নতুন পলাশীর প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে

গাজী সালাউদ্দীন

সারাদেশ যখন সিটি কর্পোরেশনের ফলাফল আর কেয়ার টেকার সরকার এর হিসাব মিলাতে ব্যস্ত ঠিক সে সময়ে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম তুলে দিচ্ছেন কিছু রাষ্ট্রদ্রোহী সন্ত্রাসীদের হাতে। স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, মহান সংবিধানের গালে চপেটাঘাত করে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব বিলুপ্ত করে পার্বত্য ভূমি তুলে দেওয়া হচ্ছে গুটিকয়েক দেশদ্রোহী উপজাতি সন্ত্রাসীদের হাতে। এসব যেন দেখার কেউ নেই !
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, ১৭১৩ সালে লোভি প্রকৃতির, দুর্বল অদক্ষ মোঘল সম্রাট ফররুখ শিয়ার প্রচুর পরিমানে উত্‍কোচের বিনিময়ে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীকে এক রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে ভারতবর্ষে অভূত পুর্ব বাণিজ্যিক সুবিধা প্রদান করেছিল ।
যার ফলাফল ছিল রক্তাক্ত পলাশীর প্রান্তর, যেখানে বাংলার স্বাধীনতার সুর্য চিরতরে অস্তমিত হয়েছিল । বৃটিশ বেনিয়ারা অবৈধ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল । মীর জাফর, রায়দুর্লভ, ইয়ার লতিফ, জগতশেঠ, উর্মিচাঁদ প্রভৃতি জাতীয় বেঈমানদের সামান্যতম স্বার্থের কারণে প্রায় দু শ বছর ভিনদেশীদের অন্যায় অত্যাচার, জুলুম নির্যাতন সহ্য করে মাসুল দিতে হয়েছিল এদেশীয় জনগণকে ।
সেদিন নবাব সিরাজউদদৌলার অনভিজ্ঞতা ও অদুরদর্শীতার কারণে এবং এ দেশের স্বার্থান্বেষী আমলা, মন্ত্রী ,বণিক ও আমত্যবর্গদের প্রচুর উপঢৌকনের বিনিময়ে সাম্রাজ্যবাদী কোম্পানী তাদের কার্য হাসিল করতে পেরেছিল। তেমনি আজ দীর্ঘ প্রায় আড়াই শ’ বছর পরে সেই একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। বাংলার ইতিহাসের পাতায় আরও একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছে বর্তমান সরকার ।
পার্বত্য চট্টগ্রামের গেরিলা গোষ্ঠি শান্তিবাহিনীর দাবি অনুযায়ী অসম চুক্তি সম্পাদন, একতরফা ভুমি কমিশন গঠন ও তাদের সুবিধামতো এর সংশোন, এবং সর্বশেষ গত ১৬ জুন সংশোধিত ভুমিকমিশন আইন জাতীয় সংসদে উত্থাপন ইত্যাদি দেশবিরোধী কর্মকান্ডের মাধ্যমে কার্যত সেই পলাশীর ঘটনারই নতুন ভার্সন তৈরি করলো এই বাম পরিচালিত অবিবেচক আওয়ামী সরকার। এই আইনের মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চল থেকে বাঙালিদের সুকৌশলে রাষ্ট্রীয় তত্বাবধানে বিতাড়িত করে উপজাতিদের কল্পিত “আদিবাসী জুমল্যান্ড” নামক রাষ্ট্র গঠনের সকল সুবন্দোবস্ত করে দিলো প্রশাসন ।
ইতিহাসের কি আশ্চর্য মিল ! পলাশীর ঘটনাতেও জাতিসত্তার সাথে বেঈমানি করেছিল কতগুলো আমলা, মন্ত্রী, আর রাজন্যবর্গ । এখানেও (পার্বত্য চট্টগ্রামে ) বাঙালি জাতির রক্তের সাথে বেঈমানি করছে বর্তমান বাম সরকারের কতগুলো উপদেষ্টা, মন্ত্রী ও আমলা (যারা আদৌ বাংলাদেশের অখন্ডতায় বিশ্বাসী নয়) । সরকারের অদক্ষতা ,দাদাপ্রীতি ও সর্বোপরি বেঈমানীর কারণে যদি এই দেশটাতে সত্যি সত্যিই আলাদা রাষ্ট্রের জন্ম হয়ে যায় তাহলে হয়তো এখানে আবারো একটি পশ্চিমা প্রভাবাধীন খ্রীষ্টান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হবে ।

আমরা বাঙালীরা বাংলাদেশের স্বাধিনতা আর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী । তাই যে কোন মূল্যে এই অবৈধ ভুমি কমিশন বাতিল করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। সরকার আমাদের এই দাবির প্রতি গুরুত্ব না দিলে সর্বাত্মক আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা পার্বত্যবাসী বাঙালিরা আমাদের দাবি আদায়ে প্রস্তুত আছি। একই সাথে এখনই দেশবাসীকেও সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আহ্বান জানাচ্ছি । আমরা চাইনা পাঃ চট্টগ্রামে আরও একটি পলাশীর ন্যায় প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হোক । আসুন, ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তে কেনা এই দেশটার স্বাধীনতা রক্ষা করি । পার্বত্য চঃ নিয়ে দেশি বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের বিষদাঁত ভেঙ্গে দেই ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন