parbattanews

দেশের প্রথম কেবল কার উদ্বোধন হচ্ছে শনিবার

xCable-Car20131114190108.jpg.pagespeed.ic.217dqIVmsv

রেজাউল করিম:
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কোদালা বন বিটের সবুজ বনাঞ্চল এলাকায় দেশের প্রথম দুই কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যাবল কার ও অ্যাভিয়ারি এন্ড রিক্রিয়েশন পার্কের (পক্ষীশালা ও বিনোদন কেন্দ্র) শনিবার উদ্বোধন হবে।

পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সুবিশাল ব্যতিক্রমী বিনোদন, প্রকৃতি, বন্যপ্রাণী সংরক্ষনমুলক পার্কের উদ্বোধন করবেন। পার্কের উদ্বোধীন দিনে বর্ণাঢ্য এ এক কনসার্টেরও আয়োজন করা হয়েছে। এতে গান গাইবেন দেশের শীর্ষ তারকা সঙ্গীত শিল্পী মমতাজ।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা ও হোসনাবাদ ইউনিয়নের সবুজ পাহাড় বেস্টিত এলাকা ঘিরে দেশের দীর্ঘতম দুই কিলোমিটার ক্যাবল কার স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে এই পার্কে। পার্কটির নামকরণ করা হয়েছে শেখ রাসের অ্যাভিয়ারী এন্ড রিক্রিয়েশন পার্ক। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগ।

শনিবার পরিবেশ ও বনমন্ত্রী কর্তৃক রাঙ্গুনিয়ার অ্যাভিয়ারী এন্ড রিক্রিয়েশন পার্কের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে পার্কের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে রাত দিন কাজ করছে বন বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগসহ নির্মান কাজে নিয়োজিত শত শত শ্রমিক ও ঠিকাদার। ইতিমধ্যে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধান বন সংরক্ষকসহ বন বিভাগের বিভিন্নস্তরের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা পার্ক নির্মান কার্যক্রম একাধিকবার পরিদর্শন করেন।

পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী এনায়েতুর রহিম এই প্রতিবেদককে জানান, বাংলাদেশে প্রথম ও এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় রাঙ্গুনিয়ার এই অ্যাভিয়ারী পার্ক। পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে পার্কটি নির্মিত হয়েছে। দেশে প্রথমবারের মত পার্কের ভিতরে ২ কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যাবলকার স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া পার্ক এলাকায় কৃত্রিম লেক তৈরিসহ, পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল তৈরির আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম শেষ করেছে বন বিভাগ।

শনিবার পরিবেশ ও বনমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনের পর এই অ্যাভিয়ারী পার্কটিই হবে দেশের বৃহত্তম, সর্বাধুনিক, ব্যতিক্রমী ও আন্তর্জাতিক মানের বিনোদন কেন্দ্র। এই পার্কটি দেশি-বিদেশি পর্যটক আকর্ষনে সক্ষম হবে। উদ্বোধনের পর পার্কটি জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। প্রথম এক মাস পার্কে প্রবেশ, ক্যাবল কারে ভ্রমন এবং অন্যান্যে বিনোদন গ্রহণের জন্য কোনো ধরনের টাকা দিতে হবে না। বিনামুল্যে পর্যটকরা এই পার্কে পুরো এক মাস বিনোদন সুবিধা ভোগ করবেন।

পার্কের প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগীয় কর্মকর্তা বিপুল কৃষ্ণ জানান. চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের কোদালা বন বিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৫‘শ একর বনভুমিতে দেশের প্রথম অ্যাভিয়ারি এন্ড রিক্রিয়েশন পার্ক গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। সারা বিশ্বের মধ্যে মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায় রয়েছে এ ধরনের অ্যাভিয়ারি এন্ড রিক্রিয়েশন পার্ক। রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ পরিবেশ ও বন মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রায় ৩০ কোটি ব্যয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক বিপুল কৃষ্ণ আরও জানান, এই অ্যাভিয়ারী পার্ক প্রকল্পের ভৌত অবকাঠামো নির্মানের কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কৃতিম লেকে পানির সংস্থান এবং ক্যাবল কার সচল করার যাবতীয় কার্যক্রমও শেষ। পরিবেশ ও বনমন্ত্রী’র উদ্বোধনের পর পরই এটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে। এখন পার্কের সমাপ্তি পর্যায়ের কাজ দ্রুতগতিতে শেষ করতে শত শত শ্রমিক রাত-দিন কাজ করছে। ঘুম নেই সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তাদের। মাঠে থেকে সরাসরি কাজ তদারকি করছেন উর্ধ্বতন বনকর্মকর্তারা। এ ছাড়া পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি ব্যক্তিগতভাবে পার্কের সৌন্দর্য্য ও কাজের অগ্রগতির খোঁজ নিচ্ছেন সার্বক্ষনিক।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেন, পাখীদের অভয়ারন্য তৈরি, জীব বৈচিত্র ও পরিবেশ সংরক্ষন এবং এ অঞ্চল থেকে অবৈধভাবে বন ও বৃক্ষ উজার প্রতিরোধের পাশাপাশি মানুষের বিনোদনের বিষয়টি বিবেচনা করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে কাজে লাগিয়ে এখানে দেশের একমাত্র অ্যাভিয়ারী পার্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়। বাংলাদেশে এই প্রথম দুই কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যাবল কার স্থাপন করা হচ্ছে এই পার্কে। দীর্ঘ ক্যাবল কার ও পাখিদের ব্যতিক্রমী অভয়ারন্য দেখার জন্য দেশের বাইরে থেকেও পর্যটকরা এই পার্কে আকৃষ্ট হবে। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয়েরও সুযোগ রয়েছে।

চট্টগ্রাম দক্ষিন বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক কৃষ্ণপদ সাহা জানান, দেশে প্রথম প্রতিষ্ঠিত এটি এমন একটি পার্ক যেখানে শুধুমাত্র পাখি ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষনের জন্য একটি অভয়ারন্যভিত্তিক বৃক্ষ আচ্ছাদিত সবুজ পাহাড়ি বনে হাজার হাজার বুনো পাখি উড়ে বেড়াবে। তাদের কলতানে মুখরিত হবে সবুজ বন। আর বুনো পথে ঘুড়ে বেড়াবে বিনোদন প্রেমী মানুষ। আকাশ পথে ক্যাবল কারে চড়ে দেখতে পারবে নিচের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। এটি হবে দেশের ব্যতিক্রমী প্রাকৃতিক, অত্যাধুনিক এবং আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র। কোদালা বনবিটের ২১০ হেক্টর বনভুমিতে পার্ক এলাকার ব্যাপ্তি। পার্কের অভ্যান্তরে অন্যান্য বৃক্ষের পাশাপাশি বট, অশ্বথ, পাকুর, আমলকি, ডুমুর, ইত্যাদি পাখি খাদ্য ও বিভিন্ন ফল ফলাদির বৃক্ষচারা বনায়নে বাগান সৃজন ও পাখিকুলের প্রাকৃতিক খাদ্যের ব্যবস্থার মাধ্যমে পাখিদের অভয়রণ্যর পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে।

 

Exit mobile version