খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের কেন্ডিলিবারের ছাদ ধস

নকশায় ক্রটি ও প্রকৌশলীর দায়িত্বে অবহেলার কারণে প্রাণ গেলো শ্রমিকের

fec-image

নকশায় ক্রটি ও নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে অবহেলার কারণে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের কেন্ডিলিবারের ছাদ ধসে দুই শ্রমিক নিহত ও পাঁচ শ্রমিক আহত হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে তদন্তে এমনি তথ্য পেয়েছেন।

চলতি মাসের ৮ অক্টোবর বিকাল পৌনে ৪টার দিকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নতুন প্রশাসনিক ভবনের কেন্ডিলিবারের ছাদ ধসে দুই নির্মাণ শ্রমিক নিহত ও অপর ৫ জন আহত হন। কিন্তু সে সময় ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে পাওয়া যায়নি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের কোন কর্মকর্তাকে। এ শ্রমিক হতাহতের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত সচিব মো. আমিনুল ইসলামকে প্রধান করে চার সদস্যের পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেন। গঠিত কমিটির অপর সদস্যরা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একজন উপ-সচিব, আশীষ কুমার সাহা, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশল।

অপর দিকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু জেলা পরিষদের সদস্য কল্যাল মিত্র বড়ুয়াকে প্রধান করে তিন সদস্যের পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের গঠিক তদন্ত কমিটির এখনো অগ্রগতি জানা না গেলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল পরিষদ করে গেছেন।

নাম প্রকাশ না শর্তে তদন্ত সংশ্লিষ্ট জনৈক কর্মকর্তা খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের কেন্ডিলিবারের ছাদ ধসে দুই শ্রমিক নিহত ও ৫ শ্রমিক আহত হওয়ার জন্য নকশা ক্রুটি ও জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে অবহেলা দায়ী করেছেন। পাশাপাশি ছাদ ঢালাইয়ের সময় ঘটনাস্থলে কোন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন না। ঢালাইয়ে লোহার খুটির পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে ঠেস দেওয়া ও ক্রটিপূর্ণ সেন্টারিং সিস্টেমকে দায়ী করেছেন।

একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ২০১৮ সালের দিকে কয়েক কোটি টাকার পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ শুরু হয়। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে জনৈক উপজাতীয় ঠিকাদারের লাইন্সের বিপরীতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের তিন প্রভাবশালী নেতা নানা কৌশলে কাজ ভাগিয়ে নেন। কাজের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়।

দুর্ঘটনার পর জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী তৃপ্তি শংকর চাকমার ফোন ছিল বন্ধ। উদ্বার অভিযানে নেতৃত্ব নেওয়া সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের মতামতও ছিল, ছাদ ঢালাইয়ের সময় ঘটনাস্থলে কোন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন না। ঢালাইয়ে লোহার খুটির পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে ঠেস দেওয়া হয়েছিল। সেন্টারিং সিস্টেম ছিল ক্রটিপূর্ণ।

খাগড়াছড়ি জেলাবাসী আশা করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের কেন্ডিলিবারের ছাদ ঢালাইয়ে হতাহতের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে এবং দায়ীদের উপযুক্ত বিচার হবে। খাগড়াছড়িতে স্কুলের গেইট চাপায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের মতো যাতে ধামাচাপা পড়ে না যায় ও দোষীদের যেন বিচারের আওতায় আনা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: খাগড়াছড়ি, ছাদ ধস, জেলা পরিষদ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন