নতুন ভবন ও মাঠ দুটিই চায় চাকঢালা সীমান্তের শিক্ষার্থীরা
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে একটি মাদরাসায় পর্যাপ্ত জায়গা থাকার পরও অপরিকল্পিতভাবে খেলার মাঠে নতুন ভবন নির্মাণ করার পরিকল্পনার অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়ে মাদরাসার বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীসহ এলাকার সচেতন নাগরিকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থায় মাঠ রক্ষা করে পরিকল্পিত উন্নয়নের দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম আলিয়া ধারার মাদরাসা এম.এস.দাখিল মাদরাসা। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরের চাকঢালায় মাদরাসাটির অবস্থান।
১৯৫৬ সালে ফোরকানিয়া হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এই মাদরাসার। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে পূর্ণাঙ্গ দাখিল মাদরাসায় রূপান্তরিত হয়। দীর্ঘ ৬ দশকে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে মাদরাসাটি উপজেলাবাসীকে উপহার দিয়েছে অনেক মেধাবী সন্তান।
স্থানীয়রা জানান- প্রায় ২ একর জায়গায় মাদরাসাটির অবস্থান। এর মধ্যে খেলার মাঠ প্রায় ৩৫ শতাংশ। এই মাঠে খেলাধুলা ছাড়াও বিগত প্রায় ৪৫ বছর ধরে দুই ঈদের নামাজ এবং এলাকার সকল সামাজিক অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। এছাড়া রাজনৈতিক সভা, ধর্মীয় সভা, দুর্যোগকালীন ত্রাণ বিতরণসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়।
সচেতন নাগরিকরা জানান- মাদরাসাটির পূর্ব পাশে খতিয়ান ভুক্ত পরিত্যক্ত জায়গায় উত্তর-দক্ষিন করে নতুন ভবন নির্মাণ করার সুযোগ থাকলেও সম্প্রতি মাঠের মাঝখানে একাডেমিক ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এজন্য মাঠে সয়েল্ট টেষ্টের কাজও সম্পন্ন করেছে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মাদরাসা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন বলেন- দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর মাদরাসায় একটি চার তলা একাডেমিক ভবন বরাদ্দ হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে খেলার মাঠের জন্য এক কানি জমি রেখে, বর্তমান মাঠে ভবনটি নির্মাণ করার প্রক্রিয়া চলছে। এটি আমার কোন একক সিদ্ধান্ত নয়, ম্যানেজিং কমিটি রেজুলেশনের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার ও মাদরাসার প্রাক্তন ছাত্র ফরিদুল আলম বলেন- ‘আমরা অবশ্যয় ভবন চাই, পাশাপাশি খেলার মাঠও চায় শিক্ষার্থীরা। চাকঢালা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ও মাদরাসার প্রাক্তন ছাত্র আবু তাহের বলেন- দীর্ঘ প্রতিক্ষার ভবনটি আমরা কোনভাবে হাতছাড়া করতে চাইনা। অন্যদিকে ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠও নিজ স্থানে থাকুক। তাদের মতো অনেকে সম্প্রতি মাঠে উপস্থিত হয়ে মাদরাসাটি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন।
বর্তমানে মাদরাসায় উত্তর দক্ষিণে টিন সেড এবং পূর্ব-পশ্চিমে একটি বিল্ডিং রয়েছে। টিনসেডের ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। টিনের চাল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা ঝুঁকির মধ্যে ক্লাস করতো এই ভবনে। মাদরাসার পূর্ব পাশে খতিয়ান ভুক্ত পরিত্যক্ত জায়গায় উত্তর-দক্ষিন করে নতুন ভবন নির্মাণ করার জন্য সর্বস্তরের মানুষ একমত। এ অবস্থায় খেলার মাঠটি রক্ষা করে মাদরাসার নিজস্ব জায়গায় নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।
এই প্রসঙ্গে বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী বলেন- পার্বত্যমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মাদরাসা ভবনটি নির্মীত হচ্ছে। মাঠ রক্ষা করে যথাযথস্থানে উন্নয়ন হউক তিনিও চান। তারমতে, খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নানা অপরাধ থেকে রক্ষা পায়।
এই প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাদিয়া আফরিন কচি বলেন- ভবন নির্মাণ বা মাঠ রক্ষা প্রসঙ্গে কেউ আমাকে অভিযোগ করেনি বা জানায়নি। তবে বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।