parbattanews

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৭৩ বছর পর চকরিয়া আর্মি ক্যাম্পে নাইজেরিয়ান সৈনিক

DSCN0046
কক্সবাজার প্রতিনিধি :
দি¦তীয় বিশ্বযুদ্ধে কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজাহার অস্থায়ী যুদ্ধে ক্যাম্পে বার্মা ফ্রন্টে যুদ্ধ করেছিলেন মুরদিমি বুরাতাই নামে এক নাইজেরিয়ান সৈনিক। যা বর্তমানে চকরিয়া আর্মি ক্যাম্প।
ওই সময় দায়িত্ব শেষে নিজ দেশে ফিরে গেলেও বাংলাদেশের স্মৃতি ভুলতে পারেননি তিনি। ভুলতে পারেননি সেই যুদ্ধের স্মৃতিগুলো। তিনি বারবার ফিরে আসতে চেয়েছেন সেই যুদ্ধস্থানে।

তাই দীর্ঘ ৭৩ বছর পর সুদূর নাইজেরিয়া থেকে কক্সবাজারের চকরিয়া সেনা ক্যাম্পে এসেছেন ৯০ বছর বয়সী সাবেক নাইজেরিয়ান সৈনিক ইউসুফ মুরদিমি বুরাতাই। আর এই স্মৃতিচারনের স্বপ্ন পূরণ করেন তারই সন্তান নাইজেরিয়ার বর্তমান সেনা প্রধান লেফটেনেন্ট জেনারেল টুকুর ইউসুফ বুরাতাই।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত তারা স্বপরিবারে মুরদিমি বুরাতাইনের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো ঘুরে দেখেন। এদিকে তাদেরকে মর্যাদার সাথে নিরাপত্তার মাধ্যমে সহযোগিতা করেন কক্সবাজারের সেনা সদস্যরা।

তিনি চকরিয়া বিমান বন্ধরে যান, যেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিমান উঠা নামা করত। ফাঁসিয়াখালীস্থ আর্মি ক্যাম্পের পিছনের জঙ্গল যান। আর যেখানে তিনি নতুনভাবে সনাক্ত করেছেন তৎকালীন সৈন্যদের কবর। আর এই জায়গাটিকে ওয়্যার সেমিট্রি হিসেবে নির্বাচিত করা হয় কক্সবাজার আর্মি’র পক্ষ থেকে। এছাড়া তিনি মালুমঘাট পয়েন্টে যান, যেই পয়েন্টে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাহাজের মাধ্যমে বার্মা ফ্রন্টে যুদ্ধ হত। আরো ঘুরে দেখেন, ডুলহাজারাস্থ বন বিভাগের গেষ্ট হাউস। যেখানে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন ইউসুফ মুরদিমি বুরাতাই।

আর্মি মেজর মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান জানান, ১৯৪২-১৯৪৪ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের ৮১ ওয়েস্ট আফ্রিকান ডিভিশনের সদস্য হয়ে এই এলাকায় অবস্থান করে বার্মা ফ্রন্টে যুদ্ধ করেন। দায়িত্ব শেষে দেশে ফিরে গেলেও বাংলাদেশের স্মৃতি ভুলতে পারেননি তিনি। তিনি সন্তানদের এই যুদ্ধস্মৃতির কথা বলতেন। আর দীর্ঘ ৭৩ বছর পর এই স্বপ্ন পূর্ন করেছেন তারই যোগ্য সন্তান টুকুর ইউসুফ বুরাতাই। যিনি বর্তমানে নাইজেরিয়ার সেনা প্রধান।

স্মৃতিচারন কালে আবেদ আতফুল্ল হয়ে উঠেন সাবেক সৈনিক ইউসুফ মুরদিমি বুরাতাই। তাঁর স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলোর দিকে অপলক তাকিয়ে থাকেন। আর খতিয়ে দেখেন সেই স্থনগুলো। যেখানে তিনি বিচরণ করেছিলেন। এসময় তিনি পাশ^বর্তী দেশ ভারতের কুনে থেকে পায়ে হেঁটে এই যুদ্ধ ক্যাম্পে আসার স্মৃতিগুলো বর্ণনা করেন।

ওই এলাকার বাসিন্দা মৃত মোহাম্মদ সিরাজুল হক চৌধুরীর ছেলে মহিউদ্দিন চৌধুরী জানান, তিনি দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধ চলাকালিন ১২ বছরের কিশোর ছিলেন। তিনি মুরদিমি বুরাতাইকে ছিনেন। তার যতটুকু মনে আছে ওই সৈনিক খুব বেশি ফুটবল খেলা পছন্দ করেন। আর শাহসী ছিলেন।

বাবার ইচ্ছাপূর্ণ করতে আসা নাইজেরিয়ার সেনা প্রধান লেফটেনেন্ট জেনারেল টুকুর ইউসুফ বুরাতাই বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। আর বাবার যৌবন কালেন যুদ্ধ করা স্থানগুলো দেখে তিনি আনন্দিত। এসময় তিনি সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের সাথে একসাথে কাজ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

এই সফরের মাধ্যমে নাইজেরিয়া এবং বাংলাদেশ সেনা সদস্যদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সর্ম্পক উন্নয়নের সেতুবন্ধন তৈরী হয়েছে বলে জানান দুই দেশের সেনা কর্মকর্তারা।

Exit mobile version