নদীর তীরে তামাক চাষ ও নাব্যতা হ্রাসে মাতামুহুরীর মৎস্যভান্ডারে বিরূপ প্রভাব

0110

মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম ॥

এককালের খরস্রোতা মাতামুহুরী ক্রমশঃ মৎস্য শূন্য হয়ে পড়ছে। নাব্যতা হ্রাস, তীরবর্তী জমিতে বেপরোয়া তামাক চাষের বিরূপ প্রভাব পড়েছে মাতামুহুরী নদীতে। এখন আর আগের মতো মাছ ধরা পড়ে না জেলের জালে। নদীর তীরে তামাক চাষে অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় ইউরিয়া ও কীটনাশক প্রয়োগের কারণেও প্রতিবছর এ নদীর মাছ নির্বংশ হতে চলেছে।

বাংলাদেশ-আরকান সীমান্তের আলীকদম উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব কোণ থেকে নির্গত খরস্রোতা মাতামুহুরীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল পাহাড়ি উপজেলা লামা ও আলীকদমের সমাজ-সভ্যতা। এককালে এই মাতামুহুরী নদীতে ভেসে চলতো বড় আকারের নৌকা ও সাপ্পান। কিন্তু সে চিত্র আর নেই। নদীর উজানে অব্যাহত বৃক্ষ নিধন, অবাধে পাথর আহরণ ও নদীর তীরে তামাক চাষের কারণে মাটি ক্ষয়ে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। এ নদীর ভূমি ঢাল উত্তর-পশ্চিম মুখি। তাই এ জনপদের সভ্যতা সৃষ্টিকারীনি মাতামুহুরী নদী সর্পিল গতিতে ক্রমশ বয়ে মিশে গেছে বঙ্গোপসাগরে।

এ অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকার সাথে এ নদীর রয়েছে গভীর সম্পর্ক। এ নদীর পানি যেমন কৃষকের ফসলে শক্তি যোগায় তেমনি নানা প্রজাতির মাছ ধরে জেলেদের জীবন জীবিকার সহায়ক হতো। এক সময় জেলেরা সকালে মাছ ধরে বিকেলে বাজারে বিক্রি করে পরিবারের অন্ন যোগাতো। এখন সে নদী জেলেশূন্য। সবই যেন এখন স্মৃতি।

মৎস্য কর্মকর্তাদের মতে, মাতামুহুরী নদীর দু’তীরে দীর্ঘ দু’দশকের ক্ষতিকর তামাক চাষের বিরূপ প্রভাব পড়ছে মাছের ওপর। তামাক ক্ষেতে অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় ইউরিয়া সার ও নানা ধরণের কীটনাশক ছিটানো হয়। এসব কীটনাশক পানির সাথে মিশে নদীতে পড়ে। এতে নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন ক্ষমতা লোপ পাচ্ছে এবং ছোট ছোট মাছগুলি মরে যাচ্ছে।

স্থানীয়দের মতে, তামাক চাষের ক্ষতিকর প্রভাব ছাড়াও মাতামুহুরীতে মৎস্য সম্পদের বিলুপ্তি ঘটছে একশ্রেণীর লোভী মৎস্য শিকারী ও সংশ্লিষ্ট অফিসের দায়িত্বহীনতার কারণে। মৎস্য বিভাগের দায়িত্ব অবহেলার কারণে জেলেরা নদীতে বিষ দিয়ে মাছ আহরণ করে। এতে নদীতে মাছ মরে ভেসে উঠে। বিশেষ করে বিষের কারণে চিংড়ি মাছ মারা পড়ে বেশী।

এছাড়াও নদীর যেখানে একটু গভীরতা আছে সেখানেই জেলেরা জঙ্গল কেটে ঘের তৈরি করে। কিছুদিন পর ঘেরের চারপাশে বিষ দিয়ে এক শ্রেণীর পাহাড়ি গাছের ফলের রস ছিটিয়ে মাছ আহরণ করা হয়। প্রকাশ্যে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়েও এ নদীতে মাছ শিকার করা হয়। তা দেখেও যেন না দেখার ভান করে মৎস্য বিভাগ।

যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তারা জানান, সুনির্দ্ধিষ্ট অভিযোগ পেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন