স্টাফ রিপোর্টার, বান্দরবান:
গত ৭ জুন রোয়াংছড়ি-বেঙছড়ি সড়কে মারমা এনজিওকর্মীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ মুসলেম মিয়া (৩৫) নামে এক কাঠুরিয়াকে তঞ্চগ্যা সম্প্রদায়ের ইন্ধনে মারমা সম্প্রদায়ের শতশত নারী-পুরুষ নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে।
দেবাংকে থানায় আনার পরে আইন শৃংখলা অবনতি ঘটতে পারে তার জন্য সেনাবাহিনী থানার আশেপাশে অবস্থান নেয়। কিন্তু স্থানীয় মারমা ও তঞ্চগ্যা সম্প্রদায়ের লোকজন একজন কাঠুরিয়াকে বেঙছড়ি এলাকা থেকে দীর্ঘ ৬ কিলোমিটার পথ ধরে পিটিয়ে পিটিয়ে রোয়াংছড়িতে আনে। রোয়াংছড়ি খালে পৌঁছলে পুলিশ প্রশাসনের টনক নড়ে। তখন থানার ওসি আবদুস সাত্তার কয়েকজন পুলিশ নিয়ে কাঠুরিয়াকে উদ্ধারের আইওয়াশ চেষ্টা চালায়। পুলিশের দাবী, শতশত নারী-পুরুষের বাঁধার মুখে নাকি পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে পারেনি।
এ ব্যাপরে ওসি আবদুস সাত্তার জানান, ঘটনা শোনার পর পর তাকে উদ্ধারে রোয়াংছড়ি নদীর পাড়ে যাই। অনেক চেষ্টা করে মুসলিম উদ্দিনকে মুমর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করি। তাকে উদ্দার করতে গিয়ে ক্ষুদ্ধ নারী-পুরুষের হামলায় কয়েকজন পুলিশ আহত হয়। সেনাবাহিনীর ভুমিকা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, সেনাবাহিনী নদীর পাড়ে সিড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। তারা আমাদের কোন সহায়তা করেনি।
মুসলেম মিয়াকে নির্মমভাবে হত্যা করার একটি ভিডিও গত রবিবার সকালে পার্বত্যনিউজের হাতে আসে। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর সোমবার পার্বত্যনিউজে ভিডিওটি প্রকাশিত হলে সামাজিক গণমাধ্যমে আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে। তিন পার্বত্য জেলার বাঙালীরা এই ভিডিও দেখে পুলিশের দূর্বল ভূমিকার সমালোচনা করতে থাকে। কারণ ভিডিওটিতে দেখা গেছে, পুলিশ মুসলেম মিয়াকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে গেলে পাহাড়ীরা তাদের গলাধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। এবং পুলিশও সরে আসে। একটি জীবন বাঁচাতে এসময় লাঠিচার্জ কিম্বা ফাঁকা গুলিবর্ষণের সাহায্য নিলে মুসলেম মিয়াকে বাঁচানো যেত।
এদিকে ভিডিওটিতে যে নির্মমভাবে মুসলেম মিয়াকে পিটিয়ে হত্যা করতে দেখা গেছে তা দেখে মানুষ শিউরে উঠছে। হত্যার আগে তাকে নগ্ন করে তার দুই হাত বেঁধে ফেলা হয়। তারপর তাড়িয়ে তাড়িয়ে দীর্ঘপথে পিটিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। এ সময় উপজাতি মহিলাদের সবচেয়ে বেশী আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা গেছে। সাধারণত মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর বৌদ্ধদের হামলার যে চিত্র এতদিন ইউটিউবে দেখা গেছে এই ভিডিটিও তার অনুরূপ নৃসংশ বলে সামাজিক গণমাধ্যমে মন্তব্য করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, দেবাং আগে থেকেই ধর্ষণ, ডাকাতির মত ঘটনার ঘটিয়ে আসছিল। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা না থাকায় তাকে আটক করা হয়নি। তিনি জানান, রোয়াংছড়ি থানায় এব্যাপরে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বান্দরবান শহরের সবচেয়ে কাছের উপজেলা রোয়াংছড়ি। সড়ক পথে মাত্র ২০ কিলোমিটার দুরে রোয়াংছড়ি উপজেলা। শন্তুু লারমা বাহিনী (শান্তি বাহিনী) থাকা সময়ে বান্দরবান জেলাকে নিয়ন্ত্রন করত রোয়াংছড়ি থেকে। এলাকা ছিল সন্ত্রাসীদের অভারণ্য। যার কারণে রোয়াংছড়িতে বাঙালীদের বসবাস গড়ে উঠেনি। রোয়াংছড়িতে কিছু ভাসমান ব্যবসায়ী আর দিন মজুররা অস্থায়ী ভাবে বসবাস করে। ফলে এমন একটা উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় গিয়ে কোনো বাঙালীর পক্ষে উপজাতি মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যার অভিযোগ মানতে রাজি নয় বাঙালী সম্প্রদায়।