা করেছেন তার বক্তব্যের মাধ্যেমে। তিনি সেনাবাহিনীর সাথে পাহাড়ীদের দুরত্ব কমানোর উদ্যোগ নেয়ার কথা বলে প্রকারান্তরে পাহাড়ীদের সাথে সেনাবাহিনীর দুরত্ব তৈরীর চেষ্ঠা করেছেন বলেও মনে করেন পাহাড়ের রাজনীতি সচেতন মহল।
 
ড. মিজানুর রহমান গুটি কয়েক মানুষের মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করছে দাবী করে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক এ্যাড. আফছার আলী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ১০ লাখ বাঙ্গালীর মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী পাহাড়ী নেতাদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে মানবাধিকার কমিশন। সেনাবহিনীর সাথে সাধারন পাহাড়ীদের বিরোধ নেই দাবী করে এ নেতা বলেন, সেনাবাহিনী থাকার কারনে পাহাড়ী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করতে পারেনা। এ কারনেই সেনাবাহিনীর সাথে দুরত্ব বা বিরোধের কথা বলা হয়েছে। সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহারে কতিপয় বিচ্ছিন্নতাবাদী পাহাড়ীদের দাবীকে প্রতিষ্ঠিত করতেই তিনি এরকম এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছেন বলে মনে করেন এ্যাড. আফছার আলী । তিনি বলেন, ড. মিজানুর রহমান, সুলতানা কামাল ও মেজবাহ কামাল গংরা রাষ্ট্রের ভিতরে আরেকটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তৎপরতা চালাচ্ছে। যা তাদের নতুন কোন এজেন্ডা নয়।

ইউপিডিএফ ও জেএসএসের মধ্যকার দ্বন্ধ-সংঘাত দুর করতেও সংলাপের উদ্যোগ নেবে কমিশন এমন বক্তব্যকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের হত্যাসহ উচ্ছেদের নতুন কৌশল বলেও মনে করেন এ নেতা। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফ ও জেএসএসের মধ্যকার ভাতৃঘাতি সংঘাত দুর করে তাদেরকে একীভুত করার মাধ্যমে বাঙ্গালীদের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন ড. মিজানুর রহমান। শান্তিচুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফ ও জেএসএসের অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানী বন্ধ করার উদ্যোগ না নিয়ে তিনি তাদেরকে একীভুত করার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী পাহাড়ীদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে উস্কে দিয়েছেন বলেও মনে করেন তিনি।

যার যে কাজ সে কাজ নিয়েই থাকা ভালো। মানবাধিকার কমিশন গায়ে পড়ে দুতিয়ালী করতে চাইছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা কমিশনের এখতিয়ারের মধ্যে পড়েনা। কমিশনের কাজ মানবাধিকার রক্ষা হলেও পাহাড়ে মানবাধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালীদের মানবাধিকার রক্ষায় কোন কথা না বলে সামরিক বাহিনী ও পাহাড়ীদের দুরত্ব এবং পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ ও জেএসএসের মধ্যকার দ্বন্ধ-সংঘাত দুর করার উদ্যোগ নিয়ে বাঙ্গালী বিরুদ্ধে গিয়ে সন্ত্রাসীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সাম্প্রতিক বক্তব্যে কমিশন বিতর্কিত হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে আদিবাসী ট্যাবলেট খাওয়াতে উদ্যোগ নিচ্ছেন মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান।

খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র কমিশন চেয়ারম্যান মো: মিজানুর রহমান‘র প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ীরা চাকুরীর ক্ষেত্রে ৫ ভাগ কোটা পাচ্ছে। অথচ পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত বাঙ্গালীরা কোটাসহ নানা ধরনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি এসব বিষয়ে কোন কথা না বলে দুতিয়ালীর উদ্যোগ নিয়ে কোন মানবাধিকার রক্ষায় মাঠে নেমেছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ পার্বত্যাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে সামরিক বাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে আসছে। পাহাড়ীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সামরিক বাহিনীর বদৌলতে হলেও আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক সেনাবহিনীকে পাহাড়ীদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাড় করানোর চেষ্ঠা করেছে কমিশন এমন অভিযোগ করেছেন পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন।

হঠাৎ করে পাহাড়ীদের আদিবাসী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যানের তৎপরতায় শঙ্কিত হয়ে ওঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী বাঙ্গালীরা। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক বক্তব্যে একপেশে নীতি ফুটে উঠেছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালী নেতৃবৃন্দ। তারা মনে করে পাহাড়ীদের আদিবাসী হিসেবে উল্লেখ করে তার এ বক্তব্য শুধু বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে নয় সরকারের বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক। সরকার যেখানে বলছে বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নেই সেখানে তার এ বক্তব্যে দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

Exit mobile version