কক্সবাজার প্রতিনিধি:
বাঁশ খুবই প্রয়োজনীয় উদ্ভিদ। বলা হয়ে থাকে, দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত বাঁশের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পর্যটন জেলা কক্সবাজারেও রযেছে পাটের প্রচুর চাহিদা। এ জেলার বাঁশের চাহিদা পুরণ হয় পার্শ্ববর্তী বান্দরবান জেলা থেকে। বান্দরবান ও চট্টগ্রাম জেলা থেকে নদী পথেই এ বাঁশ আসে।
পাহাড়ে উৎপাদিত বাঁশ পানিতে ভেসে থাকার উপযোগী হওয়ায় এই বাঁশের সিংহভাগ ব্যবসা চলে নদী পথে। নদীমাত্রিক দেশে নদীতেই বসে বাঁশের হাট। আর সেখানেই হয় বেঁচা-কেনা। নদী পথে আসা বাঁশ দিয়েই মিঠছে জেলায় বাঁশের চাহিদা।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বান্দরবান জেলার পাহাড়ী এলাকা আলীকদম ও লামা থেকে মাতামুহুরী নদী হয়ে বাঁশ আসে চকরিয়া ও পেকুয়ার বারবাকিয়া, মগনামা রাজাখালী ও কুতুবদিয়ামাসহ বিভিন্ন এলাকায়। এছাড়া বাঁশ আসে চট্টগ্রামের দোহাজারী, সাংঙ্গু ও কাপ্তাই নদী হয়ে।
নদীপথে আসা বাঁশের মধ্যে রয়েছে, পাইয়া বাঁশ, মিতা বাঁশ, ডলু বাঁশ, বাইজ্জা বাঁশসহ নানা প্রজাতির বাঁশ। এসব বাঁশ নদী সংলগ্ন বাজারে উঠে। আর সেখান থেকে যায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। পাহাড় থেকে আহরিত বাঁশ পাইকারী দামে ব্যবসায়ীরা ক্রয়ের পর নদী পথে গিয়ে খুচরা বিক্রেতার কাছে ৫ থেকে ৫০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হয়। বহন খরচ ছাড়া বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদা, বাঁশের চালা দেওয়াসহ নানা খাতে খরচ হয়। এসব বাঁশ আনতে কখনও ২ দিনেরও বেশি সময় লাগে নদীতে। যারা বাঁশ আনে তারা সেখানেই থাকে আর সেখানেই খায়। বড় ব্যবসায়ী ছাড়াও কিছু পাইকারী ক্রেতা রয়েছে যারা চকরিয়াসহ বিভিন্ন বিক্রয় কেন্দ্র থেকে বাঁশ ক্রয় করেন।
চকরিয়া বাঁশ ব্যবসা সমিতির সভাপতি আহম্মদ জানান, জেলার বাঁশের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে চকরিয়া ও পেকুয়ার বাঁশ। বাঁশ আমদানি-রপ্তানিতে সবচেয়ে সুবিধাজনক মাধ্যম হল নদী। কিন্তু বর্তমানে চাঁদাবাজদের প্রবণতা বেড়েছে। বাঁশ আনতে বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদা ছাড়াও দিতে হচ্ছে বাঁশের চালা যা খুবই কষ্টকর। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। যাতে করে বাঁশ ব্যবসায়ীরা সুষ্ঠুভাবে চলে আর জেলাবাসির বাঁশের চাহিদো মিটে।
পেকুয়ার বাঁশ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ওয়াজেদ্দীন বলেন, পেকুয়া ও চকরিয়ার বাঁশ আসে বান্দরবান জেলার লামা ও আলীকদম থেকে। লামা ও আলীকদম বাজারে উঠা বাঁশ উপজাতি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ক্রয় করে মাহামহুরী নদী দিয়ে চকরিয়া হয়ে পেকুয়ায় আসে। লামা ও আলীকদম ছাড়াও চট্টগ্রামের দোহাজারি, কাপ্তাই ও সাঙ্গু নদী হয়ে বাঁশ আসে পেকুয়ায়। এসব বাঁশ পেকুয়ার বারবাকিয়া, রাজাখালী, কুতুবদিয়া, মগনামা ও পেকুয়া বাজারের ব্যবসায়ীরা পাইকারী দামে ক্রয় করে। একেক ব্যবসায়ী ১০ থেকে ৫০ হাজার বাঁশ ক্রয় করে। কিছু ছোট ব্যবসায়ী রয়েছে যারা চকরিয়া বা পার্শ¦বর্তী জায়গা থেকে বাঁশ ক্রয় করে। আরেক বাঁশ ব্যবসায়ী মো: সাবের বলেন, বাঁশ ব্যবসায় আগেরমত সুবিধা নেই। বাঁশ আনার সময় বিভিন্ন জনকে চাঁদা দিতে হয়। চেকপোস্টে দিতে হয় বাঁশের চালা।
এছাড়া বর্ষা মৌসুমে বাঁশ ব্যবসা করে সুবিধা করা যায় না। নদী উত্তাল থাকায় ঝুঁকি নিয়ে বাঁশ আনতে হয়। এর মধ্যে অনেকসময় চালা ছিড়ে ভেসে যায় বাঁশ। এমনও ঘটনা রয়েছে বাঁশের চালার সাথে মানুষও ভেসে গেছে। এছাড়া বাঁশ আনা ও পরিষ্কার করতে খরচ হয় অতিরিক্ত টাকা। এসব ছাড়াও বাঁশ ব্যবসায় রয়েছে প্রতিযোগিতা। সব মিলে বাঁশ ব্যবসায় তেমন একটা সুবিধা করা যাচ্ছেনা।